শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআনে পাঞ্জেগানা নামাজের ওয়াক্ত প্রসঙ্গে-১

খালেদ সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ইসলামের বিরুদ্ধচারণ, বিকৃতকরণ এবং নানাভাবে ইসলামে সংশয় ও সন্দেহের সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইহুদিদের অপপ্রচারগুলোর মাধ্যমেই ওদের বিকৃত মস্তিষ্কের বিকৃত চিন্তাধারা আধুনিক শিক্ষিত এক শ্রেণীর মুসলমানদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং ওরা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকেও সংশয়যুক্ত করার অসাধু প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে। ওদের ওইসব অপপ্রচারের মধ্যে ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির অন্যতম নামাজ একটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কথা কোরআনে বলা আছে কি- এগুমরাহ শ্রেণী এমন আজগুবি প্রশ্নও করে থাকে। ওদের ইসলাম সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান থাকলেও এরূপ বলার সাহস পেত না।

কোরআন শরীফে যে সকল স্থানে নামাজ কায়েম করার কথা বলা হয়েছে এবং সাথে সাথে সেখানে জাকাত প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। নামাজের ওয়াক্তের কথাও বলে দেয়া আছে। অন্ধদের তা দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও কোরআনে তা সুস্পষ্টভাবে তা বলে দেয়া হয়েছে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ফরজের একটা সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন একমাত্র ‘জিকির’ ব্যতীত, সেটার কোনো সময়সীমা রাখেননি বরং এরশাদ করেন, জিকির করো দন্ডায়মান হয়ে, বসে, করট সমূহের ওপর শুয়ে, রাতে হোক কিংবা দিনে, স্থলে হোক কিংবা জলে, সফরে কিংবা ঘরে, সচ্ছলতায় ও অভাবগ্রস্ত অবস্থায়, অসুস্থতায়, গোপনে এবং প্রকাশ্যে।
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ফরজকৃত এবাদতগুলোর মধ্যে তওহীদের পরেই নামাজের স্থান। তওহীদ বা আল্লাহ্র একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। প্রাপ্ত বয়স্কের ওপরই শরীয়তের আহকাম আরোপিত হয়েছে, তার পূর্বে নয়। এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়াটাই শর্ত।

জীবনে চলার পথে মানুষের জন্য সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহ সীমা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তার এবাদত বন্দেগী করার জন্যও সময় নির্ধারিত। বিশেষত আল্লাহ্র ফরজ এবাদতগুলো পালন করার জন্য সময় নির্ধারিত, সে সময়ের বাইরে তা করার বিধান রাখা হয়নি। এ ফরজ এবাদতগুলোর মধ্যে প্রধান এবাদত হলো নামাজ, যা পালন করার জন্য ওয়াক্ত বা সময় ধার্য করা হয়েছে। এ সময় নির্ধারণের উল্লেখ কোরআনে এইভাবে হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই নামাজ মু’মিনদের জন্য ফরজ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ’। (সূরা. নেসা, আয়াত- ১০৩)।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ‘আল কোরআনুল করীমে’ আয়াতটির অর্থ করা হয়েছে: ‘নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য’।

এ আয়াতে নামাজের সময় নির্ধারিত করা হয়নি, সাধারণভাবে নামাজের সময় নির্ধারিত বলা হয়েছে, কিন্তু অন্যত্র সময়ের বিবরণ বলে দেয়া হয়েছে। একটি আয়াতে আসর এর নামাজ বলা না হলেও উহাকে ‘ছালাতুল ওস্তা’ বলা হয়েছে, যার বর্ণনা পরবর্তীতে রয়েছে। অপর দুই স্থানে নামাজের উল্লেখ করা হয়নি, তবে সময়ের যে বিবরণ দেয়া হয়েছে, তাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আয়াতগুলো নিম্নরূপ:
১. নামাজ কায়েম কর দিনের প্রথম ভাগে ও শেষ ভাগে এবং রাতের কিছু অংশে-(সূরা হুদ আয়াত- ১০৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, দিনের দুই দিক অর্থাৎ সূর্যের উদয়-অস্তের পূর্বে ফজর ও আসরের নামাজ অর্থ করা হয়েছে। অথবা একদিকে ফজর এবং অপরদিকে মাগরিবকে রাখা হবে। কেননা উহা একেবারেই অস্তমিত হওয়ার সময়। কারো কারো মত হচ্ছে, এতে ফজর, জোহর ও আসর- এই তিন নামাজের সময় অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ দিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে প্রথম অংশে ফজরকে এবং দ্বিতীয় অংশে- যা অর্ধদিবস বা মধ্যাহ্ন হতে শুরু হয়ে অস্তমিত হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময়কে বুঝানো হয়েছে জোহর ও আসর এ সময়ের অন্তর্ভুক্ত। আর রাতের কিছু অংশ বলতে এশা অথবা মাগরিব ও এশা উভয়কে বুঝানো হয়েছে। ইবনে কাসির এই সম্ভাবনা ও লিখেছেন যে, দিনের দুইদিক দ্বারা ফজর ও আসর এবং রাতের এক ভাগ দ্বারা তাহাজ্জুদের নামাজ বুঝানো হয়েছে। কেন না ইসলামের প্রথম দিকে একটি নামাজই ফরজ ছিল। পরে তাহাজ্জুদের ফরজ বাতিল হয়ে যায় এবং বাকি দুইটির সাথে তৃতীয়টি বর্ধিত করা হয়। (তফসীরে উসমানী)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Rubel Ahmed ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
নামাজের এ ওয়াক্তগুলো পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। কোন কোন সময় এ নামাজ আদায় করতে হবে তারও নির্দেশ এসেছে কুরআনে।
Total Reply(0)
মেহেদী হাসান ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের উপর দিবানিশি মোট ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। সাথে সাথে এগুলো আদায়ের জন্য তাঁর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী পাঁচটি সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে করে বান্দাহ্‌ এ সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে তার প্রতিপালকের সাথে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
Total Reply(0)
Mirza Anik Hasan ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
আসলেই পবিত্র কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা সময়গুলো সুস্পষ্ট করে দিয়ে বলেন- সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবিহ আদায় কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা) উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে। আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।' (সুরা রূম : আয়াত ১৭-১৮)
Total Reply(0)
জান্নাতুল নাঈম মনি ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
একই ওয়াক্তে পাঁচটি নামায আদায় করা ফরয করা হলে বান্দার মাঝে ক্লান্তি ও বিরক্তিবোধ উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক ছিল। তাই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাঁচটি সালাত আদায় করা ফরয করা হয়েছে- যেন বান্দার মাঝে অবসন্নতা ও বিরক্তিবোধ না আসে।
Total Reply(0)
সাখাওয়াত হোসেন উজ্জ্বল ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার যাবতীয় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থেকে যথাসময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
মনির হাসান ১৪ জুলাই, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মাগরিবেরসময় হলো- যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশের লালিমা অদৃশ্যহয়ে যায়। ইশার সময় হলো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের সময় প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আরসূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।” [মুসলিম ৬১২
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন