শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

সেই স্টোকসই এখন বীর

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

এরচেয়ে বেশি আর কি হতে পারত একটা ফাইনাল ম্যাচে? লন্ডন শহরেই রোববার উইম্বলডন ফাইনালে লড়ছিলেন রজার ফেদেরার আর নোভাক জোকভিচ। সিলভারস্টোনে চলছিল ফরমুলা ওয়ান রেস। গতিময় লন্ডনবাসীর ওসবই পছন্দ বেশি। কিন্তু না। ১৪ জুলাই, রোববার। ২০১৯ সালের এই দিনটা ক্রিকেট খেলাটার জন্যও তো গৌরবের।

বাকি সব কিছুকে ছাপিয়ে ক্রিকেটও যে উত্তেজনায়, রোমাঞ্চে শ্রেষ্ঠ হতে পারে তা দেখে গেছে লর্ডসের ভরপুর গ্যালারিতে, দেখা গেছে ট্রাফালগার স্কয়ারের জনসমুদ্রে। বাইশ গজে ঘুম পাড়ানি খেলা বলে যার বদনাম গতিময় দুনিয়ায়, তা ঘুচিয়েছেন বেন স্টোকস, জস বাটলার। লুকি ফার্গুসেন, জিমি নিশামরা দেখিয়েছেন, টানা নয় ঘন্টাও উত্তেজনায় টইটুম্বুর করে মাতিয়ে রাখা যেতে পারে। ক্রিকেট খেলাটা এমনই অবিশ্বাস্য সুন্দর। কেন উইলিয়ামস দেখিয়েছেন, উত্তেজনার চড়া পারদের মাঝেও কেমন ঠান্ডা মাথায় কঠিন হিসেব নিকেশও করতে হয় এই খেলায়, হতে হয় কতটা ম্যাথমেটিক্যাল। এমন একটা ম্যাচে আপনি চাইলে তাই গণিত পাবেন, পাবেন শিল্প এমনকি উঠানামার ¯্রােতের মাপে পাবেন সাহিত্যের রসদও।

গত বছর ব্রিস্টলে গভীর রাতে মারামারির ঘটনায় থমকে যেতে বসেছিল তার ক্যারিয়ার। কঠিন সেই সময় পেছনে ফেলে গতপরশু তিনি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। স্টোকস অবশ্য কৃতিত্ব দিয়েছেন পুরো দলকে, ‘আমি আসলে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার মনে হয় না, এই ম্যাচের মতো আর কোনো ম্যাচ ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো দিন হবে। জস (বাটলার) আর আমি জানতাম, যদি আমরা শেষ পর্যন্ত থাকি নিউজিল্যান্ড চাপে পড়ে যাবে। আমি যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে শেষ করতে পারিনি।.. জফরা আর্চার নিজের সামর্থ্য ক্রিকেট বিশ্বকে দেখিয়েছে।’

স্টোকসের বাবা জেরার্ড জেদ জেমস স্টোকস ছিলেন নিউজিল্যান্ড রাগবী দলের খেলোয়াড়। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি নিউজিল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ক্রাইস্টচার্চে জন্ম নিয়ে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত স্টোকসও ছিলেন নিউজিল্যান্ডে। পরে বাবা-মার সঙ্গেই চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। এখানেই ক্লাব পর্যায়ে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেরও শুরু। ২০১৩ সালে স্টোকসের বাবা-মা নিউজিল্যান্ড ফিরে গেলেও স্টোকস হয়ে যান ব্রিটিশ। ভীষণ কঠিন উইকেটে ২৪২ রান তাড়ায় ৯৮ বলে করেন ৮৬ রান। অনুমিতভাবেই হন ম্যাচ সেরা।

তবে এত দূর কি আসা হতো স্টোকসের। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল। সেদিন কলকাতা ইডেন গার্ডেনেই তো ক্যারিয়ারের ইতি হয়ে যেতে পারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ বলে চাই ১৯। স্টোকস কিনা সেদিন কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের হাতে প্রথম ৪ বলেই খেলেন ৪ ছক্কা। কিন্তু অমন মার খাওয়ার, ম্যাচ খুইয়ে দেওয়ার ট্রমা বেশিদিন থাকেনি। ইংলিশ অধিনায়কের ধারণা তার জায়গায় অন্য কেউ হলে থেমে যেতে পারত ক্যারিয়ার, স্টোকস বিশেষ কেউ বলেই ফিরে এসেছেন এবং বিশ্বজয় করেছেন, ‘বেনের কথা অনেকবারই আমি বলছি। সেদিন কলকাতায় যা হয়েছিল ওখানে অন্য কেউ থাকলে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেত। আমরা জানিয় অনেকবারই সে আমাদের একা টেনেছে। ও অবিশ্বাস্য এক ক্রিকেটার। এমন খেলার জন্য আমি ধন্যবাদ দিতে চাই তাকে।’
শুধু ফাইনালেই নয়, টুর্নামেন্ট জুড়েই স্টোকস ছিলেন ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল। ৬৬.৪২ গড়ে রান করেছেন ৪৬৫, উইকেট নিয়েছেন ৭টি। ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর স্টোকস ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হলেও বিস্ময়কর কিছু হতো না। অথচ এই বিশ্বকাপের সময় তিনি থাকতে পারতেন জেলে। কিংবা দলের বাইরে। ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সময় ব্রিস্টলে নাইটক্লাবের বাইরে মারামারির ঘটনা গ্রেপ্তার করা হয় তাকে সতীর্থ অ্যালেক্স হেলসসহ। এরপর থানা-পুলিশ, আদালতে ছুটোছুটি করতে হয়েছে। দলে জায়গা হারিয়েছেন। নিষিদ্ধ হয়েছেন। পেতে হয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি। ক্যারিয়ারই এক সময় মনে হচ্ছিল অনিশ্চিত।

তার প্রতিভা, তার ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতার কারণেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে বারবার। তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আরও বড় আসরের ফাইনালে দলের জয়ের নায়ক হতে যে মানসিক শক্তি লাগে, সেটি মনে করিয়ে দলেন মরগ্যান, ‘বেনকে নিয়ে এটি আমি অনেকবারই বলেছি। কলকাতায় যা হয়েছিল, এরকম কিছু হলে অনেকের ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যায়। বেন সেখানে অসংখ্যবার দাঁড়িয়ে গেছে দলের প্রয়োজনে। ট্রেনিংয়ে সে সামনে থাকে, টিম মিটিংয়েও অগ্রনী থাকে। অবিশ্বাস্য এক ক্রিকেটার সে। আজকে ওর দারুণ একটি দিন ছিল, ওর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
ফাইনালের আগের দিন স্টোকসের বাবা বলেছিলেন, ছেলে নয় নিজের দেশকেই সমর্থন দেবেন তিনি। দারুণ ছন্দে থাকা অলরাউন্ডারের মা বলেছিলেন, যে দলই জিতুক, তারাই জয়ী। ফাইনালও হলো তেমনি। লর্ডসে হারেনি কেউ। জিতেছে ক্রিকেট, সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল স্টোকস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Asif Iqbal ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
Stokes looks to be a pretty humble guy..... Other than he wouldn't acknowledge it...
Total Reply(0)
Shamaun Iqbal Shamun ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
এগুলো হচ্ছে লোক দেখানো ভদ্রতা! সোজা বাংলায় ভণ্ডামি! এর আগে প্রকৃত ভদ্রলোকদেরকে আম্পায়ারের চোখ এড়িয়ে গেলেও আউট মেনে ক্রিজ ছেড়ে নিজের থেকেই বেড়িয়ে যেতে দেখেছি! স্টোকসরা খেলার সময়ই যদি রান গ্রহণে অস্বীকার করতো তাহলেই এই অনুশোচনার গ্রহণযোগ্যতা থাকতো এবং ক্রিকেটের জনকদের আজীবন একটি কলঙ্কিত ট্রফির বোঝা বয়ে বেড়াতে হতো না!
Total Reply(0)
Jia Al Hassan ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট টিমকে ভদ্র টিমই বলা যায়। ইন্ডিয়া যদি, এই সমীকরনে ( সুপার ওভার) হারত, তবে, পুরা স্টেডিয়াম মারামারি করত এবং খেলা ২য় বার খেলতই।
Total Reply(0)
রহস্যময় পৃথিবী ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
যা হবার তা হয়েগেছে মাফ চেয়ে আর কি হবে। কাপ টা নিউজিল্যান্ডের প্রাপ্য ছিলো।
Total Reply(0)
Mj Alam ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
এই ট্রফি টা লজ্জার ট্রফি | এই ভাবে winer ঠিক না করে যুগ্ম ভাবে ওয়ার্ল্ড কাপ winer ঘোষণা করা উচিত ছিল | নিউজিল্যান্ড এর সমান অধিকার আছে এই ওয়ার্ল্ড কাপ টা তে |
Total Reply(0)
AB Rahman ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
সত্যি বলতে নিউজিল্যান্ডের সাথে অন্যায় করা হয়েছে। নিয়মের বাইরেও ব্যাক্তিত্ব বা খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব থাকে যা বৃটিশরা হারিয়েছে। সব জয়ে বিজয়ী হওয়া যায়না। সবদিক থেকে নিউজিল্যান্ড সত্যিকারের #চ্যাম্পিয়ন
Total Reply(0)
Sushanta Paul ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
এটাই একজন প্রকৃত খেলোয়াড়ের মানসিকতা হওয়া উচিৎ। ধন্যবাদ স্টোকস কে।
Total Reply(0)
Merajul Islam ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
কোটি কোটি দর্শক সাক্ষী জয়ী কে হয়েছে। আর যে নিয়ম মানা হয়না সেটা রাখার কি দরকার। কেন উইলিয়ামসন ভদ্র বলে কিছু বলনি কোহলি হলে মাঠে যুদ্ধ লেগে যেত।
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪০ এএম says : 0
সমগ্র বিশ্বের আড়াই শত কোটি ক্রিকেট অনুরাগী মানুষ জমজমাট রুপকতার ফাইনাল খেলা উপভোগ করলো। ইংল্যাণ্ডের জাতীয় বীর স্টোকস স্বরনীয় দায়িত্বশীল ইনিংসে বিশ্ব ক্রিকেটের জম্নদাতার ঘরে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রপি অভিনন্দন। এই ফাইনালে নিউজিল্যান্ড হারেনী। বিজয় হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের এবং ক্রিকেট অনুরাগী মানুষের। ইংল্যাণ্ডের ক্রিকেট প্রিয় মানুষের। স্বপ্নের ফাইনালে রোমান্স ছিল প্রতিটি বলে। ভাগ্য ছিল ইংরিশ দের পক্ষে।। তাইতো আব্দুল রশিদ বলেছেন ম্যাচ চলা কালিন কেপ্টেন মরগ্যান কে আল্লাহ আমাদের সহায় আমরা ম্যাচ জিতবো। আবারো ইংল্যাণ্ড কে অভিনন্দন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন