শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উদ্বোধনের আগেই দেবে যাচ্ছে

ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেন মহাসড়ক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেন মহাসড়ক। জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কটি নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণব্যয় ৫৮ কোটি টাকারও বেশি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে চার লেনের এ মহাসড়ক উদ্বোধন হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই দেবে যাচ্ছে সড়কটি। দেবে যাওয়ার মাত্রা এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার অংশে বেশি। মহাসড়কের কোথাও কোথাও দেড়-দুই ইঞ্চি পর্যন্ত দেবে যাচ্ছে পিচ। আবার কোথাও কোথাও সড়কের মাঝখানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে এ মহাসড়কে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সড়ক দেবে যাওয়ার এ সমস্যাকে প্রকৌশলীদের ভাষায় বলা হয় ‘রাটিং’। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের প্রকৌশলীদের মতে, পিচের জন্য পাথর-বিটুমিনের যে মিশ্রণ তৈরি করা হয়, সেটি ঠিকমতো না হলে রাটিং বা সড়ক দেবে যেতে পারে। সড়ক দেবে যাওয়ার আরেকটি কারণ যানবাহনের ‘ওভারলোড’। এর বাইরে দুর্বল নকশা বা দুর্বল নির্মাণকাজের কারণেও সড়ক দেবে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়া মাটির ধাপগুলোতে ঠিকমতো রোলিংয়ের কাজ না করা হলেও রাটিং দেখা দিতে পারে। একই সমস্যা দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কেও। এ কারণে উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে সংস্কারকাজের প্রয়োজন পড়ে সড়কটিতে।

জানা গেছে, গত ২১ ও ২২ জুন মহাসড়কটি পরিদর্শন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি মনিটরিং টিম। পরিদর্শনকালে তারাও এলেঙ্গা থেকে ঢাকার দিকে পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার অংশে রাটিং দেখতে পেয়েছেন। মনিটরিং টিমের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাটিং হওয়া কয়েকটি জায়গায় মেশিন দিয়ে কেটে মেরামত করা হয়েছে, যা দেখে মনে হচ্ছে পুরনো মেরামত করা সড়ক। সদ্য নির্মিত মহাসড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে এ ধরনের রাটিং কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। রাটিংয়ের মাত্রা ক্রমান্বয়ে ঢাকার দিকে এগোচ্ছে। এতে নির্মাণকাজের প্রতি জনসাধারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ভাবমর্যাদাও ক্ষুণœ হচ্ছে। কারিগরি টিম গঠন করে রাটিংয়ের কারণ অনুসন্ধান করে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করার জন্যও মতামত দিয়েছে এই মনিটরিং টিম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজের কারণেই উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এমন অবস্থা হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন বাস চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের পর থেকে ঢাকার দিকে (ডান পাশে) প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক দেবে গেছে। এছাড়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর সিএনজি পাম্পের সামনে কোথাও কোথাও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আবার উত্তরবঙ্গের দিকে (ডান পাশে) এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চার লেনের মহাসড় দেবে গেছে। এর মধ্যে কোথাও একটু বেশি আবার কোথাও একটু কম। দেবে যাওয়া কয়েকটি স্থানে নতুন করে কার্পেটিং করে মেরামতও করা হয়েছে। তার চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হানিফ পরিবহনের চালক আব্দুল রশীদ বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এক পাশে দেবে যাচ্ছে। যা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে। নিম্নমানের কাজের কারণেই এরকম হচ্ছে। একতা পরিবহনের চালক জাকির হোসেন বলেন, উদ্বোধনের আগেই মহাসড়ক একপাশে দেবে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। ঠিকমতো ভিটুমিন দিয়ে কাজ করলে হয়তো মহাসড়কটি আরও ভালো হতো। অল্পদিনেই এভাবে দেবে যাবে এটি ধারণাই করা যায় না।

বাস চালকরা জানান, মহাসড়কের একপাশ দিয়ে গাড়ি চালাতে গেলেই দেবে যাওয়া অংশে চাকা পড়ে বাস একদিকে কাত হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে গতি কমাতে হয়। তা না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। হঠাৎ করে বাস একদিকে কাত হলে যাত্রীরাও ভয় পেয়ে যান। তারাও নড়েচড়ে বসেন।

জানা গেছে, চারটি প্যাকেজে চলছে ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে প্যাকেজ-৪-এ পড়েছে এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের ১০ কিলোমিটার। দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএলের এ অংশের নির্মাণকাজ করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড। কাজের চুক্তিমূল্য ৩৫৬ কোটি টাকা।

এদিকে, উদ্বোধনের আগে সড়ক দেবে যাওয়ার জন্য নিম্নমানের নির্মাণকাজকে দায়ী করা হলেও তা মানতে নারাজ প্রকল্পের পরিচালক এবং নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক মো. ইসহাক বলেন, নিম্নমানের নির্মাণকাজের জন্য এমন সমস্যা হয়নি। দেবে যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে ওভারলোডের যানবাহনের চলাচল ও অতিরিক্ত ট্রাফিক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেবে যাওয়া আর রাটিং এক জিনিস না। ওই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাটিংটা হয় সড়কের নির্দিষ্ট অংশে, যেদিক দিয়ে গাড়ির চাকা বেশি পড়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। তিনি বলেন, শুধু এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের ৪ নম্বর প্যাকেজে নয়, পুরো সড়কেই রাটিং সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেদিক দিয়ে গাড়ির চাকা বেশি পড়ে, সেই অংশে রাটিং তৈরি হয়। দুটি কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত ওভারলোডিং। দ্বিতীয়টি হলো সড়কের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ওভারলোডিংয়ের কারণে এমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বুয়েটের শিক্ষক প্রফেসর ড. সামছুল হক বলেন, ১৯৯৮ সালে চালু হওয়া যমুনা সেতুর সংযোগ সড়ক দিয়ে গাড়িগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেন মহাসড়কে উঠছে। সেখানে তো রাটিং দেখা যায়নি। তিনি বলেন, যারা ‘ওভারলোডেড’, ‘ওভার ট্রাফিকের’ কথা বলছেন, তারা আসলে একটা দায়সারা কথা বলছেন, যেটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিশেষজ্ঞ এ প্রকৌশলী মনে করেন, সমস্যাটা নির্মাণে। রাস্তার নির্মাণকাজটাই আসলে এখানে ভালো হয়নি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয় ২০১৩ সালে। কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চার প্যাকেজে কাজ হচ্ছে। প্রথমটি গাজীপুরের ভোগরা বাজার ইন্টারচেঞ্জ থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস ইন্টারসেকশন পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার। এর কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার কায়রইঙ ও বাংলাদেশের স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।

দ্বিতীয় প্যাকেজে টাঙ্গাইল থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস ইন্টারসেকশন পর্যন্ত আরো ১৯ কিলোমিটার নির্মাণ করছে বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং। তৃতীয় প্যাকেজে দুল্লামারী রোড থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামহোয়ান ও বাংলাদেশের মীর আখতার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Rasel Hossain ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
এটার নামই বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Md Sohrab Hossain ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
উন্নয়ন এর মহাজোয়ার থেকে উদ্ভুত মহাপ্লাবন।
Total Reply(0)
Humayun Rashid Razi ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
Total Reply(0)
Nazmul H Azad ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
Well presented
Total Reply(0)
Ajad Ahmed ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
এটাই সাভাবিক
Total Reply(0)
Nazrul Islam ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
বড়ো বড়ো অনিয়ম, দুর্নীতি ধরার কেউ নেই। ছোটগুলো ধরা পড়ে।
Total Reply(0)
Saiful Huda Anaholy Taha ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম কি? কনসালটেন্ট কারা ছিলো জানা যাবে কি?
Total Reply(0)
N.I. J S ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
ঢাকা - ময়মনসিংহ মহাসড়ক সেনাবাহিনীর তথ্যাবধানে করা হয়েছিলো এবং কাজ যথেষ্ট টেকসই যা গর্ব করে বলা যেতে পারে। কিন্তু সেই তুলনায় ঢাকা- চট্টগ্রাম, ঢাকা - টাংগাইল মহাসড়ক সড়ক ও জনপদের অধীনে হয়েছে এবং সাথে দূর্নীতিও হয়েছে।
Total Reply(0)
Swapan Mahmud ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
সম্পুর্ন ঘটনাটা মনোযোগ দিয়ে পরলাম। সবাই যার যার অবস্থান থেকে নেতিবাচক মন্তব্য তুলে ধরেছেন। সবাই প্রকৃত কথাই বলেছেন, তবে কাজের পরে, আগে না। বিষেশজ্ঞরা যদি এই মন্তব্য গুলো কাজের আগে বলে, এবং সেই মোতাবেক তদারকি করে, তাহলে এই সমস্যা হওয়ার কথা না। এই প্রকল্পের মূলে হলো সড়ক ও জনপদ বিভাগ, তাদের ইঞ্জিনিয়ার গুলো ঠিকমত তদারকি করেন নি। পকেটে কিছু টাকা ঢুকিয়ে দিছে, সব ঠিক। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সৎ থাকতে হবে, তবেই দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে। আমার জানামতে, যে সকল ঠিকাদারি প্রতিষ্টান এই রাস্তার কাজ করেছে তারা খুব ভাল এবং এক্সপার্ট লোক দিয়ে কাজ করায়, যেমন, ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন, তুর্না এন্টারপ্রাইজ, মীর আখতার লিমিটেড এই তিনটি প্রতিষ্টান কাজ করছে এই প্রজেক্টে। ধন্যবাদ সবাই কে।
Total Reply(0)
রহিম ১৩ জুলাই, ২০১৯, ৭:২১ এএম says : 0
খালেদাজিয়ার নামে আরেকটা মামলা দিলে কেমন হয়
Total Reply(0)
ash ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১১:১২ এএম says : 0
LUTE-PUTE KHACHE DESH TAKE WNNOONER NAME ! ROAD, BRIDGE,NODI KHONON, NODIR TIR SHONGROKHON, SORKARI SHOB INDUSTRYS BANGLADESH ARMY R UNDER E DEWA WICHITH !! NA HOLE AI CHORRR GULO LUTE PUTE E KHABE !!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন