অর্থ আত্মসাৎ মামলায় নিরীহ ‘জাহালম’কে সালেক বানিয়ে বার বার সামনে এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এটি ছিলো দুদকের তদন্ত টিমেরই ভুল এবং গাফলতি। তবে দুদক টিমকে বিভ্রান্ত করেছে ব্র্যাক ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা। হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ স্বীকারোক্তি দিয়েছে দুদক নিজেই। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কামরুল কাদেরের ডিভিশন বেঞ্চে ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেন। সংস্থার পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান প্রতিবেদন আদালতে দেন। তবে প্রতিবেদনের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য হয় ১৬ জুলাই।
এর আগে বেলা ২টার দিকে দুদকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে হলফনামা আকারে জমা দেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, জাহালমকে আবু সালেক রূপে চিহ্নিত করার জন্য যে ভুলটি হয়েছে তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে। তবে তাদের ভুল পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং অ্যাকাউন্টের ভুয়া ব্যক্তিকে পরিচয় দানকারীরা।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের করা ৩৩ মামলায় বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগ করেন টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালম। ঘটনাটি পত্রিকায় প্রকাশের পর সুপ্রিমকোর্ট বারের একজন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনেন।
চলতিবছর ৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আদালত সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের ৩৩টি মামলা থেকে জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে ওইদিনই মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। ওইদিন রাতেই জাহালম গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। চলতিবছর জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে জাহালমের বিনা দোষে কারাভোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে জাহালমকে আটক করা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চায়া হয়। একই সঙ্গে, নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন