শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআনে পাঞ্জেগানা নামাজের ওয়াক্ত প্রসঙ্গে-২

খালেদ সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কোরআনে পাঞ্জেগানা নামাজের ওয়াক্ত প্রসঙ্গে আমরা আলোচনা করছিলাম। গত আলোচনায় আমরা একটি আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। আজ আরও দু’টি আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব।
২. সূর্য ঢলে যাবার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত (জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা) নামাজ কায়েম কর এবং আদায় কর ফজরের নামাজ। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজ ফেরেশতাদের উপস্থিতির সময়। (সূরা বনি ইসরাঈল আয়াত- ৭৮)

এ আয়াতেও পাঞ্জেগানা নামাজের উল্লেখ রয়েছে, বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থ হতে যা স্পষ্ট। উদাহরণ স্বরূপ তাফসিরে ‘মাআরেফুল কোরআনে’ এ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। তাতে বলা হয় : ‘পাঞ্জেগানা নামাজের নির্দেশ। অধিকাংশে তফসিরবিদের মতে এ আয়াতটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ। কেননা আয়াতটিতে ‘দুলুক’ শব্দের অর্থ আসলে ঝুকে পড়া। সূর্যের ঝুকে পড়া তখন শুরু হয়, যখন সূর্য পশ্চিমদিকে ঢলে পড়ে, সূর্যাস্তকেও দুলুক বলা যায়। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এ স্থলে শব্দের অর্থ সূর্যের ঢলে পড়াই নিয়েছেন’। (কুরতুবী, মাযহারী, ইবনে কাসীর)।

অতঃপর বলা হয়েছে: ‘ইলা গাসাকিল লাইল’- গাসাক শব্দের অর্থ রাত্রির অন্ধকার সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া। ইমাম মালেক হযরত ইবনে আব্বাস থেকে এ তফসীর বর্ণনা করেছেন। এর শাব্দিক অর্থের পর বলা হয়- এভাবে ‘লিদুলুকিশ শামছি ইলা গাসাকিল লাইল’ এর মধ্যে চারটি নামায এসে গেছে। যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। এদের মধ্যে দুই নামাজের প্রথম ওয়াক্ত ও বলে দেয়া হয়েছে যে, যোহরের প্রথম ওয়াক্ত সূর্য ঢলার সময় থেকে শুরু হয় এবং এশার সময় ‘গাসাকে লাইল’ অর্থাৎ অন্ধকার পূর্ণ হয়ে গেলে হয়। এ কারণেই ইমাম আযম আবু হানিফা (রা.) সে সময় কে এশার ওয়াক্ত সাব্যস্ত করেছেন। যখন সূর্যাস্তের লাল আভার পর সাদা আভাও অস্তমিত হয়।

এটা সবারই জানা যে, সূর্যাস্তের পর পর পশ্চিম দিগন্তে লাল আভা দেখা দেয়। এর পর এক প্রকার সাদা আভা দিগন্তে ছড়িয়ে থাকে। এর পর এই সাদা আভাও অস্তমিত হয়ে যায়। বলাবাহুল্য, দিগন্তের আভা শেষ হয়ে গেলেই রাত্রির অন্ধাকার পূর্ণতা লাভ করে। এই আয়াতের এই শব্দের মধ্যে ইমাম আবু হানিফার মাযহাবের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। অন্য ইমামগণ লাল আভা অস্তমিত হওয়াকে এশার ওয়াক্তের শুরু সাবস্ত করেছেন এবং একই ‘গাসাকুল লাইল’-এর তাফসির ঠিক করেছেন।

আয়াতের উদ্ধৃতাংশে চার ওয়াক্ত নামাজের বর্ণনা পাওয়া যায়। আয়াতের পরবর্তী অংশে বাকি এক ওয়াক্তের উল্লেখ রয়েছে। তার ব্যাখ্যাও একই তাফসিরে এইভাবে প্রদান করা হয়েছে : ‘ওয়া কোরআনাল ফাজরি’- এখানে কোরআন শব্দ বলে নামাজ বোঝানো হয়েছে। কেননা কোরআন নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইবনে কাসীর, কুবতুবী, মাযহারী প্রমুখ অধিকাংশ তাফসিরবিদ এ অর্থই লিখেছেন। কাজেই আয়াতের অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ‘লিদুলুকিশ শামছি ইলা গাসাকিল লাইল’ বাক্যে চার নামাজের পর বর্ণনা ছিল এবং এতে পঞ্চম নামাজের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। একে আলাদা করে বর্ণনা করার মধ্যে এই নামাজের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযিলতের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে (আয়াত-৭৮৬ বাংলা সংস্করণ)। বর্ণিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নাম উল্লেখ্য। এ নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

৩. তেমনি আয়াতে মধ্যবর্তী নামাজ ছালাতুল ওস্তা বলে আসরের নামাজকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষের কর্মব্যস্ততার সময় হওয়ায় এ নামাজ না পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট আয়াতে আসরের নামাজের প্রতি অন্যান্য নামাজের ন্যায় বিশেষ যত্মবান হবার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। আয়তটি হচ্ছে-‘হাফেযু আলাছ ছালাওয়াতি ওয়াছ ছালাতিল ওস্তা। ওয়াকুমু লিল্লাহি কানেতিন’। -(সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩৮) অর্থাৎ ‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্মবান হবে বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্য দন্ডায়মান হও’।
কোনো কোনো তরজমা এরূপ : তোমরা নামাজসমূহ ও মধ্যবর্তী নামাজকে সংরক্ষণ কর এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্য দন্ডায়মান হও। ছালাতুল ওস্তা বা মধ্যবর্তী নামাজ এটি কোনো সময়ের নামাজ, তা নিয়ে মতভেদ আছে, অধিকাংশের মতে আসরের নামাজকেই মধ্যবর্তী বলা হয়ে থাকে। (বোখারী ও মুসলিম)।

ইমামগণের মধ্যে হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং অধিকাংশ সাহাবী-এর মাজহাব এটা যে, এর দ্বারা আসরের নামাজ বুঝানো হয়েছে, হাদীসসমূহ এর প্রমাণ বহন করে। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে ও একই মত বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতে আসরের নামাজের বর্ণনা সরাসরি এবং স্পষ্টভাবে রয়েছে। পূর্বে সূরা হুদ ও সূরা বনি ইসরাইলে পাঞ্জেগানা নামাজের প্রত্যক্ষ বিবরণ ও রয়েছে। অতএব, বিনাদ্বিধায় বলা যায় যে, কোরআনে যেমন নামাজের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তেমনি পাঞ্জেগানা নামাজের ওয়াক্তের বিবরণও প্রদত্ত হয়েছে। কাজেই এই ব্যাপারে আর কোনো সংশয় সন্দেহের অবকাশ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মনির হাসান ১৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মাগরিবেরসময় হলো- যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশের লালিমা অদৃশ্যহয়ে যায়। ইশার সময় হলো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের সময় প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আরসূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।” [মুসলিম ৬১২
Total Reply(0)
সাখাওয়াত হোসেন উজ্জ্বল ১৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার যাবতীয় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থেকে যথাসময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
জান্নাতুল নাঈম মনি ১৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
একই ওয়াক্তে পাঁচটি নামায আদায় করা ফরয করা হলে বান্দার মাঝে ক্লান্তি ও বিরক্তিবোধ উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক ছিল। তাই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাঁচটি সালাত আদায় করা ফরয করা হয়েছে- যেন বান্দার মাঝে অবসন্নতা ও বিরক্তিবোধ না আসে।
Total Reply(0)
Mirza Anik Hasan ১৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
আসলেই পবিত্র কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা সময়গুলো সুস্পষ্ট করে দিয়ে বলেন- সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবিহ আদায় কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা) উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে। আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।' (সুরা রূম : আয়াত ১৭-১৮)
Total Reply(0)
Rubel Ahmed ১৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
নামাজের এ ওয়াক্তগুলো পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। কোন কোন সময় এ নামাজ আদায় করতে হবে তারও নির্দেশ এসেছে কুরআনে।
Total Reply(0)
মেহেদী হাসান ১৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের উপর দিবানিশি মোট ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। সাথে সাথে এগুলো আদায়ের জন্য তাঁর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী পাঁচটি সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে করে বান্দাহ্‌ এ সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে তার প্রতিপালকের সাথে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন