বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতিক্রিয়াশীল অর্থমন্ত্রী শব্দের অর্থই বুঝেননি -রিজভী

আ’লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না ইউপি নির্বাচন তার প্রমাণ

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণবিরোধী বাজেট দেয়ায় অর্থমন্ত্রী ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ শব্দটি স্বাভাবিকভাবে এড়িয়ে গেছেন। প্রতিক্রিয়াশীল শব্দটির অর্থ ঠিকমতো বুঝতে পারেননি তিনি। প্রতিক্রিয়াশীল বাজেট অর্থ হচ্ছে, এই বাজেট মানুষের বিপক্ষে, গণবিরোধী।
অর্থমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় একে প্রতিক্রিয়াশীল বলেছিলেন রিজভী। এর প্রতিক্রিয়ায় বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুুল মুহিত বলেন, ‘অস্তিত্বহীনরা’ তার দেওয়া বাজেটকে প্রতিক্রিয়াশীল বলেছে।
অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গতকাল নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, যারা দেশকে বিভাজন করেন, উচ্চবিত্তকে আরও উচ্চ করেন, তাদের টাকা আরও বাড়ান এবং যারা গরিব তাদের আরও গরিব করেন, তারা হচ্ছেন প্রতিক্রিয়াশীল।
তিনি বলেন, কৃষিজাত যন্ত্রপাতির উপর কর বাড়াচ্ছেন, এটা কি গণবিরোধী নয়? আপনি মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের অবসরের অবলম্বন সঞ্চয়পত্রের উপর সুদ কমিয়ে দিয়েছেন, তার উপর উৎসে কর কেটে নেবেন, এটা কি গণবিরোধী নয়? রুটি-আটার উপর কর বাড়িয়েছেন, এটা কি গণবিরোধী নয়?
মুহিতকে ‘গুণী মানুষ’ অভিহিত করে নিজের ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শব্দচয়ন বোঝার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর সেই অভিজ্ঞতার অভাবকে গুরুত্ব দেন রাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিজভী।
তিনি বলেন, যারা ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে এসেছেন, মানুষের পক্ষে-বিপক্ষে যেসব শব্দ, টার্ম এন্ড টার্মিওলোজি ব্যবহার করা হয়, তাদের জানার কথা। যেহেতু উনার (মুহিত) ক্যারিয়ারটাই হচ্ছে- আমলা ছিলেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, তারপরে ওখান থেকে মন্ত্রিত্ব করেছেন, তার প্রতিক্রিয়াশীল শব্দটা না জানাটা স্বাভাবিক।
এরশাদের সামরিক শাসনামলে মুহিতের বাজেট দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে রিজভী বলেন, উনি এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী একজনের উনি মন্ত্রী ছিলেন। আর ভোটারবিহীন সরকারের উনি একজন মন্ত্রী। উনি কখনোই কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রী হয়নি। সুতরাং উনার মাউন্ডসেটটি হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, যাদের আয় ১০ লক্ষ টাকা, তাদের ৩২ শতাংশ কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর যাদের আয় সাড়ে ৪৭ লক্ষ টাকা, তাদের ১৩ শতাংশ কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলতা, এটা সাধারণ মানুষের পক্ষে যায়নি, এটা গরিব মানুষের পক্ষে যায়নি, এটা খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে যায়নি। এটা লুটেরাদের পক্ষে গেছে।
বাজেটে ‘মিথ্যা’ পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে বেকারত্বের হার ৪ শতাংশ। অদ্ভুত ব্যাপার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উন্নত দেশগুলোতেই বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের মতো। দেশের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ২২ থেকে ২৪ শতাংশের মতো বেকারত্বের হার হতে পারে। সেটা কী করে অর্থমন্ত্রী ৪ শতাংশ বলতে পারেন?”
অপ্রদর্শিত আয়ের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো দিক-নির্দেশনা না থাকার বিষয়ে রিজভী বলেন, এই অপ্রদর্শিত আয় যে কালো টাকা বলছেন, সাদা করার ব্যাপারে কেন সুস্পষ্টভাবে কথা বলছেন না। উনি যে কত বড় প্রতিক্রিয়াশীল, এই ধরনের একটি অন্যায়-লুটেরাতন্ত্রকে উনি যে বৈধতা দিচ্ছেন, তা প্রমাণিত।
ইউপি নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনী এলাকাগুলো ‘এক উন্মুক্ত বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে যে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়, তা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের স্বরূপ, আগ্রাসী রূপ প্রকাশ পেয়েছে। তারা যে গোটা দেশকে আওয়ামী লীগের উপনিবেশে পরিণত করতে চাইছে, গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা তা তুলে ধরতে পেরেছি। আমরা জানতাম, এই নির্বাচনের পরিণতি কী হবে? তারপরও অংশগ্রহণ করেছি এজন্য যে এর মধ্যদিয়ে এই সরকারের বর্বরতা ও হিংস্রতার দিকগুলো মানুষের কাছে আরো ভয়াবহভাবে ফুটে উঠেছে।
রিজভী বলেন, ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকাগুলোকে এক উন্মুক্ত বধ্যভূমি ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যায়না। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের অবৈধ মুখম-লে গণতন্ত্রের লেবাস পরানোর দায়িত্ব নিতে গিয়েই কমিশনের পদাধিকারীরা ইউপি নির্বাচনকে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে শাসকদলের পক্ষে অনুষ্ঠিত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বিভিন্ন এলাকার নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে ভোট কেন্দ্র দখলের মহোৎসব হয়েছে। প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে সীল মারা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র যেতে পারেনি সাধারণ ভোটাররা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের নির্দেশে পুলিশ ও তার ক্যাডারবাহিনী ভোট উৎসবকে ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছে। ২০ ইউনিয়নের ২০টিই দখল করে নিয়েছে তারা।
এছাড়া বরিশাল, পিরোজপুর, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, শরীয়পুরের বিভিন্ন ইউনিয়নেও ভোট ডাকাতি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশীদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাপদক সানাউল্লাহ মিয়া, আবদুস সালাম আজাদ, আব্দুুল আউয়াল খান প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন