বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য এ হিসাব সাধারণত হাসপাতালের দেয়া তথ্য মোতাবেক। এর বাইরে আর কতজন মারা গেছে তার হিসাব নেই। এমন অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি বা হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী এবং এতে মৃত্যুবরণকারীর হিসাব সঠিকভাবে পাওয়া দুষ্কর। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন দাবী করেছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে বা আতঙ্কজনক পর্যায়ে যায়নি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, থাইল্যান্ড বা অন্য দেশের মতো আমাদের এখানে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করেনি। এ নিয়ে রাজধানীবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে বলেছেন। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে পরামর্শ দিয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তার ভয়াবহতা কেবল আক্রান্ত ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারেন। এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বাজেট পুরোপুরি পেশই করতে পারেননি। এখন সুস্থ হয়ে এর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা জাতীয় সংসদে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাজেট পেশের দিন সংসদ শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি পুরোপুরি ব্ল্যাঙ্ক ছিলাম। কোনো কিছুই মনে পড়ছিল না। কোনো রকমে গিয়ে সিটে বসেছি। তখন কেবল মনে হচ্ছিল প্রবল এক ভূমিকম্প পৃথিবীতে আঘাত হানছে। আমি যেন সিট থেকে পড়ে যাচ্ছি। হাতে কোনো শক্তি ছিল না। বাজেটের পাতাগুলো উল্টাতে পারছিলাম না। চোখেও কিছু দেখছিলাম না। ডেঙ্গুর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তিনি এভাবেই বর্ণনা করেন। কাজেই যারা ডেঙ্গুতে বা চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন তারা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এর যন্ত্রণা বুঝতে পারে না। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য কয়েকটি উপসর্গের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। প্রচন্ড জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেটে ব্যথা, মাংশপেশী ও হাড়ে ব্যথা, বমি-বমি ভাব, শরীরে হামের মতো লাল দানা দেখা দেয়ার মধ্য দিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। এ রোগের মূল চিকিৎসা হচ্ছে বিশ্রাম এবং জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসেটামল, মাথা ধোয়া, শরীর মুছে দেয়া, প্রচুর পানি ও তরল পানীয় সেবন করাতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এর বিস্তার ঘটে। এটি মশাবাহিত ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এর প্রধান বাহক এডিস প্রজাতির মশা। এ মশা সাধারণত ভোরে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। কখনো কখনো দিনে কামড়ায়। এর মূল উৎপত্তিস্থল বাসা-বাড়ির ফুল ও গাছের টবের পানিসহ বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি। এ মশা পরিস্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। জমে থাকা পানি তিন দিনের বেশি হলেই তাতে এডিস মশা বাসা বাঁধে। এসব স্থান পরিস্কার করা হলে ডেঙ্গু রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, মশা নিয়ন্ত্রণ করা। পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে মশার উৎপত্তিস্থল বিনাশ করা। বলা বাহুল্য, রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরেই মশার উৎপাতে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই মশার উৎপাত শুরু হয়। এতে স্বস্তিতে থাকা যায় না। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটে। এই মশা সমস্যা যেন কোনোভাবেই দুই সিটি করপোরেশন সমাধান করতে পারছে না। মশা নিধনে ওষুধ কেনা বাবদ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এর পেছনে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের ওষুধ এবং সঠিক সময়ে সঠিকভাবে না ছিটানোর কারণে মশা নিধন করা যাচ্ছে না। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, মশার ওষুধের কম্পোজিটর বদলাতে হবে। অর্থাৎ যে মানের মশার ওষুধ প্রয়োগ করে মশা নিধন করা দরকার সে মানের ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তিনি আগামীতে মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ প্রয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন।

ডেঙ্গু রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তার সাথে পরিবারের সদস্যদেরও ভোগান্তির শেষ থাকে না। হাসপাতালে ছুটাছুটি এবং অর্থের ব্যয় ছাড়াও এক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা অর্থমন্ত্রী যে অভিজ্ঞতার কথা বিশদভাবে বলেছেন তা থেকে এর ভয়াবহতা বোঝা যায়। তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধার মাধ্যমে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ ধরনের চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর। এক্ষেত্রে মশা এবং ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনই কেবল পারে সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করতে। এ কাজটি করতে হবে উভয় সিটি করপোরেশনকে। কেবল বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করলেই হবে না তাদেরকে মশা নিধনের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মূল কাজটি তাদেরকেই করতে হবে। এক্ষেত্রে নগরবাসীর সহায়তা কামনা করতে পারে। সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান পরিচালনা এবং তাদের সচেতন করতে হবে। নগরবাসীকেও নিজের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ি-ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন