শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এবার ঝাড়খন্ডে গণপিটুনিতে খুন দম্পতিসহ চার জন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কখনও গো-রক্ষার নামে, কখনও শিশু চুরির অপবাদ দিয়ে ভারতে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিহারে তিন জনকে পিটিয়ে মারার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। এবার ঝাড়খন্ডে ডাইনি অপবাদে এক দম্পতি-সহ চারজন আদিবাসীকে পিটিয়ে, গলা কেটে খুন করল গ্রামবাসীরা। নিহতদের মধ্যে দু’জন পুরুষ ও দু’জন মহিলা। ঝাড়খন্ডের গুমলার সিয়াসি থানা এলাকায় শনিবার ভোর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, সরেজমিন খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিস্থিতি। বাঁশ-লাঠি-লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো এবং তার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করা হয়েছে চার জনকে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গুমলার জেলাশাসক অঞ্জনীকুমার ঝা বলেন, ‘কুসংস্কারের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে।’
তবে নিহতদের নাম নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, মৃত দম্পতির নাম চম্পা উরভ এবং পিরা উরভ। অন্য সূত্রে দাবি, নিহত দম্পতি চম্পা ভগত (৬৫) এবং পেটি ভগত (৬০)। নিহত বাকি দুই গ্রামবাসী ভগত (৬৫) এবং ফাগনি দেবী (৬০)। চারটি মৃতদেহই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার ভোর সাড়ে তিনটে থেকে চারটের মধ্যে ১০-১২ জন গ্রামবাসী ওই দম্পতির বাড়িতে চড়াও হয়। তারা প্রথমে ওই দম্পতিকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে অন্য একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেই ঘরেই কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয় ভগত এবং ফাগনি দেবীকে। ডাইনি অপবাদে শুরু হয় বাঁশ-লাঠি দিয়ে বেধড়ক মার। সঙ্গে চলতে থাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ। মারের চোটে এক সময় প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন চার জনই। তখন সবাইকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করে পালিয়ে যায় আক্রমণকারীরা।
গুমলার পুলিশ সুপার অঞ্জনীকুমার ঝা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ডাইনি অপবাদেই চার জনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। অন্ধ বিশ্বাসের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে।’ পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তারা গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও এখনও আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এই ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ভোর রাতেই বিহারের সারন জেলার বানিয়াপুর গ্রামে গরু চোর সন্দেহে তিন জনকে পিটিয়ে মারে দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয় ভারত জুড়ে। এর আগে গত ২২ জুন ঝাড়খন্ডেরই সরাইকেলায় ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় এক যুবককে পিটিয়ে মারা হয়। সে ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। পরপর এভাবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেও তা রুখতে না পারায় স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ-প্রশাসনের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত কয়েক বছরে গণপিটুনি এবং পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু ২০১৬-২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত দুই হাজার আটটি সংখ্যালঘু ও দলিত হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে তাদের কাছে। যার মধ্যে ৮৬৯টি ঘটনাই ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। সূত্র : এনডিটিভি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন