আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে বরগুনায় দেশের শতাধীক আইনজীবী। সম্প্রতি বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে শাহ নেওয়াজ শরিফ রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নিহতের স্ত্রী মিন্নি আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগের পর তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। কেউ কেউ এগিয়ে আসা আইনজীবীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ বা আবার সমালোচনাও করেছেন।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, শনিবার রাজধানী ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি থেকে শতাধিক আইনজীবীর কয়েকটি দল বিভিন্ন পথে বরগুনা রওনা হয়েছেন। আগামীকাল রোববার কারাগারে মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেবেন তারা। এরপরই বরগুনা আদালতে মিন্নির জামিনের বিষয়ে আইনি পদক্ষপ নেবেন।
আইনজীবীদের প্রশংসা করে ফেইসবুকে এইচএম নোমান রাফি লিখেছেন, ‘‘ধন্যবাদ জানাই আইনজীবীদের।জাতি সঠিক বিচারের জন্য অপেক্ষায়!!অপরাধী যেই হোক মিন্নী,এমপি পুত্র কিংবা পুলিশ সঠিক বিচারের মাধ্যমে তাকে শাস্তি পেতেই হবে এই কামনা সকল আইনজীবীদের প্রতি।’’
মোঃ জোবাইর হোসাইন লিখেছেন, ‘‘সত্যের সন্ধানে লড়াই করতে সমস্যা নাই,সত্য উন্মোচন করার জন্য চেষ্টা করুন। শুভকামনা রইল।’’
‘‘চিন্তা করা যায় কোন আইনজীবী মিন্নীর পক্ষে লড়তে সাহস পায়নি, কোন দেশে বাস করি আমরা। ধন্যবাদ আইনজীবী দেরকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার ই আছে’’ লিখেছেন মখলেছুর রহমান হিমেল।
নুর ইসলাম লিখেছেন, ‘‘ভালো। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই আছে এবং থাকা উচিত। তাছাড়া আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে এধরনের উদ্যোগ বাঞ্ছনীয়।’’
‘‘ফলাফল যাই হোক, এই রকম একটা উদ্যোগের নিউজ শুনে প্রাণটা ভরে গেল। শতভাগ ন্যায় একটা বিচার দেখতে চাই, দোষী যেই হোক না কেন!’’ লিখেছেন মেঘা।
ফেইসবুক ব্যবহারকারী আহমেদ জাহাঙ্গীরের মন্তব্য, ‘‘শতাধিক আইনজীবী লড়লেই কি হবে, যেখানে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করিতেছে, এবং পরিচয় সহ অভিযোগ রয়েছে এখনও গ্ৰেপতার হচ্ছে না, অবশ্যই ক্ষমতায় বলে।’’
শওকত মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘মানলাম মিন্নি অপরাধি কিন্তু তার পক্ষে আইনজীবি না দাঁড়াতে হুমকি দিবে কেন??? আইনি সহায়তা পাওয়া অবশ্যই মিন্নির সাংবিধানিক অধিকার!’’
তবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেইসবুকে সুস্ময় ইসলাম লিখেছেন, ‘‘হায়রে দেশ ! খুন হলো রিফাত , কিন্তু সেই রিফাতকে নিয়ে আলোচনা নেই , রিফাতের পরিবারকে আইনি সহায়তা করার জন্য শতাধিক আইনজীবী নেই, কোনো মিডিয়া রিফাতের পরিবারকে নিয়ে কোনো রিপোর্ট করছে না যে কেমন আছে রিফাতের পরিবার? সবাই শুধু মিন্নি , অপরাধ করেও মিন্নি এখন নায়িকা !! ভিডিও ফুটেজে প্রমান থাকার পরেও এক শ্রেনীর মানুষের কাছে মিন্নি নিরাপরাধ, জানতে ইচ্ছে করে, এখানে মিন্নি না হয়ে মিন্নির জায়গায় যদি মুন্না নামের কেউ হতো, তাহলে ?’’
সুস্ময়ের মতো কেএম সোহেল খান লিখেছেন, ‘‘দেশটা এরকমই সবাই চোরের পক্ষ নেয়।আর জার মালজিনিস চুরি হইছে তার পক্ষে কেহ নাই। মিন্নির মত একটা.. আবার সাপোর্ট করার জন্য আইনজীবীরা পাগল হয়ে গেছে।’’
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে বুধবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে পাঁচ দিনের রিমান্ড পাঠান আদালত। এরপর ফের গতকাল শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মিন্নি বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় নিজে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন এমনটি জানায় পুলিশ।
তবে মিন্নির বাবা অভিযোগ করেন, মিন্নির জন্য কোন আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। তার পক্ষে যেন কোন আইনজীবী আদালতে না আসেন সে জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা আইনজীবীদের হুমকি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পুলিশ মিন্নিকে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে।
গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে শাহ নেওয়াজ শরীফ রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে ঐ দিন বিকেলে বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শরীফ।
এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
এ দিকে মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন