বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভিনগ্রহের প্রাণী দেখতে আমেরিকায় ফেসবুক ইভেন্ট: সতর্ক করে দিয়েছে সামরিক বাহিনী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৯, ৭:০২ পিএম

এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন এলিয়েন বলে যদি কোন কিছুর খোঁজ পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও এলিয়েন বলে নিশ্চয়ই কিছু আছে, আবার কেউ বলেছেন, এই দাবি একেবারেই অবাস্তব।

এরকম কল্পকাহিনী নিয়ে অনেক সাহিত্য ও চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু ভিনগ্রহ থেকে আসা এরকম কোন প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নি আজ পর্যন্ত।

কিন্তু অনেকেই আছেন যারা বিশ্বাস করেন এলিয়েনের অস্তিত্বের কথা। শুধু তাই নয়, তারা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই এরকম কিছু এলিয়েন কোনএক সময় নেমে এসেছিল এবং সরকার তাদেরকে নেভাডার এরিয়া ৫১ নামের প্রত্যন্ত একটি এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে।

এই ধারণায় বিশ্বাসীদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে এবং এলিয়েন দেখার আশায় তারা এখন সেখানে যাওয়ারও পরিকল্পনা করছে।

ঘটনাটি শুরু হয় কৌতুকের মাধ্যমে। এলিয়েন দেখার জন্যে নেভাডার প্রত্যন্ত ওই এলাকাটিতে যাওয়ার একটি ইভেন্টেও খোলা হয় ফেসবুকে।

ইভেন্টের নাম দেওয়া হয়: স্টর্ম এরিয়া ৫১, দে ক্যান্ট স্টপ অল অফ আস। অর্থাৎ চলো যাই এরিয়া ৫১, তারা আমাদের সবাইকে থামাতে পারবে না।

গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০শে সেপ্টেম্বরের এই ইভেন্টে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ সাইন-আপ করেছে। এছাড়াও 'আগ্রহী' হিসেবে মার্ক করেছে আরো ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।

এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে কেউ যে এরিয়া ৫১ এর ধারে-কাছেও না যায়।

নেভাডার এই এলাকাটি বিমান বাহিনীর অত্যন্ত গোপনীয় একটি ঘাঁটি কিন্তু ইভেন্টে সই করা বহু মানুষ বিশ্বাস করে সেখানে ভিনগ্রহ থেকে আসা প্রাণীদের রাখা হয়েছে।

বিমান বাহিনীর সতর্কতাকে পাত্তা দিচ্ছে না অনেক উৎসাহী ব্যক্তি। হাজার হাজার মানুষ সেখানে মন্তব্য করেছেন এরকম: "আমরা তাদের বুলেটের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটতে পারি। এলিয়েনদের দেখতে দাও।"

বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রকে বলেছেন, তারা এই ইভেন্ট হতে দেবেন না। তিনি বলেন, "আমরা আমেরিকা ও তার সম্পদ রক্ষার জন্যে প্রস্তুত।"

ফেসবুকে এই ইভেন্টের একজন আয়োজনকারী জ্যাকসন বার্নেস ইভেন্ট পাতায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, "এটা একটা কৌতুক। এই পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুনোর কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই।"

"আমি শুধু ভেবেছি এটা খুব মজার বিষয় হবে। এখন লোকজন যদি সত্যিই এরিয়া ৫১-তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমি এর জন্যে দায়ী হবো না।"

কিন্তু বিমান বাহিনী এরকম একটি ইভেন্টকে এখন আর "মজার বিষয়" হিসেবে নিচ্ছে না।

"এরিয়া ৫১ হচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ রেঞ্জ। আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর লোকজনকে যেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এরকম একটি জায়গায় আসার ব্যাপারে আমরা লোকজনকে নিরুৎসাহিত করছি," বলেন বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র।

নেভাডার এই এরিয়া ৫১ সম্পর্কে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি। এর আগে এই এলাকাটিকে গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইউ-টু নামের একটি গোয়েন্দা বিমানের ব্যাপারে গোপন তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ প্রথমবারের মতো এরিয়া ৫১-এর কথা স্বীকার করে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই এলাকাটিকে ঘিরে এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় সেকারণেই সেখানে এলিয়েন লুকিয়ে রাখার মতো "ষড়যন্ত্র তত্ত্বের" জন্ম হয়েছে।

এই তত্ত্বকে ঘিরে গুজবের ডালপালা এতোই বিস্তৃত হয়েছে যে অনেকেই মনে করেন যারা এই ইভেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখছে।

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্বাসীদের অনেকে মনে করেন এলিয়েনের জীবন ও ইউএফও সম্পর্কে মার্কিন সরকারের কাছে অনেক তথ্য আছে কিন্তু সেগুলো তারা জনগণের কাছে গোপন রেখেছে।

তারা বিশ্বাস করে, পৃথিবীতে নেমে আসা এরকম কিছু এলিয়েনকে আটক করে কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এরকম ধারণা সবসময়ই অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

এরিয়া ৫১-তে কাজ করেছেন এরকম এক ব্যক্তি বব লাজার ১৯৮৯ সালে টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যখন এরকম কিছু দাবি করেন তখনই এই "ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" তীব্র হতে শুরু করে।

সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে তার উপর একটি তথ্যচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে যাকে কেন্দ্র করে লোকজনের মধ্যে এলিয়েনের ব্যাপারে আবারও আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

মি. লাজার যেসব দাবি করেছেন সেবিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেন নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন