শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আবাদ বাড়লেও বৃষ্টির অভাবে উৎপাদন ব্যাহতের পরে অতি বৃষ্টিতে পাট কাটা ব্যাহত হচ্ছে

গত অর্থ বছরে পাট পণ্য রপ্তানি হৃাস পেয়েছে ৫%

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৯, ১:২৬ পিএম

চলতি মৌসুমে দেশে পাট আবাদ দু বছর আগের তুলনায় লক্ষাধিক হেক্টর বৃদ্ধি পেলেও বৃষ্টির অভাবে উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয়েছে। এমনকি দিন দশেক আগে পর্যন্ত পাট জাগ দেয়া নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কায় ছিলেন কৃষককুল। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশেই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের নিচে ছিল। ২৯ মে থেকে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শুরু হবার কথা থাকলেও এবার দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশেই বৃষ্টি এসেছে প্রায় ২৫ দিন পরে। শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র প্রভাবে মে মাসের প্রথম তিনদিন দক্ষিণাঞ্চলে ১শ মিলিমিটারের মত বৃষ্টি হলেও পুরো মাসের গড় বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এমনকি সদ্য সমাপ্ত জুন মাসেও দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৩.৭% এবং সারা দেশে ৩৭.৭% কম বৃষ্টিপাতের ফলে সার্বিক কৃষি ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে কৃষিবীদগন জানিয়েছেন। পাশাপাশি সদ্যসমাপ্ত অর্থ বছরে পাট খাতে রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫% কমে যাওয়ায় এ খাতে দুশ্চিন্তা কিছুটা বাড়ছে সংশ্লিষ্ট মহলে। 

এদিকে চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশী এবং সারা দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। জুলাইরে প্রথম ১০ দিনে সারা দেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কিছুটা বেশী বৃষ্টিপাতের ফলে জাগ দেয়া নিয়ে সংকট কিছুটা কাটলেও পাট কর্তন নিয়ে কৃষকরা নতুন সমস্যায় পড়ছেন। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ২৫% পাট কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এতদিন বৃষ্টির অভাবে খাল, নালা ডোবায় পানি না থাকায় কৃষকরা পাট কাটেননি। কিন্তু গত সপ্তাহখানেকের অতি বর্ষনে পাট কাটতে পারছেন না কৃষকগন।
এবার সারা দেশে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর বেশী জমিতে পাট আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই সূত্রে জানা গেছে। ফলে উৎপাদনও গত বছরের ৭৪ লাখ ৪৫ হাজর বেলের তুলনায় বৃদ্ধি পাবার কথা। চলতি মৌসুমে কৃষি মন্ত্রনালয় সারা দেশে ৬ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে ৮০ লাখ ৮ হাজার বেল পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে। সারা দেশের কৃষকগনও এবার যথেষ্ঠ মনপ্রান দিয়ে কাজ করায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮.৬২% এবং গতবছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর বেশী। গত বছর দেশে পাটের প্রকৃত আবাদ হয়ছিল ৬ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর, উৎপাদন ছিল প্রায় ৭ লাখ বেল। দুবছরের ব্যবধানে চলতি মৌসুমে দেশে পাটের আবাদ বেড়েছে লক্ষাধীক হেক্টর।
কিন্তু সময়মত ও প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে এবার পাটের গাছের কাঙ্খিত বৃদ্ধি কিছুটা ব্যহত হয়েছে অনেক এলাকায়। ফলে উৎপাদন লক্ষ্য নিয়ে কিছুটা শংকা রয়েছে। এরই সাথে বৃষ্টির অভাবে পাট জাগ দিয়ে আঁশ সংগ্রহ নিয়েও অনেক এলাকায় জটিলতা ছিল। সময়মত বৃষ্টির অভাবে পাট-এর আঁশ সহ পাট কাঠির গুনগত মান নিয়েও সংশয় রয়েছে।
বরিশাল ও ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ২৭ লাখ ২৭ হাজার বেল। শুধুমাত্র বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ লাখ ১৯ হাজার ৬৮১ হেক্টরে পাটের আবাদ করেছেন কৃষকগন। ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জের দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে এখন সবুজ পাটের সমারহ। পাশাপাশি বিগত দিন পনের যাবত পাট কাটাও চলছে। তবে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলাতে এখনো উল্লেখযোগ্য ভাবে পাটের বাণিজ্যিক আবাদ সম্প্রসারন না ঘটলেও তা ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় পাটের শাক উন্নত ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবেও গ্রহণ করছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। ফলে এ অঞ্চলে পাটের আঁশের চেয়ে শাক বিক্রী করেও লাভবান হচ্ছেন কৃষককুল।
আমাদের পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে উন্নতমানের ও উচ্চ ফলণশীল তোষা পাটের বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এমনকি দক্ষিন উপকূলের লবনাক্ত এলাকায় পাটের আবাদ টেকসই সম্প্রসারনের লক্ষ্যে গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে লবন সহিষ্ণু পাটের জাত উদ্ভাবন করেছেন। ফলে আগামীতে দক্ষিণাঞ্চলে পাটের আবাদ আশাব্যাঞ্জকভাবে বৃদ্ধির আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের মতে, দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিককালে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশের অভ্যন্তরেও পাট এবং পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারিভাবে পাট পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে। পাটের বাজার সৃষ্টি করতে নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট ১৭টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। গতবছর ‘সোনালী আশেঁর সোনার দেশ পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাতীয় পাট দিবস উদযাপন করা হয়।
তবে যেসব ক্ষেত্রে পাটপণ্য ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেসব বিষয় নিয়মিত পর্যবেক্ষন করতে জেলা প্রশাসনকে ইতোপূর্বে নির্দেশ দেয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিককালে তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষনীয় নয়। ২০১৭-এর ২০ ডিসেম্বর থেকে চালের বস্তায় পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাট মন্ত্রনালয়ের মতে, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৭%। তবে সদ্যসমাপ্ত অর্থ বছরে তা আগের বছরের তুলনায় ৫%-এর হৃাস পেয়েছে বলে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে হতাশ হবার কিছু নেই বলে দাবী করে পাট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে, ‘নানা বিশ্ব পরিস্থিতি সহ প্রতিকুলতার কারনে গত অর্থ বছরে পাট খাতে রপ্তানী সামান্য হৃাস পেলেও তা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। দেশে এখন পাট পণ্যের সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশতে উন্নীত হয়েছে বলে মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন