বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাকওয়া-ই প্রকৃত নেকি এবং সৎকর্মের প্রাণ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কোরআন মাজীদ তাকওয়া বা পরহেজগারীকেই নেকীর মূল উৎস ও সৎকর্মের প্রাণ বলে অভিহিত করেছে। সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু সততার তাৎপর্য তো শুধুমাত্র এই যে, কেউ আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৯)। সূরা হজ্জে কোরবানির নির্দেশ দেয়ার পর ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কোরবানির গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাম্যও নয়। আর তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়ও না; বরং অন্তরের যে প্রেরণা ও উদ্দীপনা কোরআনীর নির্দেশ পালনে উদ্বুদ্ধ করে অর্থাৎ, তাকওয়া, তা-ই শুধু কাম্য। আর তাই আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় এবং গৃহীত হয়। বস্তুত সেটাই হলো আমলের প্রাণ। বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কোরবানির গোশত এবং রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। তার দরবারে যা কিছু পৌঁছায় তাহল তোমাদের অন্তরের তাকওয়া। (সূরা হাজ্জ : আয়াত ৩৭)।

এজন্য অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, আল্লাহ সেসব আমলই কবুল করেন যার কর্তার ভেতরে তাকওয়া বিদ্যমান থাকবে। সে আমল তাকওয়ার বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ হবে। অর্থাৎ, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতের ভাবনা সে আমলের উদ্দীপক হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ পরহেজগারদের আমলই কবুল করেন।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ২৭)।
কোরআন মাজীদে তাকওয়া বা পরহেজগারীর শিক্ষা ও দাওয়াত উৎসাহোদ্দীপক ভঙ্গিতেও দেয়া হয়েছে এবং ভীতিসঞ্চারক ভঙ্গিতেও। অর্থাৎ, অনেক ক্ষেত্রে তো মাগফেরাত (ক্ষমা-মার্জনা) ও রহমত এবং জান্নাত ও আল্লাহর সন্তোষ হেন সুসংবাদ শুনিয়ে মানুষকে তাকওয়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবার অনেক আয়াতে তেমনিভাবে কেয়ামত ও আখেরাতের ভয়ঙ্কর দৃশ্যাবলীর কথা উল্লেখ করে মানুষের অন্তরে তাকওয়া ও খোদাভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমে কয়েকটি ভীতিসঞ্চারক আয়াত উদ্ধৃত করা হলো।

সূরা হজ্জে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তানগণ, নিজেদের পালনকর্তাকে ভয় কর। বিশ্বাস কর, কেয়ামতের ভ‚কম্পন হবে অত্যন্ত কঠিন ঘটনা। যেদিন সে কেয়ামত তোমাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে (এবং তোমরা তার ভয়াবত দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পারবে), তখন তোমাদের অবস্থা এমন হবে যে, কারও বিষয়ে কারও হুশ থাকবে না। এমন কি (সদ্যজাত) শিশুকে স্তন্যদাকারিণী মায়েরা স্তন্যদান করতে ভুলে যাবে। গর্ভবতীদের গর্ভপাত ঘটে যাবে। আর তোমরা সব মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্তের মত অজ্ঞান অবস্থায় অথচ তারা কোনো নেশায়া মত্ত থাকবে না। কিন্তু আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর। (সে ভয়াবহতা ও ভীতি-আতঙ্কের দরুন তাদের এহেন অবস্থা হবে।)’ (সূরা হাজ্জ : আয়াত ১-২)।

সূরা লুকমানের শেষে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষগণ, তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং সেদিনকে ভয় কর যেদিন কোনো পিতা তার পুত্রের পক্ষ থেকে কোনো দাবি বা চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, নাই বা কোনো পুত্র নিজের পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কোনো দাবি পূরণ করতে পারবে। (বরং প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ভাবনা হবে।) বিশ্বাস কর, আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পূর্ণ সত্য ও অটল। সুতরাং পার্থিব এ জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে। তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে প্রতারক শয়তান যেন তোমাদের কোনো রকম ধোঁকায় না ফেলে। (সূরা লুকমান : আয়াত ৩৩)।

এ আয়াত দু’টিতে তাকওয়া তথা অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টি করার জন্য কেয়ামত ও আখেরাতের কঠোরতা ও ভয়াবহ দৃশ্যাবলী বিধৃত করা হয়েছে। (এটা নিঃসন্দেহে এমন এক বিবরণ যে, কোনো অন্তরে এ বিষয়টি শুনেও যদি খোদাভীতি ও আখেরাত চিন্তা সৃষ্টি না হয় তাহলে সে অন্তর নিঃসন্দেহে পাথরের অন্তর।)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Shah Abdul Mohit ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে তাকওয়ার আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাকওয়ার ফলাফল এবং আল্লাহ্‌ ভীরু হওয়ার উপায়-উপকরণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। একারণেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই খুতবা শুরু করতেন, তাকওয়া সম্বলিত আয়াত সমূহ প্রথমে পাঠ করতেন। এথেকে বুঝা যায় মুসলিম ব্যক্তির জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব কতটুকু।
Total Reply(0)
Mirza Anik Hasan ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
ইবনে রজব (রহ:) বলেন, “তাকওয়া মানে আনুগত্য শীল কর্মের মাধ্যমে এবং নাফরমানি মূলক বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ক্রোধ এবং শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।”
Total Reply(0)
Naznin Sultana ১৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
দুনিয়ার পুরস্কারের তুলনায় আখেরাতের পুরস্কার অনেক অনেক গুণ বড়। এ কথা কাউকে ওয়াজ করে বুঝানোর দারকার নেই। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইহকালীন পুরস্কারের তুলনায় আখেরাতের পুরস্কারই বেশি দেন।
Total Reply(0)
Mahamud Hasan Bappa ১৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর কিছু শুনলে মনে প্রফুল্লতা আসে, অন্তরে শোকর গুজারির হালত সৃষ্টি হয়। যারা ওই কল্যাণে কাজে লিপ্ত তাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া আসে। যদি এরকম হয়; এগ্রুপ দেশের জন্য কাজ করে বিগ্রুপও দেশের জন্য কাজ করে। কিন্তু এগ্রুপ যখন শুনলো বিগ্রুপের কোনো সুসংবাদ খুশি হয়নি। আবার এগ্রুপ যখন কোনো বিপদে পড়তো তখন বিগ্রুপ খুশি হতো। এগুলো বুঝতে হবে তাকওয়া নেই। দুজনেই তাবলীগ করে কিন্তু কেউ কারো কাজে খুশি না। বুঝতে হবে তাকওয়া নেই।
Total Reply(0)
Bonni Rahman ১৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
তাকওয়া সফল চরিত্রের ভূষণ। নবীজি (সা.) জীবনের আলোকিত পথই তাকওয়া অবলম্বন করা।
Total Reply(0)
Md Belayet Hossain ১৩ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫৫ এএম says : 0
এই সুন্দর লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী হুজুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন