শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাজনীতির পথ ফুলের পাপড়ি বিছানো নয়

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

গত ২৭ জুন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের বড় মিলনায়তনে ব্যাপক মিডিয়া উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি প্রাণবন্ত প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে একটি আন্দোলনের বা রাজনৈতিক প্রবাহের সূচনা; নব উন্মেষ ঘটা ওই ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’-এর ব্যানারে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পয়লা জুলাই অনুষ্ঠিত হয় একটি সফল ও প্রাণবন্ত আলোচনা সভা। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত রাজনৈতিক মুখ হলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ড. অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তিনি ২০ দলীয় জোটের আওতাভুক্ত থেকেই নতুন কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন যার নাম দেয়া হয়েছে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’। ৮০ বছর বয়সী অলি আহমেদ একজন পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতনে অভিজ্ঞ, রাজনৈতিক জীবনে স্থান ও অবস্থান বদল করলেও জাতীয়তাবাদী ঘরানার বাইরে যাননি, আপদ-বিপদ মোকাবেলার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ব্যক্তি। তার লেখা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বই আছে। সরকারি ও বেসরকারি কাজে বহু দেশ ও রাজধানী সফর করেছেন। কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম যখন চলমান রাজনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করলেন, তিনি রাজনৈতিক সতীর্থ নিবন্ধের লেখক মেজর জেনারেল ইবরাহিমের কাছে এটি প্রথম উপস্থাপন করেন। ইবরাহিমের অন্যতম পরামর্শ ছিল, ২০ দলীয় জোটের আওতায় থেকেই এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। এই জোটের অনেক শরিকই বিগত পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগের গত চার বছরে সদলবলে চলে গেলেও তাদের খন্ডিতাংশকে জোটে অবস্থান দেয়া হয়েছিল। ২০ দলীয় জোটের পূর্বসূরি, চারদলীয় জোটের আমল থেকেই যিনি শরিক, সে রকম একজন শরিক আন্দালিব রহমান পার্থের দল দুই মাস আগে জোট ছেড়ে চলে গেলেও তার দলের কোনো খন্ডিতাংশকে জোটে স্বাগত জানানো হয়নি; এটা শুভ লক্ষণ। তবে জোটের শীর্ষ নেতাদের সর্বশেষ বৈঠকে, ২০ দলীয় জোটের পূর্বসূরি চারদলীয় জোটের আমল থেকেই যারা ২০ দলীয় জোটে আছেন, তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং খেলাফত মজলিসের কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। এ ঘটনা রাজনৈতিক মহলে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ অবস্থায় ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা যেমন অতীব প্রয়োজন, তেমনি অত্যন্ত কঠিন। সক্রিয় করার জন্য অন্যতম উপায় হতে পারে আন্দালিব রহমান পার্থ কর্তৃক জোট ছেড়ে যাওয়ার কারণগুলো অনুসন্ধান ও আলোচনা করা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ জগদ্বিখ্যাত এবং নিঃসন্দেহেই মানব ইতিহাসের সম্পদ। সেই ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে জনপ্রিয় বাক্যটি এরূপ: ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। তবে বাস্তবতা হলো, আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে; কিন্তু আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি। কয়েক বছর আগে, কোনো এক বিজয় দিবসে বা স্বাধীনতা দিবসে, একটি পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা একটি কলামের শিরোনাম ছিল- ‘বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা, পরাজিত নাগরিক’। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীন দেশের নাগরিকেরা আজো জয়ী হতে পারেননি। অতি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, কিসের ওপর বা কিসের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি? সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জিত হয়নি, গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জিত হয়নি, মৌলিক মানবাধিকারগুলো অর্জিত হয়নি, অশিক্ষা ও কুশিক্ষার ওপর বিজয় আসেনি, অর্থনীতিতে লুণ্ঠন প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায়নি। বাংলাদেশের রাজনীতি গোষ্ঠীস্বার্থেই শক্তিশালীদের দ্বারা কুক্ষিগত হয়েছে, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে বারবার আক্রান্ত হয়েছে, গৃহবিবাদে বারবার আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সম্পদ, আমাদের অর্থনীতি নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতায় থাকার নিমিত্তে যা যা ‘প্রয়োজন’, তাই করেছে। দুর্নীতিকে নীরবে বা পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে; কিন্তু প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে ‘সাফল্যের সাথে’। সরকারদলীয়রা ক্ষমতা উপভোগ ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করায় ব্যস্ত এবং ক্ষমতা থেকে সুবিধা আহরণে ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক স্বপ্নে, তার দর্শনে, তার কর্মসূচির মাধ্যমে যে মুক্তি চেয়েছিলেন, প্রায় একই ধরনের মুক্তি চেয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯ দফার মাধ্যমে। তাদের জীবদ্দশায় পুরো লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। অতএব, বাংলাদেশকে ভালোবাসে- এমন রাজনৈতিক কর্মীদের দায়িত্ব হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মুক্তি অথবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের মুক্তি অর্জনে চেষ্টা করা, যতটুকু সম্ভব ততটুকু অবদান রাখা।

বাংলাদেশের রাজনীতির সরকারবিরোধী অঙ্গন দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত, যথা পার্লামেন্টের ভেতরের বিরোধী দল এবং পার্লামেন্টের বাইরে রাজপথের বিরোধী দল। রাজপথের বিরোধী দল নিপীড়িত ও নির্যাতিত; রাজনৈতিক কর্মী ইবরাহিম এই নিপীড়িত-নির্যাতিতদের সাথে একাত্ম। বিগত সাত বছরের অধিককাল ধরে যেমন সাক্ষী, তেমনি বিগত নির্বাচনের একজন প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এরূপ নির্যাতনের ও নিপীড়নের সরেজমিন সাক্ষী। তাই রাজনীতিবিদ ইবরাহিম ‘ধানের শীষ’-এর কোটি কোটি নিপীড়িত-নির্যাতিত কর্মীর অনুভূতির সাথে একাত্ম। এরূপ কোটি কোটি নিপীড়িত-নির্যাতিত কর্মীর নয়নের মণি ও হৃদয়ের স্পন্দন হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার কারাগারে যাওয়ার আগের পরিস্থিতি বিস্তারিত মূল্যায়ন বা আলোচনা-সমালোচনার স্থান এই কলামে এখন নেই। কিন্তু ধ্রুব সত্য এই যে, বেগম জিয়াবিহীন জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনীতি গতি পাচ্ছে না, না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অতএব, এই প্রেক্ষাপটে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন করে বা নব উদ্যমে আন্দোলন-সংগ্রাম ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই। এরূপ একটি সংগ্রাম ২০ দলীয় জোটের সবার অংশীদারিত্বে করা গেলে সেটিই খুব প্রশংসনীয় হতো; কিন্তু সবার অংশীদারিত্ব হওয়ার অপেক্ষায় অনিশ্চিত দীর্ঘমেয়াদ পার হওয়া অবাস্তব এবং আদৌ যে সবার অংশীদারিত্বে তা হবে, সেটিও অনিশ্চিত।

দুটি প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দেখে নেয়া যেতে পারে। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান পরোক্ষভাবে ক্ষমতার অংশীদার ছিলেন। সম্রাট শাহজাহানের আমলে, একবার নিজপুত্র আওরঙ্গজেবের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে শাহজাহান আওরঙ্গজেবকে মৃত্যুদন্ড দিতে তথা হত্যা করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই সময় শাহজাহানের কন্যা তথা আওরঙ্গজেবের ভগ্নী জাহানারা, পিতার কাছ থেকে ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা নিয়েছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে দুর্বল সময়ে শাহজাহান তার বড় পুত্র দারাশিকোকে পরবর্তী সম্রাট বানানোর উদ্যোগ নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে ক্ষমতায় আরোহণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ওই প্রতিযোগিতায় আওরঙ্গজেব জয়ী হওয়ার পরপরই নিজ পিতাকে বন্দি করেছিলেন এবং ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়ানোর জন্য পিতাকে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন শাহজাহানের কন্যা জাহানারা, পিতার জীবন বাঁচানোর জন্য ভাইয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় উদাহরণ বাংলাদশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল তথা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে রওশন এরশাদ এবং বিদিশা এরশাদ (বর্তমানে বিদিশা সিদ্দিক)-এর ভূমিকা ও অবস্থান মূল্যায়নের দাবি রাখে। যেহেতু বিষয়টি চলমান এবং অতি সা¤প্রতিক, আমার পক্ষ থেকে ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন নেই, বোদ্ধা পাঠকমাত্রই বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন। সারমর্ম হলো, অতীতকালে যখন রাজা-বাদশাহরা দেশ শাসন করতেন, তখন রানী বা রানীগণ, অমাত্যবর্গ এবং সেনাপতিগণের মিলিত শক্তিই ছিল ক্ষমতার চালিকাশক্তি বা ষড়যন্ত্রের চালিকাশক্তি। গণতন্ত্রের যুগে রানীর বদলে ক্ষমতাসীন পুরুষের নারী সহযোগীরাও দলের নেতৃত্বের একটি অংশ, প্রকাশ্যে বা ষড়যন্ত্রে রাজনীতি বা ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন; এটা বিলাত বা ভারত বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বা থাইল্যান্ড- এরূপ অনেক দেশেই দেখা যায়।

রাজনীতির পথ কখনই ফুলের পাপড়ি বিছানো নয়। দেশি-বিদেশি প্রখর ও নিবিড়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দৃষ্টির গোচরে থেকেই রাজনীতির পথে হাঁটতে হয়; দেশি-বিদেশি প্রখর ষড়যন্ত্রমূলক কূটচাল মোকাবেলা করেই হাঁটতে হয়; প্রাসাদ ষড়যন্ত্র বা দীনকুটিরের ষড়যন্ত্র এবং গৃহবিবাদ মোকাবেলা করেই হাঁটতে হয়; কোনো কোনো সময় কৌশলের অংশ হিসেবে অথবা নিজের রাজনৈতিক পথের সুরক্ষার জন্য পথ বদলাতে হয়। রাজনীতির অঙ্গনে নেতৃত্বের জন্য নীরব প্রতিযোগিতা বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত (ইংরেজি পরিভাষায় ‘পার্সোনালিটি ক্ল্যাশ’) যুগে যুগে হয়ে এসেছে, বর্তমানেও দৃশ্যমান এবং ভবিষ্যতেও হবে; এটা মনে রেখেই রাজনীতির পথে হাঁটতে হয়। এরূপ প্রেক্ষাপটেই একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীকে নিজ স্বচ্ছতা উজ্জ্বল রাখতে হবে। এই চেষ্টা কারো জন্য সহজ ও প্রিয় হবে; আবার কারো জন্য কঠিন ও অপ্রিয় হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো পদক্ষেপই সাধারণ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে গভীর পর্যবেক্ষণ ও গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে; রাজনীতিমনস্ক আগ্রহী ব্যক্তিদের অনেকেরই সন্দেহের সৃষ্টি করবে। নতুন কোনো রাজনৈতিক পথের সূচনায় অনেকেই উৎফুল্ল হবেন, অনেকেই হবেন আতঙ্কিত। একজন কলাম লেখকের বা একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এসব বিষয়ে নজর রাখা সবিশেষ কঠিন নয়। প্রাসঙ্গিক হওয়ার কারণে এর আগে আমার লেখা কলামের একটি অনুচ্ছেদ এখানে উদ্ধৃত করছি। ‘এত কথা বলার পেছনে কারণ, এখন সময়টি গুরুত্বপূর্ণ যাচ্ছে, সময়টি সঙ্কটপূর্ণ যাচ্ছে, সময়টি স্পর্শকাতর যাচ্ছে। সঠিক বুঝতে না পারলেও ভুল বোঝার জন্য রাস্তা খোলা; ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ উন্মুক্ত। যেকোনো আলাপে, সংলাপে, আলোচনায়, পাঠ-উদ্ধারে, সঠিক মর্ম হৃদয়ঙ্গম করতে বা সঠিক বক্তব্য বুঝতে সময় লাগে, কষ্ট হয়। কিন্তু ভুল বুঝতে একদম সময় লাগে না, চটজলদি ভুল বোঝাবুঝি হয়েই যায়। ফেসবুক বা ভার্চুয়াল জগতের আবির্ভাবের সাথে সাথে মানুষের ধৈর্য কমে যাচ্ছে। কারণ, তাৎক্ষণিক মন্তব্য দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন সময়টি প্রতিশ্রুতিময়। আমরা যদি সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই, আমরা যদি লুক্কায়িত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই, আমরা যদি প্রতিশ্রুতিকে ফলপ্রসূ করতে চাই, তাহলে চিন্তায় সমন্বয় ও সংহতি প্রয়োজন। ২০১৮ সাল ছিল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির সময়।’

নিজে যেহেতু একজন রাজনৈতিক কর্মী, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকেরই একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকা স্বাভাবিক। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নীতিবাক্য ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনায়নের লক্ষ্যেই আমার বা আমাদের দলের রাজনীতি। সে লক্ষ্যেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। নব উন্মেষিত ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’-এর শ্লোগান বা মটো হলো, জাতিকে মুক্ত করো, ইংরেজিতে ‘ফ্রি দ্য নেশন’। এই কাজ কোনো দিনই একা করা সম্ভব নয়। এই কাজ দুই দিনে বা দুই মাসেই সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়। এতে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু কতজন আগ্রহী, কতজন ঝুঁকি নেবেন, কতজন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত, কতজন পরিবর্তনে অনুঘটকের কাজ করতে পারবেন, কতজন বিদ্যমান অবস্থা থেকে উন্নততর সেবা দেয়ার মানসিকতা ও যোগ্যতা রাখেন- সেটি আলোচনাযোগ্য ও অনিশ্চিত বিষয়। পথ চলতে চলতে কেউ যোগ হবেন, কেউ বিয়োগ হবেন। যেকোনো দলের পথচলায় এটি প্রযোজ্য। যেকোনো জোটের পথচলায় এটি প্রযোজ্য। জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনেও এটি প্রযোজ্য। কারণ, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর রাজনীতি বা আরো প্রত্যক্ষভাবে বলতে গেলে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতির অঙ্গন প্রাসাদ-ষড়যন্ত্র, দীনকুটিরের ষড়যন্ত্র এবং গৃহবিবাদ থেকে কিংবা বিদেশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রাজনীতিতে বন্ধুর ছদ্মবেশে শত্রুরা ঘোরে। দূরের শত্রুরা কাছে আসে না; ঘরের শত্রুকে কাজে লাগায়; রিমোট কন্ট্রোলে রাজনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে কোনো কোনো সময় স্থিতিশীল সময় যায়, কখনো তা অস্থিতিশীল অস্থির সময় যায়। বাংলাদেশের বর্তমান সময়টা মিশ্র এবং এই মিশ্র সময়ে আমাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন; উদ্বিগ্ন হওয়া পরিহার করতে হবে, নিতে হবে সাহসী পদক্ষেপ।

লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন