আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আপন হতেই অস্তিত্বশীল ও বিদ্যমান। স্বীয় অস্তিত্বে তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তায়ালা ওয়াজিবুল অজুদ অর্থাৎ তার অস্তিত্ব ও বিদ্যমানতা অপরিহার্য।
তার অস্তিত্বহীনতা বা অনুপস্থিতি সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। মোটকথা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কোনো কিছু ওয়াজিবুল অজুদ বা অনাদি অনন্ত নয়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় মুখাপেক্ষীহীনতার বিষয়ে নিজেই সাক্ষ্য প্রদান করে ইরশাদ করেছেন, (ক) হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহপাকের নিকট অভাবী, আর আল্লাহপাক অভাবশূন্য ও প্রশংসিত। (সূরা ফাতির : আয়াত ১৫)। (খ) যে সত্তা নিজ অস্তিত্বে ওয়াজিবুল অজুদ তিনি তার নামসমূহ গুণাবলি ও সকল দিক বিবেচনায় ওয়াজিবুল অজুদ বা অনাদি অনন্ত। আর এটি স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণিত যে, তিনিই একমাত্র চিরন্তন সত্তা। (শরহে ফিকহে আকবর : পৃ. ১৫-১৬)। (গ) এ প্রসঙ্গে ইমাম খরীরী রহ. বলেছেন, ওয়াজিবুল অজুদ এমন সত্তা, যার তুলনা, উপমা নেই। অনন্ত অসীমকাল পর্যন্ত তিনি বর্তমান থাকবেন। তার অনুপস্থিতি বা নশ্বরতা পরিপূর্ণভাবেই অসম্ভব। তিনি নিজেই তার জাত ও সিফাতের অস্তিত্বদানকারী। (নিরবাস : পৃ. ১০৭)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দু’ধরনের নাম আছে। (১) জাতি বা সত্তাগত নাম আল্লাহ। এ নামটিই সত্তাগত মৌলিক নাম। (২) সিফাতি বা গুণবাচক নাম। হাদিস শরীফে তার ৯৯টি সিফাতি বা গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই ৯৯টি নাম আল্লাহপাকের সকল সিফাতি কামালের মূল ও ভিত্তি। তবে এর অর্থ কিন্তু ও নয় যে, তার কেবলমাত্র এ ৯৯টি নামই আছে।
এছাড়া আল্লাহপাকের আর কোনো নাম নেই। বরং ওগুলো ছাড়া তার আরো অগণিত নাম আছে, যার কিছু কিছু নাম আল-কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন যুলফাদল, যিল মায়ারিজ, যিত ত্বাওল, মালিক, আকরাম, ক্বাহির, ফাতির প্রভৃতি।
মহান আল্লাহর একাধিক নামের ঘোষণা তিনি নিজেই প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, (ক) আল্লাহপাকের অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, তোমরা তাকে ওই নামসমূহের দ্বারা ডাক। (সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৮০)। (খ) হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহপাকের ৯৯টি গুণবাচক নাম আছে। যে এ নামগুলো গণনা করে রাখবে বা আয়ত্তে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক বেজোড়, তিনি বেজোড় পছন্দ করেন। (সহীহ মুসলিম : খন্ড ২, পৃ. ৩৪২)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সিফাতে কুদরাতের অধিকারী। অর্থাৎ তিনি বন্ধনমুক্ত সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী। কোনো বস্তুই তার ক্ষমতার বাইরে নয়। বরং সকল কিছুর ওপর তিনি ক্ষমতাশালী। তিনি সকল প্রকার অক্ষমতা ও অপারগতার ঊর্ধ্বে। তার নিকট অক্ষমতার কোনো নাম চিহ্নও নেই।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক নিজেই ঘোষণা করেছেন, (ক) হে নবী, আপনি বলুন, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের ঊর্ধ্ব হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি প্রেরণে সক্ষম। (সূরা আনআম : আয়াত ৩৫)। আরো ইরশাদ হয়েছে, হ্যাঁ, তিনি মানুষের সকল জোড়া যথাযথ স্থাপন করে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সৃষ্টি করতে ক্ষমতা রাখেন। (সূরা কিয়ামাহ : আয়াত ৪)। (খ) তিনি তার চিরন্তন ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তিনি সৃষ্টি বস্তুর ক্ষমতার মতো ক্ষমতাধর নন। বরং চিরস্থায়ী অবিনশ্বর ক্ষমতায় ক্ষমতাশালী। তিনি চিরঞ্জীব, মহা নিয়ন্ত্রণকারী বা সকল কিছুর ধারক। (শরহু ফিকহে আকবার : পৃ. ১৬)। (গ) আল্লাহপাকের কুদরত আছে, এর অর্থ হলো, কিছু করা বা না করার ব্যাপারে তিনি স্বাধীন। সকল আহলুস সুন্নাহ এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা স্বীয় কুদরতে কার্য-সম্পাদন করেন। তিনি ইচ্ছা করলে করেন, তিনি ইচ্ছা না করলে করেন না। (মুয়ামুল কালাম : পৃ. ২১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন