মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজনৈতিক কারণে জনগণের ভোগান্তি

দুই মেরুতে দুই মেয়র : নিষিদ্ধ সড়কে রিকশা চলছেই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

যানজট নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকার দু’টি প্রধান সড়কসহ তিনটি রুটে রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করার পর ঢাকার দুই মেয়রের অবস্থান এখন দুই দিকে। রিকশাচালকদের আন্দোলনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এখনও তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে কার্যক্ষেত্রে তা চোখে পড়ছে না। দুই মেয়রের বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকার সুযোগে প্রধান দু’টি সড়কে ফের আগের মতোই রিকশা চলছে।

এতে করে গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও প্রগতি সরণীর কয়েকটি স্পটে যানজট দেখা গেছে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও এতে কোনও বাধা দেননি। ভুক্তভোগিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে জনগণকে আবারও যানজটের ভোগান্তির দিকে ঠেলে দেয়া হলো। জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ভাই আমরা খুবই বিরক্ত। একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে-চিন্তে নেয়া উচিত ছিল। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পুলিশের উপর সব দায় চাপিয়ে দিতেই অভ্যস্ত সবাই। রিকশা চলাচল করবে কি করবে না- তা এখন আর স্পষ্ট নয়। এজন্যই মূলত রিকশা চলছে। তাতে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
গত ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ নগর ভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সমন্বয় সভা শেষে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানান, ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর তিনটি রুটে রিকশা চলাচল করবে না। রুটগুলো হচ্ছে- কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আসাদগেট-আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ।

এদিকে, রিকশা বন্ধের প্রথম দিন থেকেই আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য শুরু করে রিকশাচালক ও মালিকরা। তাদের দাবি, প্রধান সড়কগুলোতেও রিকশা চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। এভাবে রিকশা বন্ধ করে দিলে তাদের পথে বসতে হবে। সাধারণ মানুষও দুর্ভোগে পড়বে। অথচ ঢাকার ২২’শ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ২৫ কিলোমিটার রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এতে করে রিকশাচালকদের উপার্জন কিভাবে কমবে সে প্রশ্ন ভুক্তভোগিদের?
রিকশাচালকদের আন্দোলনের পর গত ১০ জুলাই ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম নগর ভবনে রিকশাচালক ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথমে বলেন, প্রগতি সরণিতে কোনও রিকশা চলবে না। আবার পরে বলেন, পর্যায়ক্রমে প্রগতি সরণি থেকে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল থেকে প্রগতি সরণীতে কুড়িল থেকে বাড্ডা ও রামপুরা হয়ে মালিবাগ পর্যন্ত অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি রিকশাও চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও বাধা দিচ্ছে না। দুপুরে যানবাহনের চাপ বাড়লে মধ্যবাড্ডা, রামপুরাও মালিবাগ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তাতে ছুটির দিনেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।

রিকশাচালকরা জানান, মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের পর মালিক ও নেতারা তাদের জানিয়েছেন রিকশা চলতে কোনও সমস্যা নেই। সে কারণে তারা আন্দোলন তুলে নিয়েছেন। এখন তারা প্রগতি সরণিতে রিকশা চালাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বলেছি পর্যায়ক্রমে রিকশা বন্ধ করতে হবে। হুট করেই বন্ধ করে দিলে হবে না। রিকশাচালকদের সমস্যাও শুনতে হবে। এজন্য বাইলেনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

তাহলে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তটি এসেছে ঢাকা দক্ষিণ থেকে। সেদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওয়ার্ডভিত্তিক অবৈধ রিকশা ও গ্যারেজ শনাক্ত করা হবে। এজন্য কমিটি করে দিচ্ছি। আমরা বৈধ রিকশার পেছনে কিউআর কোড করে দেবো। চালকদেরও ডাটাবেজ করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক রিকশাওয়ালাদের বিভিন্ন ড্রেস করে দেবো। অবৈধ রিকশা বন্ধ করবো।

এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রিকশা বন্ধে তার অনড় সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধান সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির যানবাহন রিকশা। পৃথিবীর কোনও শহরে এমন অবস্থা নেই। অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে গঠিত কমিটি দু’টি প্রধান রুটে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো শহর থেকে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া হয়নি। মাত্র ২০-২৫ কিলোমিটার সড়কে বন্ধ করা হয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সিদ্ধান্ত কার্যকরে ভূমিকা রাখতে হবে।

রিকশা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানের বিষয়ে সাঈদ খোকন স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও নগর ভবনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, কমিটির দায়িত্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পুলিশের। এছাড়া সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময়ও ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করছে না। তারা দায়িত্ব পালন করলে আন্দোলন বা বন্ধ ঘোষিত সড়কে রিকশা চলতে পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন