শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের চার কোটি মানুষ ঠিকমতো খেতে পায় না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকার পরও দেশের ৪ কোটি মানুষ ঠিকমতো খেতে পায় না, যা মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এদের মধ্যে অতিদরিদ্র ২ কোটি এবং দরিদ্র ২ কোটিসহ মোট ৪ কোটি মানুষ (২০১৬ সালের বিবিএস এর তথ্যানুযায়ী), যাদের অর্ধেক বেশি কম ও অপর অর্ধেক অল্প কম খেতে পায়। প্রধানত এ জনগোষ্ঠীই দরিদ্র বলে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। অপরদিকে, সমাজে আয়-বৈষম্যের কারণে শীর্ষ ১০ ভাগ ধনী পরিবারের আয় মোট জাতীয় আয়ের ৩৮ শতাংশ এবং নিম্নে অবস্থানকারী ১০ ভাগ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ১ শতাংশের মালিক। এ পরিস্থিতি দেশে সকল মানুষের মৌলিক অধিকার- খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রতিষ্ঠার বিষয়কে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ইকো কোআপারেশন-এর সিভিক এনগেজমেন্ট এলায়েন্স প্রোগ্রাম ও ক্রিশ্চিয়ান-এইড এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘খাদ্য অধিকার আইন প্রনয়ণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলমের সভাপতিত্বে এ সংলাপে খাদ্য অধিকার আইন প্রনয়ণে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষেয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।

আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ইকো কোঅপারেশন-এর লবি এন্ড এডভোকেসি এক্সপার্ট আরশাদ সিদ্দিকী, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, গাজী টেলিভিশন-এর প্রধান প্রতিবেদক রাজু আহমেদ, জনকন্ঠের বিজনেস এডিটর কাওসার আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের দৌলত আখতার মালা, ইত্তেফাকের ষ্টাফ রিপোর্টার রিয়াদ হোসেন, সময় টিভির জুবায়ের ফয়সাল, যুগান্তরের মুনীর হোসেন, বণিক বার্তার সানোয়ার শাহীন, এস এ টিভির বিজনেস এডিটর সালাহাউদ্দিন বাবলু, ইউএনবি’র বিশেষ প্রতিনিধি সদরুল হাসান সংলাপের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সংলাপ সঞ্চালন করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

মহসিন আলী বলেন, সংবিধান খাদ্য অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে এখন প্রয়োজন আইন তৈরি করা। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে এবং ক্রমাগতভাবে দারিদ্র্যের হার কমে আসার ক্ষেত্রেও ঈর্ষাণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু এরপরেও এখনো বাংলাদেশের ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ অপুষ্টির শিকার। যার মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ নারী রক্ত স্বল্পতায় ভূগছে। উত্তরবঙ্গসহ দারিদ্র্যপ্রবণ ৯ জেলায় ও এর বাইরে নদীভাঙন এলাকা, চরাঞ্চল ও হাওর এলাকা, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরের বস্তিবাসী, চা বাগানের শ্রমিক, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায়, হিজড়া সম্প্রদায়, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যান্য অংশ মানবেতর জীবনযাপন করে। এদের খাদ্য ও পুষ্টির দিকে বিশেষ মনযোগ দিতে এবং তা নিশ্চিতে খাদ্য অধিকার আইন প্রনয়ণ জরুরি বলে মত প্রদান করেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প যেমন প্রয়োজন রয়েছে, পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দরিদ্র এবং অতিদরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও প্রকল্প নিতে হবে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে এবং এর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ নিজেরাই নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। সংলাপে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে গণমাধ্য খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণের আলোকে খাদ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশব্যাপি সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবেদন-এর মাধ্যমে নীতি-নির্ধারক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন