শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

‘আমিরুল হজ’ হিসেবে সিদ্দীকে আকবর (রা.) -০১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

‘মহান হজের দিবসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এটা এক ঘোষণা যে, নিশ্চয়ই মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও।’ (সূরা : তওবা, আয়াত-৩)। ‘ইয়াওমে হজে আকবর’, অর্থাৎ ‘মহান হজ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে তফসিরকারগণের বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। অনেকে বলে থাকেন যে, শুক্রবারে হজ হলে তাকে ‘হজে আকবর’ বা ‘আকবরি হজ’ বলা হয়। এর কোনোটাই সঠিক নয়। আয়াতে বর্ণিত ‘হজে আকবর’-এর সাথে ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ইতিহাস যুক্ত। সর্বসম্মত মত অনুযায়ী, হিজরি নবম সালে হজ ফরজ হয় এবং এ বছরই রসূলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-কে আমিরুল হজ বা হজ প্রতিনিধিদলের নেতা মনোনীত করে প্রেরণ করেন। তাঁর সফর সঙ্গীদের সংখ্যা ছিল তিনশ’। আমিরুল হজ হিসেবে তিনি মুসলমানদের হজ করাবেন, এটাই ছিল উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘তাবুক’ যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের পর রমজানের বাকি মাস শাওয়াল এবং যিলক্বদ মাস মদিনায় অবস্থানের পর এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনশ’ লোক ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা:) হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-কে তার পক্ষ থেকে দশটি কোরবানির পশু প্রদান করেন। এগুলোর দেখভালের দায়িত্ব পালনের জন্য নাজিয়া ইবনে জুন্দব আসলামী (রা.)-কে নিয়োগ করেন। হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) খোদ নিজের পক্ষ থেকে পাঁচটি কোরবানির পশু নিয়েছিলেন।
ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী, এরপর সূরা বারাতের চুক্তি ভঙ্গ-সংক্রান্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে তাঁর ‘আল-আযবা’ নামের উটনী দিয়ে প্রেরণ করেন, যেন তিনি কাফেরদের সামনে সূরা রাবাতের আয়াতগুলো পাঠ করে শোনান।

ইবনে সাদ বলেন, হজরত সিদ্দীক (রা.) যখন ‘আল-আরাজ’ নামক স্থানে উপনীত হন, তখন ‘আল আযবা’ সওয়ার। হজরত আলী (রা.) সেখানে পৌঁছেন। তাঁকে দেখে হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি আমির হিসেবে এসেছেন নাকি ‘মামুর’ (আদিষ্ট) হিসেবে?’ হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘মামুর হিসেবে।’ এরপর উভয়েই হজরত যাত্রা করেন। ইবনে সাদের বর্ণনায় আরো আছে, হজরত সিদ্দীক (রা.) হজরত আলী (রা.)-এর কাছে জানতে চান যে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) আপনাকে ‘মানাসেকে হজ’ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন কি?” হজরত আলী (রা.) জবাবে বললেন, “না, আমাকে তো এ জন্য প্রেরণ করেছেন যে, আমি লোকদেরকে সূরা ‘বারাত’-এর আয়াতগুলো পাঠ করে শুনিয়ে দেবো এবং যার সাথে অঙ্গীকার রয়েছে, তার অঙ্গীকার তাকে ফেরত দেবো, (অর্থাৎ বহাল রাখব কিংবা বাতিল করব)।”

মোট কথা, হজরত সিদ্দীক (রা.) লোকদেরকে মানাসেকে হজ শিক্ষা দেন, হজ করান এবং খুতবা পাঠ করেন এবং হজরত আলী (রা.) কোরবানি দিবসে ‘জামরাতুল আকবার’-এর নিকট দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেছিলেন এবং যার সাথে অঙ্গীকার ছিল তার অঙ্গীকার ফেরত দেয়ার কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন : “হে লোক সকল! কোনো কাফের জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং এই বছরের পর কোনো মোশরেক হজ করবে না এবং উলঙ্গ অবস্থায় কেউ বায়তুল্লাহ তওয়াফ করবে না এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যার অঙ্গীকার ছিল তা অক্ষুন্ন থাকবে।” ‘আমিরুল হজ’ হিসেবে এটি ছিল হজরত সিদ্দীক (রা.)-এর হজ পালনের সংক্ষিপ্ত কাহিনী। আর এটিই ছিল পরবর্তী বছর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হজ পালনের পটভ‚মিকা, যা ছিল তার জীবনের শেষ হজ এবং মদিনায় হিজরতের পর প্রথম হজ। যেটাকে বলা হয়েছে ‘হজে আকবর’।

এ ক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার, রাফেজী শিয়াদের মনের আগুন এখানেও জ্বলে ওঠে। তারা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-কে ‘আমিরুল হজ’ হিসেবে মেনে নিতে নারাজ। এমনকি হজরত আলী (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আমিরুল হজ’ হিসেবে প্রেরণ করেন এবং হজরত সিদ্দীক (রা.)-কে এ পদ থেকে বাদ করে দেন। সুতরাং আলী (রা.)-এর নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাদের এরূপ ভিত্তিহীন অভিযোগ খন্ডন করা হয়েছে। বলতে হয়, এ অন্ধ জ্ঞানপাপীরা হজরত আলী (রা.)-এর মুখে উচ্চারিত স্বীকারোক্তিগুলোকে অস্বীকার করে তাদের মনগড়া বিভ্রান্তিকর মতবাদ প্রচার করতে দ্বিধাবোধ করে না। যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন লোক রাফেজী শিয়াদের এই ভ্রান্ত মতবাদকে সমর্থন করতে পারে না। এটি তাদের ইতিহাস বিকৃতির অপতৎপরতা, যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। (পরবর্তী আলোচ্য : ‘হজে আকবর’)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Nasim Khan ২১ জুলাই, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
চারিত্রিক মাধুর্য, ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা, জ্ঞানের গভীরতা, আদর্শিক একনিষ্ঠতা, নীতি-জ্ঞানে পরিপক্বতা, কর্তব্য-নিষ্ঠা, ত্যাগের মহিমা আর নিঃস্বার্থ প্রজা পালনে পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব রাষ্ট্রনায়ক সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর নামটি উচ্চারণ করতে হয় তিনি হলেন খোলাফায়ে রাশেদিনের প্রথম খলিফা, খলিফাতুর রাসুল হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ২১ জুলাই, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
হজরত আবু বকর রাসুলে করিম (সা.)-এর সমান আয়ুষ্কাল লাভ করেছিলেন। তাঁর বংশপরম্পরা ষষ্ঠ পুরুষে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধারায় মিলিত হয়।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ২১ জুলাই, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
বিলাসিতার মধ্যে প্রতিপালিত হলেও হজরত আবু বকর (রা.)-এর জীবনে জাহেলি যুগেও নীতিহীনতা বা বর্বরতার কোনো স্পর্শ লাগেনি। তিনি কোনোদিন শিরক করেননি এবং মূর্তির জন্য অর্চনা দেননি। তিনি ছিলেন হানিফ ঘরানার প্রথম সারির ব্যক্তি।
Total Reply(0)
সিদরাতুল মুনতাহা ২১ জুলাই, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
হজরত আবু বকর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রেসালাতপ্রাপ্তির দ্বিতীয় দিনে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনিই হলেন বয়স্ক ও পুরুষদের মধ্যে এবং কুরাইশ বংশের ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি। তিনি এ দিক দিয়েও সৌভাগ্যবান যে তাঁর মা-বাবা দুজনই ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং তাঁর পরিবারের সবাই ছিলেন মুসলমান।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ২১ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
এক হাদিসে রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, একমাত্র আবু বকর ছাড়া সবার মধ্যে কিছু না কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব লক্ষ করেছি। বাল্যকাল থেকেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে হজরত আবু বকর (রা.)-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। রেসালাতপ্রাপ্তির পর সে সম্পর্ক আরো গভীর হয়।
Total Reply(0)
আসলাম ২১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৩১ এএম says : 0
প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্য খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকীকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
নোমান ২১ জুলাই, ২০১৯, ৯:৩২ এএম says : 0
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম ............................
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন