শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকার উন্নয়নের ফাঁপড়বাজি করে জনগণকে ধোকা দিচ্ছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:৩৯ পিএম

বর্তমান সরকার তথাকথিত উন্নয়নের ফাঁপড়বাজির মাধ্যমে সাধারণ জনগনকে ধোকা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই সরকার জোর করে ক্ষমতার মসনদ দখল করে স্বৈরশাসন চালাচ্ছে। রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গোষ্ঠীশাসনতন্ত্র বা অলিগোর্কি। সরকারের রথী-মহারথীরা গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়ার নামে সব সামাজিক চুক্তি ভঙ্গ করে জনগণকে শৃঙ্খলিত করেছে। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের নামে চলছে বল্গাহীন লুণ্ঠন। প্রায় আড়াই কোটি মানুষ তিনবেলা পেটভরে খেতে না পরলেও এই মিডনাইট সরকার উন্নয়নের দোহায় দিয়ে গরীবের পেটে লাথি মারতেই গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মিডনাইট নির্বাচনকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো এই উন্নয়ন হলো ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আর তাদের সহযোগিতাকারীদের পকেটের উন্নয়ন। আর নিরন্ন মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর উন্নয়ন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফ এ ও), শিশু তহবিল ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিও এইচ ও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আই এফ এ ডি) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উদ্যোগে ‘বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বাস্তবতা ২০১৯’ শিরোনামে যৌথভাবে প্রণীত নতুন প্রতিবেদনে বলেছে, ”বাংলাদেশে ২ কোটি ৪২ লাখ মানুষ ভালোভাবে খেতে পায় না। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে বাংলাদেশে প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। গত এক দশকে এদেশে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ বেড়েছে।” আর প্রধানমন্ত্রী বলে আসছেন, ‘দেশে কোনো হাহাকার নেই, অভুক্ত মানুষ নেই।’ জনগণের টুঁটি চেপে ধরা এই সরকারের চাপাবাজ মন্ত্রীরা বলছেন, বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নে সিঙ্গাপুর, কানাডা এবং ইউরোপের মতো উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত মে মাসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ‘ডাষ্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে এক মধ্যবয়সী মহিলা’ এ খবরে হইচই পড়ে যায়। ঝিনাইদহে প্রধান রাস্তার পাশে ডাষ্টবিন। সেখানে সবাই ফেলে গেছেন পচা খাবার, ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধে ডাষ্টবিনের পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। সকাল বেলা বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে ডাষ্টবিনে ফেলে যান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বিকেল পর্যন্ত এসব ময়লা-আবর্জনা পচে যায়। তবে পচে যাওয়া এসব ময়লা-আবর্জনার দিকে নজর পড়েছে এক নারীর। দৌড়ে গিয়ে ডাষ্টবিন থেকে এসব পচা খাবার তুলে খেতে শুরু করলেন তিনি। ডাষ্টবিনের পচা এসব খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছেন ওই নারী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় আস-সুন্নাহ ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠানের সামনের পৌর ডাষ্টবিনের সামনে এই চিত্র দেখা যায়। ডাষ্টবিনের দুর্গন্ধে সবার যখন দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা তখন সেখানেই বসে পচা খাবার খাচ্ছেন ওই নারী। ডাষ্টবিন থেকে ভাত খাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে লজ্জা পেয়ে দাঁড়িয়ে যান ওই নারী। সেই সঙ্গে বিরক্তিও প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে আশপাশে না তাকিয়ে খাবার শেষ করে চলে যেতে শুরু করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দ্রুত হেঁটে চলে যান। এমন ঘটনা রাজধানীসহ সারাদেশে এখন বিদ্যমান।
রিজভী বলেন, প্রবাদ আছে-মিথ্যা বলা মহাপাপ, আর এখন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সত্য বলা মহাভয়। মিথ্যা বলা যদি কোন ‘শিল্প’ হতো তাহলে অনর্গল মিথ্যা বলা এই সরকারের মন্ত্রী-নেতারা হতেন সেই শিল্পের নায়ক-মহানায়ক। এরা তাদের রাজনৈতিক পাঠশালায় সত্য কথা বলার শিক্ষা অর্জন করেননি। জাতিসংঘের ‘বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বাস্তবতা ২০১৯’ প্রতিবেদন হলো চাপাবাজ সরকারের ‘উন্নয়নের বিহাইন্ড দ্যা সিন’। রাষ্ট্রকে ধনীর তোষনে পরিণত করা হচ্ছে আর তার জনগণকে ভাতের মাড় খাওয়ানো হচ্ছে। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮-তে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের হিলটন হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রবাসীদের দেওয়া এক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি নাকি দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াচ্ছেন। তাহলে এই হলো তার খাওয়ানোর নমুনা !
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা করছে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন, আর বলে বেড়াচ্ছে সেটাই নাকি জনগণের উন্নয়ন। গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে মিথ্যা উন্নয়নের প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। জনগণের টাকায় পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশন করমচা আর লেবুর বাম্পার ফলন নিয়ে ব্যস্ত। এদেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের ঘরে খাদ্য নাই, অথচ সরকারের লোকজন ১ টাকার কাজ ১০ টাকায় দেখিয়ে ডিজিটাল লুটপাট করে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বাংলাদেশের ১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং ১ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় চীন, ভারত ও যুক্তরাজ্যের চেয়ে বহুগুন বেশি। নানা অজুহাতে মেগা প্রজেক্টগুলোর প্রকল্প ব্যয় কয়েকশ গুন বৃদ্ধি করে মেগা চুরির সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। আর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রায় সবগুলো ফ্লাইওভারের প্রকল্প ব্যয় এভাবে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেগা চুরির সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণে বেশি আগ্রহী। আর এটাকে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন বলে চালানো হচ্ছে। উন্নয়নের নামে চুরির রোল মডেল হচ্ছে বর্তমান আওয়ামী সরকার।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিনা নির্বাচনে শুধু লুটপাটের জন্য ক্ষমতায় থাকা এই অবৈধ সরকারের গত দশ বছরে ধনী আরও ধনী, গরীব আরও গরীব হয়েছে। নজীরবিহীন দলীয়করণ, প্রশাসন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু করেছে। জবাবদিহিতার অভাব, অকার্যকর পালার্মেন্ট দুর্নীতিকে লাগামহীন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ধ্বংসের মুখে। শেয়ার মার্কেট লুট, ব্যাংক লুট, দলীয় ব্যক্তিদের জন্য ঋণ সুবিধা ও ফেরত না দেবার প্রবনতা একনায়ক সরকারের সমর্থক ও তল্পীবাহকদের বা লাগামহীনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও গণলুট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভেতরে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য করে ফেলছে। বার বার জিডিপি হিসেবের বিভ্রাটে ফেলা হচ্ছে জাতিকে। সরকারের জিডিপি’র হিসাব ডাহা মিথ্যাচারের একটি নমূনা।
বিগত দিনে বিএনপি শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এদেশের জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তাঁর সহধর্মিনী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সূবর্ণ শাসন আমলের কথা। এখনও যে প্রবাদটি চালু আছে তা’হলো জিয়ার আমলে মানুষ দরজা খুলে ঘুমাতে পারতো, আর এখন দুস্কৃতিকারীরা ঘরের ভিতর ঢুকে মানুষ খুন করছে। বিএনপি শাসনামলের ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে গোল্ডম্যান স্যাকস বাংলাদেশকে ‘নেক্সট ইলেভেন’ উন্নয়নশীল দেশভুক্ত করেছে, আর বিশ্বখ্যাত বিদেশী পত্রিকা বাংলাদেশকে ইমার্জিং টাইগার আখ্যা দিয়েছিল। সাম্প্রতিককালের মিডিয়াতে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জিডিপির হিসেবের যে ইংগিত দিয়েছে তা সরকারের দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শুভংকরের ফাঁকি হলো আয় বৈষম্য বেড়েই চলেছে। উন্নয়নের সুফল সরকারের কিছু অনুগ্রহপুষ্ট ব্যক্তিদের কাছে কুক্ষিগত হচ্ছে। দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তের অবস্থা আরো শোচনীয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে উন্নয়নের নামে বর্তমান সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। দেশে খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ মহামারি আকারে বেড়েই চলছে। ২২ জেলায় বন্যায় অসহায় অভুক্ত মানুষকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে না।
খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতা নিরুপদ্রব রাখতে চার বারের নির্বাচিত জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে গত দেড় বছর। গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীকে জামিনে বাধা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। গত পরশু দিন গুরুত্বপূর্ণ একজন আওয়ামী নেতা হানিফ সাহেব বলেছেন-বিএনপি আন্দোলন করে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে পারবে না। এই কথায় প্রমানিত হলো যে, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার কারণেই বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। এদেশের মুক্তিকামী জনগণের আশাস্থল দেশনায়ক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে সাজানো মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণতন্ত্রের অভাবে শাসন কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বাস্তবে জনগণের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, উন্নয়ন প্রপাগান্ডার ঢোল বাজানো বন্ধ করুন। দেশের দরিদ্র মানুষকে নিয়ে তামাশা করবেন না। দ্রুত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন