শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

উল্লাপাড়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো সড়ক : অবশেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তিন গ্রামের মানুষের স্বপ্নপূরণ

প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : বিরোধের জের ধরে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে ৩টি গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ ছিল। যানবাহনে মালামাল পরিবহন এবং চলাচলের জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরতে হতো গ্রামবাসীদের। এ নিয়ে ভোগান্তির আর দুঃখের শেষ ছিল না তাদের। গ্রামগুলোর হাফ কিলোমিটারের চেয়েও কম রাস্তাটি তৈরির জন্য প্রশাসনের এমন কোন দফতর নেই যেখানে আবেদন করেনি তারা। কিন্ত রাস্তা তৈরি করতে গেলেই দুটি গ্রামের পূর্বের বিরোধের জন্য জমির মালিকরা তাতে বাধা দিয়ে আসছিল। সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে গত মঙ্গলবার উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. মারুফ বিন হাবীব এবং উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সরকার পুলিশ নিয়ে দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সেই রাস্তা কয়েক হাজার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি শুরু করেছে। রাস্তা নিয়ে এমন দুর্ভোগ ছিল সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নাদা, চকরিয়ারপুর এবং ভাটবেড়া গ্রামে। জানা যায়, উপজেলার নাদা গ্রামের সাথে পার্শ্ববর্তী সাতবিলা গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। স্বাধীনতার আগে থেকে নাদা, চকরিয়ারপুর এবং ভাটবেড়া গ্রামের মানুষ সাতবিলা গ্রামের মাঠের মধ্যে দিয়ে চলমান রাস্তা ধরে চলাচল করতো। কিন্ত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাদা এবং সাতবিলা গ্রামের মানুষের মধ্যে বিরোধের জের ধরে ওই চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিরোধের কারণে ৩টি গ্রামের মানুষের চলাচলের ওই রাস্তার পাশের জমির মালিকরা সাতবিলা গ্রামের মানুষরা রাস্তার মাঝে ড্রেন কেটে বন্ধ করে দেয়। বন্ধ রাস্তাটি চালু এবং সেখানে দিয়ে স্থায়ী রাস্তা তৈরির জন্য ওই ৩টি গ্রামের মানুষ গণস্বাক্ষর দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও গত কয়েক বছরেও তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর আগে শুরুতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাস্তাটি দিয়ে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও উভয় গ্রামের মানুষের উত্তেজনায় তা থেমে যায়। বিষয়টি উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সরকারের নজরে আসলে তিনি সাতবিলা গ্রামবাসীকে রাস্তাটি থেকে প্রতিবন্ধকতা তুলে চালু করার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও তারা তা মানেনি। অবশেষে তিনি বিষয়টি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. মারুফ বিন হাবীবকে অবগত করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিলে গ্রামগুলোর মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ওই রাস্তাটি চালুর পাশাপাশি সেটি সংস্কারের জনহিতকর উদ্যোগ নেন। গত মঙ্গলবার উল্লাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উল্লাপাড়া থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে সরেজমিনে ওই রাস্তায় গিয়ে প্রথমে রাস্তাটি উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। এ সময় ওই ৩টি গ্রামের মানুষকে তারা সেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আহ্বান জানালে অন্তত ২ হাজার মানুষ টুকরি কোদাল হাতে নিয়ে রাস্তার কাজে নেমে পড়ে। জানতে চাইলে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সরকার বলেন, ওই গ্রামগুলোর মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মানবতার প্রতি মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই কাজটি হাতে নেই। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রামগুলোর মানুষরা নিজেরাই সেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি তৈরি করছে। রাস্তাটি দিয়ে গ্রামগুলোর মানুষ আগের মতো স্বাভাবিক চলাচল করতে পারবে ভেবে ভালো লাগছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন