আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বরগুনার সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন মিন্নি। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৫ দিনের রিমান্ডের দু’দিন শেষে মিন্নিকে গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিফাত হত্যাকান্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে চান। তবে স্বীকারোক্তিতে মিন্নি কী বলেছেন তা তিনি বলতে রাজি হননি।
মিন্নিকে আদালতে হাজির করার খবরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের পাশাপাশি উৎসুক জনতা ভিড় জমান। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও। মিন্নির বাবা বলেন, তার মেয়ে অসুস্থ। জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করে তার মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পুলিশের কৌশলী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ
এর আগে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রæত গ্রেফতারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে সে। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এদিকে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ আদেশ দেন। গতকাল সকালে রিশানকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিশান এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিশান ফরাজীকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত রিশান ফরাজীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন রিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অভিযান চালিয়ে রিশানকে গ্রেফতার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন