শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খাদ্য সঙ্কটে বানভাসিরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশের বন্যাকবলিত ৩০ জেলার মধ্যে ২০ জেলার দুর্গত বানভাসি মানুষের জন্য ২১ হাজার ৭০০ মে: টন চাল, ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং ৮০ হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এখনো দশ জেলার বন্যাকবলিত বানভাসি মানুষ খাদ্যসঙ্কটে রয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। টানা চতুর্থ দিনের মতো ৩০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এসব বন্যাকবলিত এলাকা মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং হরিগঞ্জ এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এবং ত্রাণ সচিব শাহ কামাল। এছাড়া গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিহাট এবং কুড়িগামে গেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। আগামী ১৯ ও ২০ তারিখে গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিহাট এবং কুড়িগামে যাচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এবং ত্রাণ সচিব শাহ কামাল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, বন্যাকবলিত ২০ জেলার দুর্গত বানভাসি মানুষের জন্য ২১ হাজার ৭০০ মে: টন চাল, ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং ৮০ হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে যে দশটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে সেগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হবে। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমাদের ত্রাণ পাবেন দরিদ্র পরিবার, দিনমজুর, এবং শ্রমিক শ্রেণীর মানুষগুলো। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে।

এদিকে- তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যুমনা এবং কুশিয়ারা, মনু ও ধলাই নদীর পানি বাড়ার ফলে নতুন করে গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে হাওরপাড় ও তার আশপাশের এলাকা। ইতিমধ্যে ৩০ জেলার কয়েক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। বন্যা পানি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন জেলায় তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ১৫ হাজার পুকুরের মাছ। দ্রæত পানি না নামলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলছেন চাষিরা। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে চেষ্টা চালাচ্ছে কৃষিবিভাগ।

এসব অঞ্চলের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রতিবছরই তারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁদের সবার অবস্থা করুণ। বেশির ভাগ ঘরের ধান-চাল, মাঠের ফসলসহ আসবাব পানির স্রোতে ভেসে গেছে। দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা। এখনো দুর্গত বেশির ভাগ এলাকায় পৌঁছায়নি ত্রাণসামগ্রী। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় অনেক দুর্গত মানুষ রাস্তা, সেতু ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছেন।

সুরমা ও কুশিয়ারা বাদে গতকাল সোমবার দেশের সব নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এ পর্যন্ত ২০টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যা বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতিকে আগাম ও মাঝারি মাত্রার বন্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। আগামী সপ্তাহ নাগাদ বন্যা কিছুটা কমে গিয়ে আগস্টের শেষভাগে আরো বড় আকারে ফিরে আসতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। যদিও আপাতত রাজধানী ঢাকায় বন্যার ঝুঁকি কম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিভাগের পদ্মাতীরবর্তী কয়েকটি জেলায় বন্যার প্রভাব পড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার বহু সড়ক। পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় বিশেষ করে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে টানা বৃষ্টিতে সড়ক ও পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। পানি না কমলে সড়কগুলো মেরামত করাও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।
পানিতে ড্বু আছে কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার শত শত কাঁচা-পাকা সড়ক। চরাঞ্চল থেকে জেলা-উপজেলায় যেতে দুর্ভোগে পড়ছেন বাসিন্দারা। সড়ক বিভাগ বলছে, যান চলাচল চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রংপুর ও লালমনিরহাটে বন্যাকবলিত এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে যান চলাচল। প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতে নেয়া হচ্ছে পদক্ষেপ। সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত ৫ উপজেলার ৮৫ শতাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরে প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রæত সম্ভব এসব সড়ক মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও ঢলে পাহাড় ও সড়ক ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। রাঙামাটি-বান্দরবান, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে এখন শুধুমাত্র হালকা যান চলছে।

খাগড়াছড়িতে ৫ দিনের ব্যবধানে দীঘিনালা-লংগদু সড়কে দুই বার পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির মহালছড়ি সড়কটি একসপ্তাহ ধরে পানি নিমজ্জিত।
খাগড়াছড়ি- চট্টগ্রাম সড়কের সাপমারা এলাকায় মাটি সরে গিয়ে বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। পাহাড়ধস রোধে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলছে সড়ক বিভাগ। বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের প্রধান সড়কটিও পানিতে তলিয়ে আছে। তবে পানি নামতে থাকায় শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোর সড়ক স্বাভাবিক হতে শুরু হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন জেলায় তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ১৫ হাজার পুকুরের মাছ। দ্রæত পানি না নামলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলছেন চাষীরা। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে চেষ্টা চালাচ্ছে কৃষিবিভাগ।

সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক সফর উদ্দিন বলেন, ২ দিনের মধ্যে কমলে আউশটা বাঁচানো যেতো। মৌলভীবাজার সদর ও কমলগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়েছে আউশের ক্ষেত ও বীজতলা। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা কৃষকের। কুড়িগ্রামে ভ‚ট্টা, কলা, পাট ও মরিচ চাষীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষকদের পরামর্শ দিতে ছুটি বাতিল করা হয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মর্কাতাদের ছুটি বাতিল করেছে।

এ বিষয়ে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি হিসাবে ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। একসঙ্গে সবাইকে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে প্রতিদিন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলছে। যেসব এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি, সেখানে দ্রæত ত্রাণ পাঠানো হবে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর বাঁধের পূর্বদিঘিরপাড় এলাকায় ১৫০ মিটার বাধ বিলিন হয়ে গেছে। ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, সোমেশ্বরী নদীর পানির প্রবল তোড়ে নয়াপাড়া, দাড়িয়ারপাড়, কান্দুলী, মাঝাপাড়া ও বাগেরভিটা গ্রামের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন