শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জুমার দিনের ছয় সুন্নত

আল্লামা আব্দুল কুদ্দুছ | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ১২ জুলাই, ২০১৯

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, আগে আগে মসজিদে গমন করল, পায়ে হেঁটে মসজিদে গেল, ইমামের কাছাকাছি বসল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, কোনো কথা বলল না, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রতি কদমে এক বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। -মুসনাদে আহমাদ : ৫৮১

হাদীসে জুমার দিনের ছয়টি সুন্নতের আলোচনা করা হয়েছে। সুন্নত ছয়টি হলো :
এক. ভালোভাবে গোসল করা। আমরা বাংলাদেশের অধিবাসীরা প্রতিদিন গোসল করে অভ্যস্ত। প্রতিদিনের গোসল আর জুমার দিনের গোসল এক নয়। জুমার দিন গোসল করার সময় সুন্নত পালনের নিয়ত করতে হবে এবং সওয়াবের আশা রাখতে হবে। হাদীসে ভালোভাবে গোসল করার কথা বলা হয়েছে। শরীর নাপাক হয়ে গেলে যেমনিভাবে খুব ভালোভাবে গোসল করা হয় যেন শরীরের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছে যায়, ঠিক তেমনিভাবে জুমার দিনও ভালোভাবে গোসল করে নেবে।

দুই. আগে আগে সকাল সকাল মসজিদে গমন করা। জুমার দিন সাধারণত অফিস-আদালত, দোকান-পাট বন্ধ থাকে। মানুষ অবসরই থাকে। তাই আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া চাই। অপর এক হাদীসে জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়ার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি গোসল ফরজ হলে যেভাবে গোসল করে জুমার দিন ঠিক সেভাবে ভালো করে গোসল করে অতঃপর সর্বপ্রথম মসজিদে গমন করে, সে একটি উট সদকা করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। এরপর দ্বিতীয়তে যে মসজিদে গমন করবে সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তৃতীয়তে যে গমন করবে সে একটি বকরি আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার সওয়াব লাভ করবে। চতুর্থতে যে গমন করবে সে একটি মুরগি সদকা করার সওয়াব লাভ করবে। এরপর পঞ্চম নম্বরে যে প্রবেশ করবে সে একটি ডিম সদকা করার সওয়াব লাভ করবে। -সহীহ বুখারী : ৮৮১

মসজিদে যে যত বেশি আগে আসবে তত বেশি সওয়াব ও ফযীলতের অধিকারী হবে। আগে আগে মসজিদে এসে আমরা কী আমল করব? যাদের উমরী কাযা বা এমনিতেই কাযা নামাজ রয়েছে তারা কাযা আদায় করব। কাযা আদায় করা ফরজ। তাই যাদের যিম্মায় ফরজ আদায়ের ভার রয়ে গেছে তারা নফলের চেয়ে ফরজকে গুরুত্ব দেবো। আগে ফরজ আদায় করব। যারা উমরী কাযা আদায় করব তারা দৈনিক ছয় ওয়াক্ত হিসেবে আদায় করব। অর্থাৎ ফজরের দুই রাকাত ফরজ, জোহরের চার রাকাত ফরজ, আসরের চার রাকাত ফরজ, মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ, এশার চার রাকাত ফরজ ও বিতরের তিন রাকাত। এভাবে পেছনের কাযা আদায় করে নেব। যাদের কাযা নামায নেই তারা নফল নামায আদায় করব।

তিন. হেঁটে মসজিদে যাবে, কোনো বাহনে আরোহণ করবে না। জুমার নামাযের জন্য কোনো বাহনে আরোহণ না করে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়া সুন্নত। বিশেষ কোনো উযর না থাকলে এ সুন্নত ত্যাগ করবে না।
চার. ইমামের কাছাকাছি বসবে। আগে আগে মসজিদে গেলে ইমামের কাছাকাছি বসার সুযোগ পাওয়া যায়। তো ইমামের কাছাকাছি বসাও সুন্নত।
পাঁচ : মনোযোগসহ খুতবা শুনবে। মনে রাখতে হবে, জুমার খুতবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুক্রবারে জোহরের সময় জুমার নামায পড়ি। জোহর পড়ি চার রাকাত কিন্তু জুমা পড়ি দুই রাকাত। জুমার খুতবা দিতে হয় বলে দুই রাকাত নামায কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তো জুমার খুতবা দুই রাকাত নামাযের মর্যাদা রাখে। তাই জুমার খুতবা প্রদান করাও ওয়াজিব, শ্রবণ করাও ওয়াজিব। আমরা জুমার খুতবা খুব মনোযোগসহ শ্রবণ করব।

ছয় : অনর্থক কোনো কথাবার্তা বা কার্যকলাপে লিপ্ত হবে না। মসজিদে এসে নীরবে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকব। কোনো অনর্থক কথা বলব না। অনর্থক কোনো কাজও করব না। মসজিদে দীনি কথা বলা যাবে। কোরআন তেলাওয়াত করব। যিকির করব। অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা বলব না।

যে ব্যক্তি জুমার দিন এ ছয়টি সুন্নত পালন করবে তার মসজিদে যেতে যতগুলো কদম ফেলতে হয় প্রতিটি কদমে আল্লাহ তাআলা তাকে এক বছর নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। এক বছর একাধারে দিনের বেলা রোযা রাখলে এবং রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করলে যে পরিমাণ সওয়াব হবে আল্লাহ পাক তার প্রতি কদমে সে পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এ সুন্নতগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন। Ñআমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Arif Hawlader ১২ জুলাই, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
সপ্তাহের অন্য কোনো দিনের চেয়ে জুমাবারের গুরুত্ব বেশি। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো।
Total Reply(0)
Ovi Osman Sarwar ১২ জুলাই, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তাআলার কাছে এতোখানি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাজিল করা হয়েছে।
Total Reply(0)
M A Kamal Kamal ১২ জুলাই, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
জুমার দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন (বুখারি, হাদিস নং: ৮৭৭, ৮৭৮)।
Total Reply(0)
Mustafizur Rahman ১২ জুলাই, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকা।
Total Reply(0)
M Obaidullah Chowdhury ১২ জুলাই, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
খুতবা কী ও কেন? খুতবা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো ভাষণ: বক্তৃতা, প্রস্তাবনা, ঘোষণা, সম্বোধন, উপস্থাপনা ইত্যাদি। খুতবা হলো জুমার নামাজের আগে, উভয় ঈদের নামাজের পরে, হজে আরাফার দিনে মসজিদে নামিরাতে, বিয়ের অনুষ্ঠানে ও বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠানে খলিফার প্রতিনিধি, দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা ইমাম ও খতিব কর্তৃক প্রদত্ত প্রাসঙ্গিক বক্তৃতা বা ভাষণ। যিনি খুতবা দেন তাঁকে ‘খতিব’ বলা হয়। সাধারণত যেসব মসজিদে আলাদা খতিব নেই, সেখানে পেশ-ইমাম বা প্রধান ইমাম অথবা ইমাম ও সানি ইমাম (সহকারী ইমাম) খুতবা প্রদান করেন এবং জুমার ও ঈদের নামাজে নেতৃত্ব দেন। জুমার খুতবা নামাজের আগে এবং ঈদের নামাজসহ অন্যান্য নামাজে খুতবা পরে দেওয়া হয়। ঈদ ও জুমার খুতবা ওয়াজিব, অন্যান্য খুতবা সুন্নত। খুতবার মধ্যে যেসব বিষয় থাকা সুন্নত হামদ (আল্লাহর প্রশংসা) দ্বারা শুরু করা, ছানাখানি (গুণগান) করা, শাহাদাতাঈন (তওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য) পাঠ করা, দরুদ শরিফ পড়া, কোরআনে করিমের প্রাসঙ্গিক আয়াত তিলাওয়াত করা, সংশ্লিষ্ট হাদিস পাঠ করা, প্রয়োজনীয় মাসআলা বর্ণনা করা, ওয়াজ-নসিহত বয়ান করা, উপদেশ দেওয়া, সৎকর্মে উদ্বুদ্ধকরণ ও মন্দ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা, মুসলমানদের জন্য দোয়া করা। খতিবের করণীয় সুন্নত অজু অবস্থায় থাকা (পবিত্র থাকা)। জুমার খুতবার প্রারম্ভে (মিম্বারে) বসা। সব খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া। জুমার খুতবা মিম্বারে দাঁড়িয়ে দেওয়া। মুসল্লিদের (শ্রোতা-দর্শকদের) দিকে ফিরে খুতবা দেওয়া। খুতবা আরম্ভের আগে মনে মনে ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া। খুতবা আরবি ভাষায় হওয়া। সশব্দে (শ্রোতা-দর্শক শুনতে পায় এমনভাবে) খুতবা পরিবেশন করা। উভয় খুতবা সংক্ষিপ্ত হওয়া। উভয় খুতবা (প্রতিটি) ‘তিওয়ালে মুফাছ্ছল’ (সুরা হুজুরাত থেকে সুরা বুরুজ পর্যন্ত) সুরার চেয়ে দীর্ঘ না হওয়া। দুই খুতবার মাঝে বসা। ঈদের খুতবায় প্রারম্ভে না বসা। ঈদের প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার; ঈদের দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭ বার এবং শেষে ১৪ বার তাকবির বলা। খুতবায় যা যা থাকা উচিত পূর্বসূত্র (বিগত আলোচনার সারাংশ ও আজকের বিষয়ের সঙ্গে পূর্বাপর সম্পর্ক)। আজকের বিষয়: প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা। গত সপ্তাহের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পর্যালোচনা। আগামী সপ্তাহের করণীয় আমল আলোচনা। (চাঁদের মাসের আমল)। সমকালীন প্রসঙ্গ ও দিকনির্দেশনা। মধ্যপন্থা অবলম্বন। ঐক্যের প্রচেষ্টা ও অনৈক্য দূর করা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন