বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, যমুনা ও তিস্তা নদীর পানির লেভেল বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে, যা গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি। শুধু এই দুটি নদী নয়, অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। এতে উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে বন্যা সারাদেশে প্লাবিত হতে পারে। ইতোমধ্যে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও গাইবান্ধার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে বন্যা ধীরে ধীরে দেশের সব অঞ্চল গ্রাস করে চলেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বন্যায় দেশের ২১ জেলার নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। ১২২ উপজেলার হাজার হাজার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। চার জেলায় ৫ শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭ জেলার ৩২ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ১৩ জেলার ৬০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আভাস অনুযায়ী, এ সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

বিগত প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়েছে। ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং নেপালের বন্যার ঢল বাংলাদেশে প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে থাকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবারের বন্যা বিগত কয়েক বছরের বন্যার চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে তার আলামত দেখা দিয়েছে। ঘর-বাড়ি, কৃষিজমি ডুবে যাওয়া থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। একটু উঁচু জায়গায় ঠাঁই পাওয়ার জন্য বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ যতটুকু সহায়সম্বল রয়েছে, তা নিয়েই আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। যাদের গবাদিপশু, হাস-মুরগি রয়েছে, তারা কোনো রকমে এগুলো সঙ্গে নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, মানুষের আশ্রয় পাওয়া যেখানে সীমিত, সেখানে গবাদিপশুর আশ্রয় পাওয়া নিতান্তই অসম্ভব। বানভাসি যেসব মানুষ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বাঁধ কিংবা অন্য কোনো স্থানে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির প্রকট সংকট দেখা দিয়েছে। এসব মানুষ খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে টিকে আছে। ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো ব্যাপক কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার কথা বলা হলেও, তা দৃশ্যমাণ নয়। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে বন্যাকবলিত জেলার সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বক্তব্য দিলেও, বাস্তবে তার দেখা মিলছে না। সামাজিক সংগঠন, এনজিও থেকে শুরু করে বিত্তবানদের তৎপরতাও তেমন নেই। ফলে বানভাসি লাখ লাখ মানুষের অসহায় হয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো গতি থাকছে না। ঘর-বাড়ি, ফসল, গবাদি পশু হারিয়ে তারা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। বছরের পর বছর ধরে যে সংসার গড়ে তুলেছে তা আবার নতুন করে শুরু করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে গভীর সংশয়ে রয়েছে। নবরূপে ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ফসল ফলানোর মতো পরিস্থিতি তারা হারিয়ে ফেলেছে। বলা যায়, তারা এখন সর্বহারা। সাধারণত ৫ দিন স্থায়ী বন্যাকে স্বল্পমেয়াদি, ১০ দিন স্থায়ী বন্যাকে মধ্যমেয়াদি এবং এর বেশি স্থায়ী বন্যাকে ভয়াবহ বলে চিহ্নিত করা হয়। দেখা যাচ্ছে, এবারের বন্যা সাত দিনের বেশি অতিক্রম করেছে এবং তা ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর ক্ষতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা অকল্পনীয়।

বন্যার ভয়াবহ ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠে পানি নেমে যাওয়ার পর। বানভাসি মানুষ নিজ বাড়ি বা গ্রমে ফিরে অসহায় হয়ে পড়ে। বন্যার সময় আশ্রয় শিবিরে কিছু ত্রাণ মিললেও বন্যা পরবর্তী সময়ে তাদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। তবে এখন সবার আগে প্রয়োজন বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাদের পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। এ কাজটি সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এতে বন্যাকবলিত এলাকার এমপি, মেয়র, পৌর মেয়র থেকে শুরু করে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব বেশি। দলীয় লোক হিসেবে সরকার তাদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তারা নিরঙ্কুশভাবে ভোগ করছে। কাজেই সবার আগে বন্যার্তদের পাশে তাদের দাঁড়াতে হবে। আমরা দেখেছি, নির্বাচনে একেকজন প্রার্থীকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এখন এসব মানুষই বন্যাপিড়ীত। তাদের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো অবশ্য কর্তব্য। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, এনজিও এবং বিত্তবানদেরও বন্যার্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা উচিত। অন্যদিকে সরকারকে ব্যাপক ত্রাণ-তৎপরতা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিজ আবাসস্থলে ফিরতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। বন্যা পরবর্তী তিন মাস তাদের সহযোগিতা করতে হবে, যাতে তারা পুনরায় কৃষিকর্ম শুরু করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন