বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাত কলেজ সমস্যার দ্রুত সমাধান

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তা মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে সাত কলেজের সমন্বয়ক, বিভিন্ন অনুষদের ডীন, প্রক্টরিয়াম টিম ও ডাকসু নেতাদের সাথে আলোচনা করে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ঢাবি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. সামাদ।

এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাবি বাণিজ্য অনুষদের ডীন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দীন, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন প্রমূখ।

ঢাবি প্রো-ভিসি ড. মো. সামাদ বলেন, ভিসি দেশের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উদ্বুত পরিস্থিতিতে আমরা সাত কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসেছি। মূলত যেসব বিষয়কে নিয়ে ভূল বোঝাবুঝি হচ্ছে তা কিছু তথ্য বিভ্রান্তি। ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি আগামী বুধবার দেশের বাইরে থেকে আসলে তিনি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

প্রো-ভিসি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের একটি সদিচ্ছা হচ্ছে শিক্ষার মান বাড়ানো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ সকলে মিলে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য চিন্তা করছি। সেই চিন্তার সাথে আমরা সহমত পোষণ করি। তাই সেই মান বাড়ানোর লক্ষ্যে যখন আমরা এই কলেজগুলো নিয়েছি, সেটা আমাদের শিক্ষার্থীদের যে যৌক্তিক দাবিগুলো আছে, তাদের কোনো শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয়, বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ঠিকমতো চলে, সেগুলো অক্ষুণ রেখে আমরা এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করবো।
ড. সামাদ আরও বলেন, আজকে আমাদের আলোচনায় ডাকসুর নেতারাও ছিলো। আমরা সকল বিষয়গুলো তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। এখন তারা আন্দোলনকারীদের সাথে বসে তাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিবেন। স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যে অনুপাতে বেড়েছে সে অনুপাতে সুযোগ বাড়েনি উল্লেখ করে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এসময় ঢাবি প্রো-ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে যেন আরও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনে সরকারের সাথে আলোচনায় বসবেন বলেও জানান ।

সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমন্বয়ক প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিলো সাটিফিকেট নিয়ে, আমরা ডাকসু নেতাদের সাথে কথা বলেছি আগামীতে সাত কলেজের সার্টিফিকেটে কলেজের নাম বোল্ট করে লিখা হবে, এবং সাটিফিকেটের রং ভিন্ন হবে। সাত কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ার কোন কিছুই এখানে হয়না বরং আমরা আইটির মাধ্যমে এটি করে থাকি। এ বছর সাত কলেজের সমাবর্তনের জন্যও আমরা আইটির সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এটি করেছি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কাজের সুবিধার জন্য প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ে আলাদা কর্ণার করা হয়েছে। ১ মাসের মধ্যে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম ওখানে স্থানান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, সাত কলেজের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়ে যাতে ঢাবির শিক্ষকদের উপর চাপ না পড়ে তাই আমাদের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ৯০ শতাংশ খাতাই সাত কলেজের শিক্ষকরা দেখবেন আর মান বজায় রাখার জন্য মাত্র ১০ শতাংশ খাতা এখানকার টিচাররা মূল্যায়ন করেবেন। নতুন অর্ন্তভূক্ত কলেজের ক্যারিকুলাম পরিবর্তনের কারণে ২বছর মনিটরিংয়ের জন্য ঢাবির শিক্ষকদের দিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখানো হয়েছিলো। এখন বিষয়টি তাদের আয়ত্বে এসে গেছে। রেজাল্ট প্রকাশের জন্যও আমরা সয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে রেজাল্ট প্রকাশের দিকে যাচ্ছি। সাত কলেজের জন্য ইতোমধ্যেই যুগোপযোগী সিলেবাস ও অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়েছে এবং আগামী দিনে সে অনুযায়ি নির্দিষ্ট সময়ে সাত কলেজের সকল কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

এরআগে ঢাবির অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনসহ অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা মেরে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। রোববার ভোরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, কলাভবন, বাণিজ্য শিক্ষা অনুষদ, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদসহ অধিকাংশ ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে দূরদূরান্ত থেকে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
বেলা ১১টা থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাষ্কর্য, ভিসি চত্বরসহ বিভিন্ন মোডে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় তারা দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে এতে যোগ দেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

এরআগে গত কয়েকদিন যাবত চার দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও রোববার অধিভুক্তি বাতিলের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। সকাল পৌনে ১০ টার দিকে গাড়ী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. সামাদ প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে সেখানে আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে তিনি সেখানে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেন।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া আন্দোলনে ভবনে তালা মেরে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনিস্টিউটে ভর্তি কাজে দূরদূরান্ত থেকে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
পরে বিকেলে প্রশাসনের নির্দেশে অধিকাংশ ভবনের তালা ভেঙ্গে ফেলেন কর্মচরীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. একে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ভাঙচুর করে, পরীক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এক শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থীর ক্ষতি করে দাবি আদায় হয় না। এখন ডাকসু আছে,আলোচনার টেবিল আছে তাদের যে দাবি তারা বলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এভাবে আন্দোলন করে না। আজকে যাদের পরীক্ষা হয়নি এই পরীক্ষার ক্ষতি পূরণ কে দেবে। এসময় তালা ভাঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালা থাকলে তো প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না। প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের দিকটি লক্ষ্য রেখে তালা ভাঙ্গা হচ্ছে।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন