বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

শজনের পুষ্টিগুণ

ডা: মাও: লোকমান হেকিম | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ৮:৩৭ পিএম

 

শজনে একটি অতি সাধারণ সবজি। গ্রামগঞ্জে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে রাস্তার পাশে শজনের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কারণ, এ গাছ লাগাতে হয় না। কোনো পরিচর্যার দরকার নেই। ডাল কেটে পুঁতে দিলেই গাছ হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ফুল আসে। বৈশাখ মাসে শজনে বাজারে পাওয়া যায়। শহরে দুর্মূল্য হলেও গ্রামে সস্তায় শজনে পাওয়া যায়। শজনে কোনো কোনো অঞ্চলে খাড়া বলে পরিচিত। শজনে গাছের ছাল, পাতা ও ফুল সবই উপকারী। শজনে কচি থাকতে রান্না করলে সুস্বাদু হয়। ভেতরের বীজ বড় ও শক্ত হলে ভালো লাগে না। আয়ুর্বেদি মতে, শজনে লঘু পাক। তাই তাড়াতাড়ি হজম হয়। খিদে বাড়ায়। বল ও বীর্যবর্ধক। পেটের পীড়ায় উপকারী। বাত ও শ্লেষ্মা সারায়। চোখের জন্যও উপকারী। গোদ ও গলগÐের জন্য ভালো। পেটে গ্যাস উৎপন্ন রোধ করে। জলবসন্ত প্রতিরোধক। শরীরের স্বাভাবিক ব্যথানাশক। মেদ গলায়। কুষ্ঠ ও ক্ষয়রোগে উপকারী। পেটের কৃমি বের করে দেয়।
শজনে দুই প্রকারের-লাল ও সবুজ। আমাদের দেশে লাল শজনে দেখা যায় না। সর্বত্র সবুজ শজনের গাছ দেখা যায়।
পুষ্টিগুণ: খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ যথাক্রমে: জলীয় অংশ ডাঁটায় (ফলে) ৮৩.৩ গ্রাম পাতায় ৭৫.৩ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ডাঁটায় ১.৯ গ্রাম পাতায় ২.৩ গ্রাম, আঁশ ডাঁটায় ৪.৮ গ্রাম পাতায় ০.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ডাঁটায় ৬০.০ কিলোক্যালরী পাতায় ৯২.০ গ্রাম, আমিষ ডাঁটায় ৩.২ গ্রাম পাতায় ৬.৭ গ্রাম, চর্বি ডাঁটায় ০.১ গ্রাম পাতায় ১.৭ গ্রাম, শর্করা ডাঁটায় ১১.৪ গ্রাম পাতায় ১২.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ডাঁটায় ২১.০ মিলিগ্রাম পাতায় ৪৪০.০ গ্রাম, লৌহ ডাঁটায় ৫.৩ মিলিগ্রাম পাতায় ৭.০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ডাঁটায় ৭৫০.০ মাইক্রোগ্রাম পাতায় ৬৭৮০.০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ডাঁটায় ০.০৪ মিলিগ্রাম পাতায় ০.০১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ডাঁটায় ০.২ মিলিগ্রাম পাতায় ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ডাঁটায় ৪৫.০০ মিলিগ্রাম পাতায় ২২০.০ মিলিগ্রাম এবং আয়োডিন ডাঁটায় ১.৮ মাইক্রোগ্রাম পাতায় ৫.১ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়াও এতে রয়েছে ২০ প্রকার এমাইনো এসিড, ৪৬ প্রকার এন্টিঅক্সিডেন্ট পদার্থ, ৬ প্রকার খনিজ পদার্থ যেমন-জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, আয়রন, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি)। প্রদাহ কমানো, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণকারী পদার্থও রয়েছে এই সজনেতে।
সজনের ব্যবহার : ১. সজনের ফল ‘সজনের ডাঁটা’ বা ‘খাড়া’ নামে পরিচিত যা ব্যাপকহারে সবজি হিসেবে ব্যবহৃত ও সমাদৃত। ২. পাকা ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়। বীজ হতে স্বচ্ছ ও গন্ধহীন তেল (৩৮-৪০%) পাওয়া যায়, রান্নার কাজে বা লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঘড়ি মেরামতের কাজেও ব্যবহৃত হয়। ৩. সজনের কচি পাতা রান্না করে সবজি বা শাক হিসেবে, ভর্তা করে ও বড়া বানিয়ে খাওয়া যায়। ভেষজ গুণেও ভরপুর এই পাতা। ৪. সজনের ফুল সবজির মতো রান্না করে ও ভেজে খাওয়া যায়। ফুল পটাশিয়াম ও ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ। । ৫. সজনের ছাল ও মূল প্রচুর ভেষজ গুণ থাকায় বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
সজনের ভেষজ গুণ : * শরীরের কোন মাংসপেশীতে ব্যথা হলে সে স্থানটিতে সজনে গাছের ছাল বা মূল বেটে লাগালে ব্যথার উপকার পাওয়া যায়। * কচি পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্তের উচ্চচাপ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং রক্তের সুগারের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করে। * সজনে পাতার রস ৩-৪ দিন খেলে কৃমিমুক্ত হওয়া যায়। * সজনের সবজি বা তরকারী খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা বদহজম দূর হয়। * পাতা বা ছাল বেটে ফোড়া বা টিউমারে লাগালে ফোলা ও ব্যথার উপশম হয়। * সজনের ফুল শাকের মতো রান্না করে খেলে বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। * সজনের ডাঁটা এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় বাতের জন্য খুব উপকারী। * সজনে বীজের তেল বাতের জন্য উপকারী, কুষ্ঠ রোগেও উপকারী। তেলের অভাবে বীজ বেটে প্রলেপ দিলেও উপকার হয়। * সজনের মূলের ছালের প্রলেপে দাঁদ উপশম হয়। * রোজ ৩-৬ চা চামচ সজনের পাতার গুঁড়ো খেলে অনেকগুলো উপকার পাওয়া যায়, যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখ ও মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায়, দেহের কোষকলা সুস্থ রাখে, শরীরে চামড়ার ভাজপড়া কমায়, প্লীহা ও যকৃতের কাজ স্বাভাবিক রাখে, ঘুম ভাল হয়, কোলেস্টারলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরের ওজন কমায়, চুল গড়াতে সহায়তা করে, পুরুষ ও মহিলার যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে, হার্ট ভাল থাকে। এছাড়াও ৬ প্রকার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। * অনেক সজনেকে বলা হয় দদগড়ঃযবৎ’ং নবংঃ ঋৎরবহফ’’ । প্রতিদিন গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ৬ চা চামচ করে সজনের পাতার গুঁড়ো দুধ বা চায়ের সাথে গুলে খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ও দুগ্ধদানের ক্ষমতা বাড়ে, নবজাতক ভাল থাকে। শজনে নানাভাবে প্রস্তুত করে খায়। ডালে দিয়ে এবং অন্য তরকারির সাথে দিয়েও রান্না করা যায়। বসন্তকালে শজনে খেলে জলবসন্ত হয় না। কলেরা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। শজনে ফুলের ছেচকিও খেতে মজা। অল্প তেলে পাঁচফোড়ন দিয়ে শজনে ফুল রান্না করা হয়। লবণ হলুদ ও মরিচ দিয়ে রান্না সুস্বাদু হয়। শজনে ফুল রান্না করলে সামান্য তেতো স্বাদের হয় বলে কেউ খায় না। শজনে গাছের ছাল ও রসও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন