শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে

জামালপুরে পাঁচ শিশুসহ নিহত ৬

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশের নদ-নদীর বন্যা পরিস্থিতি কোথাও অবনতি আবার কোথাও উন্নতি হলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ থামেনি। নেই খাদ্য, আশ্রয়, এমনকি কোনো সহযোগিতা। লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ গৃহপালিত পশু, আর মানুষের অবস্থান একই ছাদের নিচে।

দুর্গত মানুষের তুলনায় সরকারি ত্রাণ খুবই কম। ত্রাণ বিতরণের নামে শোনা যাচ্ছে ক্যামেরা ট্রায়ালের প্রতিযোগিতা। বন্যা দুর্গত এলাকায় বহিরাগতদের আসতে দেখলেই বুভুক্ষু মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সর্বত্র ত্রাণের জন্য হাহাকার। শুকনো মুখগুলোর ক্ষয়িষ্ণু কণ্ঠে ত্রাণের জন্য আহাজারি করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বানভাসিদের।

এসব জেলায় অনেক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। হুমকির মুখে বিভিন্ন উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধ, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন সমস্যাও প্রকট হচ্ছে। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা করছেন তারা। বন্যায় জামালপুরে ৫ শিশু ও কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পানিতে পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে কৃষকরা। ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। নষ্ট হয়েছে অনেক ফসলি জমি ও বাড়িঘর। তলিয়ে গেছে কৃষকের আউশ ক্ষেত। বানভাসি মানুষ আশ্রয় ও ভাঙনের ঝুঁকিতে দুর্গত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ। শিক্ষার্থীরা কবে নাগাদ তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিরতে পারবে তা কেউ বলতে পারছে না।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত হলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুন। নেই খাদ্য। নেই বিশুদ্ধ পানি। নেই শৌচোকর্ম সারার সু-ব্যবস্থা। প্রকৃতির ডাক এলেই চরম ভোগান্তিতে পড়ে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। কারো ঘরে রান্না হলেও নেই তরকারী। ফলে শুকনো ভাত লবণ দিয়ে খাওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। এ দর্ভোগ জেলার প্রায় সাড়ে ৮লাখ বানভাসি মানুষের।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নে পানিতে পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বন্যার পানিতে পড়ে মৃত্যু বরণ করেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪জনে। এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী এবং রাজিবপুর উপজেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা এবং বন্যা মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর দাবি জানিয়ে গণফোরামের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জামালপুর : জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার পৃথক সময় ও স্থানে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানান, বকশীগঞ্জের সূর্যনগর পূর্বপাড়া গ্রামের শাহীন মিয়ার মেয়ে সুজুনী আক্তার (১১), একই গ্রামের সোলায়মান হোসেনের মেয়ে সাথী আক্তার (৮) ও মাসুদ মিয়ার মেয়ে মৌসুমী আক্তার (৮) বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলায় উঠে খেলা করছিল। এ সময় ভেলাটি উল্টে ওই তিন শিশু পানিতে পড়ে যায়। সুজুনী আক্তার ও সাথী আক্তার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় পানিতে হাবুডুবু খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে মৌসুমী আক্তার। পরে স্থানীয়রা মৌসুমীকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

বিকেলে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবেরচর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ইয়াছিন মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়ার (২) মৃত্যু হয়। এছাড়াও মেরুরচর ইউনিয়নের রবিয়ারচর গ্রামের আব্দুল্লাহ (৭০) নামে এক বৃদ্ধ তার ঘরের পেছনে বন্যার পানিতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে যান। পরে তার লাশ পানিতে ভেসে উঠে।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীর ভাঙ্গনে বলইবুনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রেণিখালী গ্রামে রাস্তাসহ দুই একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাস্তা, পুকুর, গাছসহ দুই একর জমি ভেঙ্গে নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। যার ফলে ওই গ্রামের সাথে কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মাদারীপুর : পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা চরাঞ্চলের ৩ ইউনিয়নে নদী ভাঙন ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। ভাঙ্গনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে অর্ধশত ঘরবাড়ি, ১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে ৮টি স্কুল ভবন, ২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হাট-বাজারসহ ৩টি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা হাজারো বসতবাড়ি।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, কালুখালী উপজেলার কালিকাপুরসহ মোট ৯ টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ। পানিবন্দি কাওয়াজানি গ্রামের বাসিন্দা শুকুরজান বেগম জানান, বাড়ি ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় এখন আর বসবাসের উপযোগি না থাকায় রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন তার পুরো পরিবার। অভাব দেখা দিয়েছে পশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি।

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ২শ ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন পানিতে নিমজ্জিত অপরদিকে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে তুলনামূলক উচুস্থানে নির্মিত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার্ত মানুষজন গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজসহ ২শ ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান রোববার (২১ জুলাই) পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন