বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

একের পর এক শিশু ধর্ষণ-হত্যা: ক্ষোভে উত্তাল সোশ্যালয় মিডিয়া

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৯, ৩:০৩ পিএম

সারাদেশে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা যেন এখন নিত্যদিনের নিরবচ্ছিন্ন চিত্র। যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরাও। একের পর এক ঘটেই চলেছে এমন নৃশংস ঘটনা। দিনকে দিন এই চিত্র যেন প্রবল হয়ে উঠছে। সর্বশেষ রাজধানীর ওয়ারীর একটি বাসায় শিশু সামিয়া আক্তার সায়মা (৭) ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার শিকার হয়।

নৃশংস এসব ঘটনা নিয়ে ক্ষোভে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। দিনদিন ধর্ষণ-হত্যা বেড়ে যাওয়া এবং এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নানাজন করছেন নানা মন্তব্য। সর্বমহলেই চলছে সমালোচনার ঝড়।

সর্বশেষ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় সায়মা নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নির্মাণাধীন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষ থেকে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়না তদন্তে বাহ্যিকভাবে শিশুটির গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। সে সায়মাকে ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে আট তলার লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে নবনির্মিত নবম তলার ফ্ল্যাটে তাকে ধর্ষণ করে সে। এরপর নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সায়মা। মৃত ভেবে সায়মার গলায় রশি দিয়ে টেনে রান্নাঘরের সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায় হারুন।

দেশে ধর্ষণ-হত্যা বেড়ে যাওয়ায় আক্ষেপের সাথে সুজন তালুকদার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘কবি সুফিয়া কামালের কবিতা পড়েছিলাম সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে। আজকে নতুন করে বলতে ইচ্ছে করে লজ্জিত আমি জন্মেছি এমন দেশে দিনে দিনে শিশু ধর্ষণ হয় আর ধর্ষক গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে।’’

‘‘৭ বছরের শিশুর মুখে রক্ত, ঠোঁটে কামড়ের দাগ, ক্ষতবিক্ষত যৌনাঙ্গ, পড়ে আছে নিথর দেহ, এ কেমন বাংলাদেশ?’’ মন্তব্য খলিল ফখরুলের।

ক্ষোভের সাথে সাজ্জাদ সোহেল লিখেছেন, ‘‘দেশ লজ্জিত না বরং জাতি হিসাবে আমারা লজ্জিত কেননা ৭ বছরের একটা সন্তান কে আমারা নিরাপদ রাখতে পারি নাই।’’

‘‘আর কতো ধর্ষণ হলে এদেশে ভারতীয় উলঙ্গ চ্যানেল গুলো বন্ধ হবে। এর আগেও অনেক শিশু ধর্ষণ হয়েছিল কোনটার বিচার হয়েছে জানতে চাই। ধর্ষণ কে উৎসাহিত করেছে বর্তমান সরকার। আগে ধর্ষণকারীদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড বর্তমানে জেল জরিমানা বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’’ লিখেছেন মোহাম্মাদ ইদ্রিস আলম।

অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষকদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পারভেজ সাজ্জাদ লিখেছেন, ‘‘এখন পুলিশের একটাই কাজ, ওকে নিয়ে আলামত উদ্ধারের কথা বলে ছাদে নিয়ে, ছাদে থেকে ফেলে দেওয়া উচিত।’’

‘‘জনসম্মুখে ফাসি দিয়ে, লাশ একসপ্তাহ রাস্তার মথায় ঝুলিয়ে রাখা হোক’’ এমন দাবি জানিয়েছেন রুবাইয়াত তালুকদার।

নাসির খান লিখেছেন, ‘‘বিচারক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতিতে জুম্মার নামাজের পর খোলা জায়গায় গুলি করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যেতে পারে।’’

ফেসবুকে মনি চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি , ওর এমন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন যা দেখে অন্যরা এ কাজ করা থেকে বিরত থাকে যতো দ্রুত সম্ভব বিচারের আওতায় আনা, প্রয়োজনে নতুন আইন প্রনয়ন করে হলেও ওদের মতো নরপিশাচদের দন্ড কার্যকর করা,এটা নিয়ে কালবিলম্ব করা যাবেনা।’’

‘‘এই মুহুর্তে মাননীয় হাইকোর্টের উচিৎ হবে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড এবং এটা ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে করতে হবে। ধর্ষণের পর মেরে ফেলা বা মেরে ফেলার জন্য ক্ষতি করা বা ধর্ষিতার অঙ্গ প্রত্যঙ্গে আঘাত করলে সেই ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিৎ’’ মন্তব্য সুজর কুমার রায়ের।

মাহফুজ লিখেছেন, ‘‘খুন ও ধর্ষণ এখন নিত্যমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। প্রতিবাদ করতে করতে মানুষ ভোতা হয়ে যাচ্ছে। সরকার এসব বন্ধ করতে মোটেই এগিয়ে আসছে না। জনগণও উপায়হীন হয়ে এখন ক্রসফায়ারে অপরাধীদের মৃত্যু কামনা করে। রাষ্ট্রের আদৌই কি এসব বন্ধ করার কোন উপায়/ইচ্ছা নেই? আর কত ধর্ষণ হলে আর কত জন মানুষ খুন হলে তরে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিবে? নাকি জনগণকেই আইন হাতে তুলে নিতে হবে?’’

‘‘ধর্ষনের ঘটনায় বিচার শুনানীর প্রয়োজন নাই। অভিযুক্তের সাথে ধর্ষিতার ডিএনএ মিলে গেলেই বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের যেকোন মাধ্যমে ধর্ষক/ধর্ষকদের চিহ্নিত করা গেলেই ক্রসফায়ার দেয়া হোক’’ দাবি জানিয়েছেন আতাউর রহিম আল কাওছার।

উল্লেখ্য, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপে বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরা বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত ৩৯৯টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি শিশুর মত্যৃ হয়েছে। এরআগে ২০১৮ সালে মোট ধর্ষণের শিকার হয় ৩৫৬টি শিশু। এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২২টির।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন