বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারের টপ টু বটম লুটপাট-ঘুষ-দুর্নীতিতে ব্যস্ত -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৭ পিএম

সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে সরকারের ‘টপ টু বটম’ লুটপাট-ঘুষ-দুর্নীতিতে ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভোটারবিহীন অন্ধকারে নির্বাচিত সরকার দুর্নীতিকে পুরোমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে ফেলেছে। চারদিকে চলছে দূর্নীতির উৎসবের আতশবাজী। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। আইনের শাসন ও সুশাসন এখন ইতিহাসের পান্ডুলিপিতে অবস্থান করছে। দুর্নীতির বিরূপ প্রভাবে অগ্রগতি থমকে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আপাতভাবে আইনের শাসনের অভাব, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দুর্নীতি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে।

রোববার (২১ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে যখন দুর্নীতির মহামারি চলছে তখন সরকারের রাঘব-বোয়ালদের দুর্নীতির ‘ইনডেমনিটি প্রতিষ্ঠান’ দুর্নীতি দমন কমিশন ও এর চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিয়ে বলছেন-‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ হবে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়।’ এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খেতে বলেছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তিনি কি নৈতিক বার্তা দিয়েছিলেন, সেই উত্তর তো এখনও পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, যখন দেশে প্রশাসনিক স্তরে অতি উচ্চ মাত্রার দুর্নীতির সংস্কৃতি বিরাজমান, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতেও টেবিলের নিচে আর্থিক লেনদেন করতে হয়, তখন মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে এই ‘উৎসাহ বার্তা’ দেয়া হচ্ছে যে, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। ফলে টেবিলের ওপর দিয়েই এখন ঘুষের লেনদেন চলবে। তাতে কোন অসুবিধা নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেই যদি ‘সরল দুর্নীতির’ অভিনব বাণী জনগণকে শোনান, তাহলে দুর্নীতির জোয়ারে দেশ তো ভেসে যাবেই। এখন থেকে ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’র সাফল্যের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকবে সরকারী কর্মকর্তারা। পক্ষপাতদুষ্টতার গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত দুদক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যটি অপশাসনেরই একটি বিপজ্জনক বার্তা।

রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে দুর্নীতির রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক নজরদারী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ দুর্নীতি ধারণা সূচক-২০১৮ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রতি বছর দুর্নীতির মাত্রা বাড়ছে বাংলাদেশে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে ২০১৭-এর তুলনায় বেশী। ২০১৮ সালে ওই সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম-যা ২০১৭ সালে ছিল ১৭তম স্থানে।

তিনি বলেন, অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, অপরাধীরা অপরাধ করে বটে কিন্তু মনের অজান্তেই একটি প্রমাণ রেখে যায়। অপরাধের তেমনি একটি চিহ্ন রেখে দিলেন দুদক চেয়ারম্যান। খোদ দুদক কর্মকর্তাদেরই যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ বেরিয়েছে তখন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির পক্ষে দুদক প্রধানের সাফাই গাওয়া ছাড়া তো আর অন্যকোন বিকল্প থাকে না। চারদিকে যখন দুর্নীতিবাজদের উল্লাস, যখন শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি চলছে অবাধে তখন দুর্নীতিই যে এই দুর্নীতিবাজ সরকারের ভুষণ, দুদক চেয়ারম্যানের কথায় সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমানিত হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান গতকাল নিজেই স্বীকার করেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা ৭০ ভাগ দুর্নীতির মামলা দিচ্ছেন পুঁটিমাছের বিরুদ্ধে। মুলত: দুর্নীতি দমনের নামে মুখোশপরা এই দুদক বিরোধী দল দমনে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় ব্যস্ত।জনপ্রশানের কর্মকর্তারা দুর্নীতিকে এখন আর দুর্নীতি মনে করছেন না। এ কারণেই দেখা যায়, দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই নির্বাচনটি ‘সরল বিশ্বাসী’ প্রশাসনের ‘সরল’ কর্মকর্তারা ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতেই সেরে দিয়ে দেশের ভোটারদের পরিণত করেছেন ‘সাব-হিউম্যানে’। এই ঘোরতর অন্যায় ও পাপের জন্য তাদের কোনো গ্লানি নেই।

বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রশাসনের সরল বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন চলছে চরম নৈরাজ্য। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিলো ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। সরকারি কর্মকর্তাদের ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’-র কারণে গত এক দশকে এই সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ছয় লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’-র কারণে নীচতলা থেকে দোতালায় একেকটি বালিশ তোলার খরচ পড়েছে সাড়ে সাতশো টাকা। সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতির কারণে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডের ৮১০ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলেও কারো কোনো বিকার নেই। ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’র কারণে রেল লাইন কিংবা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ। সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতির কারণে প্রতিটি প্রকল্প খরচ এখন বেড়ে যাচ্ছে চার পাঁচ গুণ। জনগণ মনে করে এদেশে গত দশ বছরে উন্নয়ন হয়েছে এই সকল ‘সরল বিশ্বাসী দুর্নীতিবাজ’দের।

তিনি বলেন, প্রশাসনের এই সরল বিশ্বাসী দুর্নীতিবাজরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা দুর্নীতিবাজ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়তই বিরোধী দল ও মতের মানুষকে গুম করছে, খুন করছে। যাতে সরকার ও প্রশাসনের সরল বিশ্বাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস না পায়।
বেগম জিয়াকে জোর করে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বিঘ্ন নিরাপদে প্রশাসনের সহায়তায় রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের কন্ঠস্বর, গণমানুষের প্রাণপ্রিয় আপোষহীন নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী মিথ্যা প্রতিহিংসার মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে দেড় বছর। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসার শিকার বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনাই জামিনে বাধা দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার। তাঁকে বন্দী রেখে লুন্ঠন-দু:শাসনে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে জনধিকৃত সরকার।

বন্যার্তদের হাহাকার চলছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চলে এখন বন্যায় সর্বস্বহারা মানুষের হাহাকার চলছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নতুন করে আরো পাঁচটি জেলায় পানি প্রবেশ করেছে। শুকনো আশ্রয় ও খাবারের সন্ধানে ছুটছে বানভাসি মানুষ। কোথাও ত্রাণের গাড়ি কিংবা নৌকার সংবাদ শুনলেই ছুটে যাচ্ছে তারা। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে চারদিনে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে তিন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুরে ৪, শেরপুরে ৪, গাইবান্ধায় ২ জন রয়েছে। সহায়-সম্পদ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বন্যার্তরা। অনেকেই পরিবারসহ ডিঙি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ছোট ছোট নৌকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে অনেকের। ত্রানের অভাবে যখন করুণ অবস্থা তখন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ঢাকায় বসে গলাবাজি করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ পৌঁছেনি এখনো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেটা আমরা লক্ষ্য করছি না। সরকারের চরম উদাসীনতা প্রমান করে জনগণের প্রতি তাদের ন্যুনতম কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনবিদ্বেষী। সরকারের দায়িত্ব বন্যা কবলিত মানুষকে রক্ষা করা। যেটা সরকার করছে না।

তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এই লক্ষ্যে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বন্যাদূর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণকালে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, গত পরশু ফেনী থেকে ফেনী জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, জেলা যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন জসিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল, সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আতিকুর রহমান মামুন, দাগণভূঁইয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি হাসানুজ্জামান শাহাদাৎ, ফেনী পৌর যুবদলের সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন বাবলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম এবং ফেনী পৌর যুবদল নেতা কাজী সোহাগকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন