বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নতুন পাটে সোনালি দিনের হাতছানি

দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করবে

মো. অহেদুল হক, গোপালগঞ্জ : | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম


বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতের তোষা পাট-৮ (রবি-১) কৃষককে সোনালী দিনের হাতছানি দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ জাতের পাট হেক্টরে ৩.৪৫ টন ফলন দিয়েছে। বাংলাদেশ পাটবীজের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কৃষক পর্যায়ে পাটের এ উন্নত জাতটির বীজ উৎপাদন করে দেশ পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। এতে ভারত থেকে নি¤œমানের পাটবীজ আমদানি নির্ভরতা কমবে। ফরিদপুর আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে। এ পাটের আঁশের রং সোনালী। প্রচলিত পাটের তুলনায় এ পাটের আঁশে লিগনীন পারসেন্টেজ কম। তাই মানের দিক থেকে এ পাটের আঁশ অনেক উন্নত। ইন্ডিয়ান জেআরও-৫২৪ জাতের পাটের তুলনায় এ পাট ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি ফলন দেয়। তাই অতিরিক্ত ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

ফরিদপুর পাট গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রæয়ারি জাতীয় বীজ বোর্ড পাটের নতুন এ জাতটি অবমুক্ত করে। চলতি পাট মৌসুমে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাগুরা জেলার ৪৯২ হেক্টর জমিতে ৬৪০টি প্রদর্শনী প্লটে কৃষক উন্নত জাতের এ পাট আবাদ করেন।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার জঙ্গল মুকন্দপুর গ্রামের কৃষক মো. মুক্তার হোসেন বলেন, এ বছর ১০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে উন্নত জাতের পাট আবাদ করেছি। ফরিদপুর আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্র বিনামূল্যে বীজ, সার কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়েছে। পাটে তেমন রোগবালাই দেখা দেয়নি। মাত্র ১ শ’ দিনেই এ পাট ক্ষেত থেকে কাটা গেছে। ইন্ডিয়ান পাটের আগা সরু। কিন্তু এ পাটের আগা মোটা। তাই এ পাটে ফলন বেশি দিয়েছে। পাটের আঁশের রং সোনালী ও মানের দিক দিয়ে খুবই উন্নত। বাজারে এ পাট বেশি দামে বিক্রি হবে। ইন্ডিয়ান পাটের কাঠি অমসৃন ও কাটা যুক্ত হয়। কিন্তু এ পাটের কাঠি মসৃন ও উন্নত মানের। এ জাতের পাট আবাদ করে আমি লাভবান হয়েছি। তাই আগামীতে আমার প্রতিবেশি কৃষকরা এ জাতের পাট আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আশা করছি আগামী বছর আমাদের এলাকায় লাভজনক এ জাতের পাটের আবাদ সম্প্রসারিত হবে।

ফরিদপুর আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মজিবর রহমান বলেন, এ জাতের পাট ইন্ডিয়ান জেআরও-৫২৪ জাতের পাটের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি ফলন দেয়। জুলাই মাসে ক্ষেতে পাট বপন করলে এ থেকে পাটের এ জাতের বীজ পাওয়া যাবে। এছাড়া এখন ক্ষেতের পাট না কেটে ক্ষেতে রেখে দিলেও বীজ জন্মাবে। দেশে এ জাতের পাটবীজ কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন করে ইন্ডিয়া থেকে নি¤œমানের পাটবীজ আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এতে দেশ উন্নত মানের পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রসময় মন্ডল বলেন, পাট আমাদের অন্যতম অর্থকরি ফসল। নতুন জাতের পাট আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দেশে এ জাতের পাটের আবাদ সম্প্রসারিত হলে কৃষক পাট, বীজ ও পাটকাঠি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবেন। এতে আমাদের কৃষক ও কৃষির ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউটের কৃষি বিভাগের পরিচালক ড. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, নতুন জাতের পাট কৃষককে সোনালী দিনের হাতছানি দিচ্ছে। এ পাট জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত ঝুঁকি মোলাবেলা করে সর্বোচ্চ ফলন দিতে সক্ষম। উপযোগিতা যাচাই করে এ জাতের পাটের বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। কৃষি ও কৃষক বান্ধব এ জাতের পাট আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা আরো বেশি গতিশীল করবে। এতে করে পাটের সুদিন ফিরে আসবে। ফলে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে বলে এ কৃষি বিজ্ঞানী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Kowaj Ali khan ২০ জুলাই, ২০১৯, ৯:২০ এএম says : 0
এই প্রথম শুনলাম পাটবিজ ভারত থেকে আমদানি করা হয় ।আমাদের গ্রামে অনেক পাট চাষ করা হইতো সবাই পাটের বীজ নিজেরাই পাট হইতে উৎপাদন করিতেন। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন