বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে ২১ সদস্যের ত্রাণ কমিটি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে উদাসীন ও ব্যর্থ। গতকাল দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং একের পর এক জেলা বন্যাকবলিত হচ্ছে। জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেটা আমরা লক্ষ্য করছি না। সরকারের চরম উদাসীনতা এই বন্যার ব্যাপারে। তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের যে রকম উদ্যোগ-সহায়তা নেয়ার কথা সেটা দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ত্রাণ মন্ত্রী কোথাও ঘুরে আসেননি। সরকারের পদক্ষেপগুলো মানুষ দেখতে চায়। আপনারা পত্রিকায় কি ছবি দেখছেন যে, কোনো মন্ত্রী এলাকাতে গেছেন বা বন্যাকবলিত এলাকায় হেলিকপ্টার মুভ করেছে। দেখেন নাই। অর্থাৎ সরকারের যে জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই সেটা বুঝা যায়।
তিনি বলেন, এখানে বিরোধী দলের তেমন কিছু করার নেই। তারা ত্রাণ কমিটি পাঠাতে পারে, সেখানে কিছু কিছু সাহায্য নিয়ে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব বন্যাকবলিত মানুষকে রক্ষা করা। যেটা সরকার করছে না।

ত্রাণ কমিটি গঠন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বৈঠকে দলের ২১ সদস্যের একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সদস্য সচিব ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসীন। কমিটিতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট জেলার নেতৃবৃন্দও থাকবে। এই ত্রাণ কমিটি অবিলম্বে তাদের কর্মকান্ড শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হজ প্রতিনিধি দলের সদস্য হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার হজ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএনপি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশন সরকারের একটি হজ দলের সদস্য হয়েছেন। যার প্রধান হচ্ছেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন সদস্য। এটা পুরো হাস্যকর ব্যাপার। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আমরা অবিলম্বে সরকারের কাছ থেকে একটা ব্যাখ্যা দাবি করছি।

তিনি বলেন, এটা প্রমাণ করে যে, এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এরা যে সংবিধানকে একেবারে তোয়াক্কা করেই না, সংবিধানের আশপাশ দিয়ে যায় না এবং একই সঙ্গে এই রাষ্ট্রটাকে তারা তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারোই নেই। সেখানে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা কোন আইনে, কোন ক্ষমতা বলে একটা হজ ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধায়ন ও দিক নির্দেশনার প্রদানের জন্যে একটি হজ প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে যাচ্ছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ডিসগ্রেসফুল। চিন্তা করা যায় না তিনি এরকম কমিটিতে সউদী আরব যাচ্ছেন। উনি (সিইসি) যদি হজ করতে চাইতেন তাহলে বাদশার বিশেষ মেজমান হয়ে যেতে পারতেন। এই যে আপনার আত্মসম্মান বিবর্জিত ব্যক্তিদেরকে আপনার নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয়। যার ফলে এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা কোথায় নিয়ে গেছেন। বিএনপি মহাসচিব সংবিধানে বর্ণিত ১১৯ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব ও কর্মকান্ড ও হজ কমিটির গঠনের গ্যাজেটের বিষয়টি তুলে ধরেন।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ ও করণীয় নির্ধারণ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, দেশে আজকে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন মনে হচ্ছে দেশ একটা নৈরাজ্য চলছে।

আদালতের ভেতরে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, ছোট্ট শিশুর মাথা কেটে ফেলা হচ্ছে, প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হচ্ছে এবং তার পরবর্তীতে যে ঘটনাগুলো ঘটছে যেমন, একজন প্রধান আসামি (০০৭ নয়ন বন্ড) তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলো। দেখা গেলো সেই মামলার যে বাদী (আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি) তাকে আবার গ্রেফতার করা হলো এবং তাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়গুলো দেখা যায় যে, এখানে একটা এনার্কি- নৈরাজ্য বুঝা যায় যে, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন এবং বিচার বিভাগে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সাহেবকে অজ্ঞাত সুব্রত বাইন পরিচয় দিয়ে গুম করার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলো কিন্তু অহরহ ঘটছে। অনেক মানুষই ভিকটিম হচ্ছেন বিশেষ করে তুলে নিয়ে যাওয়া- এটা তো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, কয়েকদিন আগে একজন র‌্যাব সদস্য তিনি তারই এক আত্মীয় তার সঙ্গে জমির সমস্যার কারণে তিনি তাকে গোয়েন্দা দিয়ে তুলে নিয়ে গেছেন এবং তাকে হত্যা করছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই বিষয়গুলো যত ঘটছে তত প্রকাশ হয়ে পড়ছে যে, দেশে আজকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাই এখন সবচাইতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। সরকার বলতে যা বুঝায়, এরকম সরকার আছে কিনা এটাই আজকে জনগণের কাছে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করছি যে, এটা এখন শুধু আপনার নীরবে থাকার মধ্যে, দুই-একটা কথা বলা বা কোনো একটা বির্তকের মধ্যে থাকার মধ্যে জনগণ শুধু সীমাবদ্ধ থাকি অথবা রাজনীতিক দলগুলো সীমাবদ্ধ থাকে বা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে দেশ চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা মনে করছি যে, এই বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে হলে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথাবার্তা বলা প্রয়োজন। আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করছি এবং বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

ডেঙ্গু প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি ডেঙ্গুর ভয়ে অফিসে যাচ্ছে না, মশা কামড়াতে পারে। একবার তার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ডেঙ্গু এখন আতঙ্কের বিষয়। অথচ একজন মেয়র বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত নাকী কিছুই হয় নাই। এখন পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছেন, কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সবাই এখন দিনের বেলায় শিশুদের মশারির নিচে রাখছেন, বড়রা মোজা পরে থাকেন-কখন এডিস মশা কামড় দেবে সেই ভয়ে। সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। আমি নিজে উত্তরায় থাকি এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি- এটাই বাস্তবতা বলছি।

বৈঠকে মহাসচিব ছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন