শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

ভারত : শত্রু পূর্বে, পশ্চিমেও

সাবা নাকভি : | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

অতীতে পাকিস্তানের সাথে আমরা যে সব যুদ্ধ করেছি সেগুলো ভুলে যান। উপমহাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সফরে আমরা এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচের কিছুটা দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। এটা যখন দেখছিলাম, তখন আমি চিন্তা করছিলাম উপমহাদেশে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটাকে আমরা কিভাবে একটা বাজে জায়গায় নিয়ে গেছি। অতীতে পাকিস্তানের সাথে আমরা যে সব যুদ্ধ করেছি, যার একটি ছিলো ১৯৭১ সালের যুদ্ধ, সেগুলোর কথা বাদ দিন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সফরে আমরা এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

বর্তমানে এই দুই দেশের সাথেই ভারত দুটো অবস্থান নিয়েছে, যাদের সাথে মূলত আমাদের ভাষাগত মিল রয়েছে। প্রথমত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী অবস্থান এবং সার্বক্ষণিক শত্রুতা। এর একটা মূল্য আমাদেরকে দিতে হয়েছে পুলওয়ামা-পরবর্তী সময়টাতে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোট হামলার পর থেকে ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে।

কিন্তু আরও বড় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি সরকার সারা ভারতে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে। তথাকথিত বাংলাদেশী ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ জন্য বিজেপি একটা আদর্শিক অবস্থান নিয়েছে। বিজেপি/আরএসেসের বয়ানে সবসময়ই বিষয়টা ছিল। সেটা হলো পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র করছে, আর বাংলাদেশীরা ধীরে ধীরে ভারতে প্রবেশ করছে।

কিন্তু এখন যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি, এ অবস্থায় এই নীতি নিয়ে কিছু করার সুযোগ এসেছে তাদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সবসময় সারা ভারতে এনআরসি ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলছেন। তাই সরকার শপথ নেয়ার এবং মন্ত্রণালয় বরাদ্দের মাত্র চার দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটা আদেশ জারি করে, যেখানে যে কোন রাজ্য সরকার, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের দেশের যে কোন এলাকায় ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

পার্লামেন্টে কোন ধরনের বিতর্ক বা আলোচনা ছাড়াই এটা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যদি এমনটা চলতে থাকে, তাহলে ভোটাধিকারও হয়তো কেড়ে নেয়া হতে পারে। অবশ্যই আইনি চ্যালেঞ্জ থাকবে, কিন্তু এনআরসি স¤প্রসারণের ব্যাপারে সেটাই সরকারের উদ্দেশ্য বলে এখন অন্তত মনে হচ্ছে।

আমি বলবো যে, এই ধরনের পদক্ষেপ খুবই অনাকাক্সিক্ষত কারণ আসামের এনআরসির একটা বিশেষ স্থানীয় ইতিহাস রয়েছে এবং এমনকি সেখানেও একটা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। আসামে ৩১ জুলাইয়ের সময়সীমা যতই এগিয়ে আসছে, ততই এই প্রশ্নটা সামনে আসছে যে, ‘অ-নাগরিক’ ঘোষিতদের পরিণতি কি হবে। তারা কি বাকি জীবন বন্দিশিবিরে কাটাবে? হাজার খানিক এরই মধ্যে সেখানে রয়েছে, এবং আসামে হয়তো আরও অনেক বড় বড় বন্দিশিবির তৈরি করতে হবে, যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়া এই ‘অনুপ্রবেশকারীদেরকে’ আটকে রাখা হবে। বাংলাদেশ যেহেতু তাদেরকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে (এবং অস্বীকার করেছে যে তারা বাংলাদেশী), তাই আমরা এমন একটা জাতি হতে চলেছি, যেখানে বহু মিলিয়ন রাষ্ট্রহীন ও গৃহহীন মানুষ তৈরি হবে”।

কোন রকম যুদ্ধ ছাড়াই, মানব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বন্দিশিবির হয়ে উঠতে যাচ্ছে এটা। কিন্তু গান্ধী বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবিকতা থেকে দূরে সরে যাওয়ায় আমাদের মাথা কখনই হেট হবে না। আমরা গর্বে অহংকারে আমাদের বুক চাপড়ানি অব্যাহত রাখবো এবং সেই পথে চলতে থাকবো, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশে সবচেয়ে বেশি গৃহহীন মানুষ তৈরি হবে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
sumon ৯ জুলাই, ২০১৯, ১১:২৩ এএম says : 0
Donot give birth more than two. Only the way will solve all problem.
Total Reply(1)
Md. Abdur Razzak ১১ জুলাই, ২০১৯, ৫:৫৬ পিএম says : 4
... it is not solution, have to systematic.
ALOMGIR HOSSEN ১৪ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৩ পিএম says : 0
yes
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন