বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতের পানিতেই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই বন্যায় এখন দেশের উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চলে সর্বস্বহারা বন্যার্ত মানুষের হাহাকার চলছে। নতুন করে আরো পাঁচটি জেলায় পানি প্রবেশ করেছে। শুকনো আশ্রয় ও খাবারের সন্ধানে ছুটছে বানভাসি মানুষ। কোথাও ত্রাণের গাড়ি কিংবা নৌকার সংবাদ শুনলেই ছুটে যাচ্ছে তারা। অনেকেই পরিবারসহ ডিঙি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ছোট ছোট নৌকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেকের। ত্রাণের অভাবে যখন করুণ অবস্থা তখন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ঢাকায় বসে গলাবাজি করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ পৌঁছেনি এখনো। গতকাল (রোববার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বন্যার কারণে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে চার দিনে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে তিন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সহায়-সম্পদ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বন্যার্তরা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেটা আমরা লক্ষ করছি না। সরকারের চরম উদাসীনতা প্রমাণ করে জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনবিদ্বেষী। সরকারের দায়িত্ব বন্যাকবলিত মানুষকে রক্ষা করা। যেটা সরকার করছে না।

বন্যার্তদের জন্য বিএনপির উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এ লক্ষ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

সরকারের টপ টু বটম লুটপাট-ঘুষ-দুর্নীতিতে ব্যস্ত অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন অন্ধকারে নির্বাচিত সরকার দুর্নীতিকে পুরোমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে ফেলেছে। সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। চার দিকে চলছে দুর্নীতির উৎসবের আতশবাজী। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। আইনের শাসন ও সুশাসন এখন ইতিহাসের পান্ডুলিপিতে অবস্থান করছে। দুর্নীতির বিরূপ প্রভাবে অগ্রগতি থমকে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতির ‘ইনডেমনিটি প্রতিষ্ঠান’ দুর্নীতি দমন কমিশন ও এর চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিয়ে বলছেন- ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ হবে না।’ এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খেতে বলেছিলেন। যখন দেশে প্রশাসনিক স্তরে অতি উচ্চমাত্রার দুর্নীতির সংস্কৃতি বিরাজমান, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতেও টেবিলের নিচে আর্থিক লেনদেন করতে হয়, তখন মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের কাছে এই ‘উৎসাহ বার্তা’ দেয়া হচ্ছে যে, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য অপরাধের একটি চিহ্ন রেখে যাওয়ার মতো বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, খোদ দুদক কর্মকর্তাদেরই যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ বেরিয়েছে তখন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির পক্ষে দুদক প্রধানের সাফাই গাওয়া ছাড়া তো আর অন্য কোনো বিকল্প থাকে না। চার দিকে যখন দুর্নীতিবাজদের উল্লাস, যখন শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি চলছে অবাধে তখন দুর্নীতিই যে এই দুর্নীতিবাজ সরকারের ভুষণ, দুদক চেয়ারম্যানের কথায় সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ দুদক চেয়ারম্যান নিজেই স্বীকার করেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ৭০ ভাগ দুর্নীতির মামলা দিচ্ছেন পুঁটিমাছের বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, সরল বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন চলছে চরম নৈরাজ্য। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। সরকারি কর্মকর্তাদের ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’-এর কারণে গত এক দশকে এই সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি। সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতির কারণে নিচতলা থেকে দোতালায় একেকটি বালিশ তোলার খরচ পড়েছে সাড়ে সাতশ’ টাকা, ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডের ৮১০ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলেও কারো কোনো বিকার নেই। রেল লাইন কিংবা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ। প্রতিটি প্রকল্প খরচ এখন বেড়ে যাচ্ছে চার-পাঁচগুণ। জনগণ মনে করে, এ দেশে গত দশ বছরে উন্নয়ন হয়েছে এসব ‘সরল বিশ্বাসী দুর্নীতিবাজ’দের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন