বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কথা রাখেনি সিডিএ

রিং রোড চালু না করেই এক্সপ্রেসওয়ের খোঁড়াখুঁড়ি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কথা রাখেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য সিটি আউটার রিং রোড খুলে দেয়া হয়নি। কথা ছিলো নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড চালুর পরই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুড়ি শুরু করা হবে। এপ্রিলের মধ্যেই আউটার রিং রোডটি চালু করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিলো।

কিন্তু সে ঘোষণা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই গত পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে নগরীর বিমানবন্দর সড়কের কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অংশে ফাইলিংয়ের কাজ করছে সিডিএ। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রধান সড়কের ওই অংশ এখন যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের ওই অংশে সৃষ্টি যানজটে অচল হয়ে পড়েছে পুরো চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা।

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আশপাশের সবকটি সড়কে গতকাল শুক্রবার ষষ্ঠদিনের মতো যানজট ছিলো। সরকারি ছুটির দিনেও ভারী যানবাহনগুলোকে বন্দরে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। এই অবস্থা ছিলো গণপরিবহনগুলোরও। বিশেষ করে বিমানবন্দরমুখী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠা বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল থেকে বন্দরমুখী ভারী যানবাহনের চাপ ছিলো ওই এলাকার প্রতিটি সড়কে। বন্দর লাগোয়া ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে বন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পয়েন্ট পর্যন্ত টোল রোডে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহি ভারী যানবাহনের চাপ ছিলো বলে জানিয়েছেন লরি চালকেরা। যানজটে অচলদশা পোর্ট কানেকটিং রোডেও।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরকে যানজটের কারণে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। জটের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। পণ্যপরিবহন স্থবির হয়ে পড়ায় রফতানি পণ্য জাহাজিকরণ ব্যাহত হচ্ছে। আবার আমদানিকৃত শিল্পের কাঁচা মাল কারখানায় পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় কলকারখানার চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বাহিরে জাহাজ, কন্টেইনার ও পণ্যজট বেড়েই চলছে।

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিবহন চালকেরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে প্রধান সড়কে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিটি আউটার রিং রোডটি যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত।

জাইকার সহযোগিতায় প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৩ ফুট উচু সড়কটি নির্মাণ করছে সিডিএ। সড়কটি চালু হলে পতেঙ্গা এলাকার বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর ভারী যানবাহনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরগামী সব ধরনের যানবাহন অনায়াসে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারতো। এতে বিমানবন্দর সড়কের চাপও কমতো।


বিষয়টি স্বীকার করে বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সিটি আউটার রিং রোড চালু হলে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো না। তিনি বলেন, কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সড়কে এক্সপ্রেসওয়ের ফাইলিং করতে গিয়ে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ওই অংশে সড়কের দুই পাশে নালা না থাকায় ভারী বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ কারণে সেখানে তীব্র যানজট হয়েছে। অন্যদিকে সিমেন্টক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেইট পর্যন্ত অংশেও সিটি কর্পোরেশন সংস্কার কাজ করছে। এরফলে দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্থ হওয়ায় বন্দর এলাকায় এ তীব্র জটের সৃষ্টি হয়েছে। জট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও দ্রæত বিধ্বস্ত সড়ক সংস্কারের কাজ করছে বলে জানান তিনি। যানজটে বেহাল দশার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ থেমে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বন্দরটিলা এবং কাটগড় থেকে বিমানবন্দর অংশে ফাইলিংয়ের কাজ চলছে।
সম্প্রতি ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসও বর্ষার আগে রিং রোড চালু করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কিছু জটিলতার কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি জুন মাস পর্যন্ত হলেও কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

পিসি রোডের কাজও শেষ হয়নি
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেকটিং-পিসি রোডের সম্প্রসারণ কাজও চলছে ধীরগতিতে। বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, পিসি রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বেহাল দশার কারণেও এই এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। এতে করে বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্যবাহি যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই প্রকল্পে কাজ করছে তিনটি প্রতিষ্ঠান।

জাইকা প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, সরকারের এলজিইডি দপ্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং সমন্বয় করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রায় তিন বছর ধরে প্রকল্পের কাজ চলছে। বর্ষার আগে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একাংশ খুলে দেওয়া হয়। অপর অংশে এখন কাজ চলছে। অন্যদিকে পিসি রোডের কাজ এখনও অনেক বাকি। পিসি রোডে বন্দরমুখি যানবাহনের তীব্রজট লেগেই আছে। কথা ছিলো মে মাসের মধ্যে কার্পেটিং করে পিসি রোডও যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

গতকাল দেখা গেছে পিসি রোড যানজটে অচল। নিমতলী থেকে বড়পুল পর্যন্ত শত শত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সড়কের ওপর পার্কিং। এসব গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে চলছে ভারী যানবাহন। রাস্তায় বড় বড় গর্ত পানি জমে পুকুরের আকার ধারণ করেছে। গর্তে আটকা পড়ছে ভারী যানবাহন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ এবং বের হওয়ার অন্যতম সড়ক এটি। বিধ্বস্ত সড়কের কারণে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিও ধীর হয়ে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন