বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

চট্টগ্রামে বিপর্যস্ত জনজীবন

বেহাল সড়কে তীব্র যানজট

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

 টানা তিনদিনের বর্ষণে বেহাল চট্টগ্রাম নগরীর সড়কের অবস্থা। উন্নয়নের গর্তে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি তার উপর বর্ষণ ও জোয়ারে নগরীর অধিকাংশ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। তাতে আটকা পড়ছে যানবাহন। ফলে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আশপাশের সবকটি সড়কে টানা তিনদিনের বেশি সময় ধরে তীব্র জটে অচলাবস্থা চলছে। এতে করে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ও পণ্য পরিবহন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। 

মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত আছে। এরসাথে রাতে-দিনে দু’বার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বন্দরনগরীর বিশাল এলাকা। সড়কে যানজট বাসাবাড়িতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যানজটের কারণে গণপরিবহন সঙ্কট চরমে উঠেছে। কর্মজীবী মানুষদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কর্মস্থলে পৌঁছতে স্বাভাবিকের চাইতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। অনেকে হেঁটে, বৃষ্টিতে ভিজে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে পড়ে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
নগরীর প্রধান সড়কের কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। সড়কের ওই অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানিবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। গর্তে আটকা পড়ে ভারী যানবাহন বিকল হচ্ছে। এ কারণে সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট এখনও অব্যাহত আছে। একই অবস্থা বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট কারখানা অংশে। এর প্রভাবে তীব্র যানজট বিমানবন্দর সড়কের ইপিজেড, সল্টগোলা ক্রসিং, কাস্টম হাউস হয়ে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
পোর্ট কানেকটিং রোডে সংস্কার কাজ চলছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার কারণে ওই সড়কেও তীব্র যানজট। একই অবস্থা আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে। বারিক বিল্ডিং থেকে রশিদ বিল্ডিং হয়ে বাংলা বাজার, সদরঘাট এলাকার সড়কগুলোতেও ভারী যানবাহনের তীব্র জট। যানজটে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার টোল রোডমুখী ফ্লাইওভার। টোল রোডের বন্দর পয়েন্ট থেকে শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পয়েন্ট পর্যন্ত আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।
মহানগরীর অন্যান্য সড়কগুলোতেও সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়াসার সংস্কার ও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এর ফলে এসব সড়কেও যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মুরাদপুর, ষোলশহর থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্ত। ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য তিন বছর ধরে বন্ধ বহদ্দারহাট থেকে সিঅ্যান্ডবি হয়ে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কের একাংশ। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে পুরো নগরীতেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এদিকে অতিবর্ষণ ও দমকা হাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বহির্নোঙ্গরে ৭৫টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় ৪শ’ লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। তিনি বলেন, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক থাকলেও খোলা পণ্য উঠানামা বিঘিœত হচ্ছে বৃষ্টির কারণে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে টানা যানজটের কারণে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বিঘিœত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটি ও ইয়ার্ডে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভারী যানবাহন আসা-যাওয়া করে। জটের কারণে বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহন কমে গেছে।
রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার যথাসময়ে বন্দরে আসতে না পারায় পণ্যের জাহাজীকরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, টানা তিনদিনের অচলাবস্থার কারণে পণ্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়াও কমে গেছে। এতে করে কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণের হার নিম্নমুখী হয়েছে। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জের কর্মচাঞ্চল্যও থেমে গেছে। স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে না সেখানে।
শাহ আমানতে নামতে পারেনি ৩ ফ্লাইট
অতিবর্ষণ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কলকাতা থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএস বাংলার ২টি ফ্লাইট চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। ফ্লাইট ২টি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। গতকাল বেলা ২টায় ফ্লাইট দুটি শাহ আমানতে অবতরণের সিডিউল ছিলো বলে জানান বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরোয়ার ই জাহান। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ফ্লাইট শাহ আমানতে নামতে না পেরে কক্সবাজারে অবতরণ করেছে। বেলা ১টার পর থেকে আবহাওয়া খারাপ থাকায় তিনটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম অবতরণ করতে পারেনি। সকালের ফ্লাইটগুলো সমস্যায় পড়েনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন