শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছে নিষ্ঠুরতা

ছয় মাসে গণপিটুনিতে ৩৬ জন নিহত : আহত শতাধিক

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আট মাস আগে একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে (৬) নিয়ে অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায় স্ত্রী শামসুন্নাহার। এরপর থেকেই একা হয়ে যান বাকপ্রতিবন্ধী মো. সিরাজ। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় দুঃখ বুঝানোর তেমন কেউ ছিল না। স্ত্রীকে ভুলে গেলেও মেয়েকে ভুলতে পারেননি তিনি। তাই তাদের চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই মেয়ের খোঁজ নিতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন সিরাজ। একপর্যায়ে দুই মাস আগে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আলামিননগর এলাকার রাস্তায় মেয়ে সাদিয়াকে দেখতে পান সিরাজ। সেই থেকে তিন-চার দিন পরপরই সকালে স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় মেয়েকে দেখতে যেতেন তিনি। এ ধারাবাহিকতায় গত ২০ জুলাই শনিবার সকালে মিজমিজি আলামিননগর এলাকায় মেয়েকে দেখতে যান সিরাজ। আর সেই দেখাই বাবা-মেয়ের শেষ দেখা। এ সময় ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে অপরিচিত কাউকে দেখলেই নৃশংস ও অমানুষিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। গত ৪ দিনে ৭ জন নিরপরাধ মানুষ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অর্ধশত। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা দায়ের ও জড়িতদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। কারা এমন গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করছে, তাদের শনাক্তে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। একই সঙ্গে গণপিটুনির শিকারের প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। এ ধরনের হত্যা বন্ধে পুলিশের সব ইউনিটকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কেন্দ্রিক টহল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং ও মিডিয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সচিবালয়ে বলেছেন, ছেলেধরা গুজবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজন সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই মানুষ আজ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা নেই। মানুষ যখন নিজের হাতে আইন তুলে নেয় তখন সেটা একটি দেশের জন্য অশনিসংকেত। যেভাবে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিরাপরাধ মানুষ মারা হচ্ছে এটা সমাজের বিরাট অবক্ষয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রæতার জের ধরেও জনতাকে দিয়ে হত্যা করাতে কাউকে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ‘ছেলেধরা’ আখ্যা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। ফলে যেকোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেকোনো সময় এই ঘটনার শিকার হতে পারেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিনেই বিভিন্ন স্থানে ৭ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) সারাদেশে ৩৬ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। গণপিটুনির শিকার ব্যক্তিদের পরিচয় পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারী, মানসিক রোগী, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধাসহ নিরীহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গত শনিবার গণপিটুনির শিকার হয়ে জীবন দিতে হলো তাসলিমা বেগমকে। মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের বৈরাগীর বাজারে গতকাল সকালে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে ঘুরতে দেখে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করা হয়। পরে একটি গাছের সাথে বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে। এ দু’টি ঘটনায় নাড়া দিয়েছে মানুষকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো তৎপরতার অভাবে সমাজে এমন মর্মান্তিক ও জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, আতঙ্ক তৈরি হলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিজেদের হাতে তুলে নেয়া কোনো সময় সমর্থনযোগ্য নয়। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর কাজ হবে, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে, এলাকা ভিত্তিতে তৎপর হয়ে কাজ করা, খেঁাঁজখবর রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া। পাশাপাশি এজন্য গোয়েন্দা ইউনিটের আরো সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে এ পর্যন্ত যত নিহতের ঘটনা ঘটেছে পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না দেয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হচ্ছে।
র‌্যাব সদরদফতরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, গুজব প্রতিরোধে র‌্যাব সব সময় তৎপর রয়েছে। মাথা কাটা গুজব প্রতিরোধেও কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১২ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। পুলিশের হাতেও আটক হয়েছে কয়েকজন। গুজব রটনাকারীদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারহানা রহমান বলেন, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের পুলিশ, আদালত ও কারাগার এই তিনটি উপাদান সমাজে অনুপস্থিতিকে এমন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এর পেছনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, মানসিক অস্থিরতা এবং মাদকাসক্তিসহ নানা কারণ জড়িত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে যে ৩৬ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি, ১৭ জন। এ ছাড়া ঢাকায় ৯ জন, খুলনায় ৫ জন, সিলেটে ২ জন, বরিশালে ২ জন এবং রাজশাহীতে ১ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
সতর্ক থাকার নির্দেশ পুলিশ সদর দফতরের
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি বন্ধে পলিশের সব ইউনিটকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কেন্দ্রিক টহল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং ও মিডিয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত রোববার পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (অপারেশনস) সাঈদ তারিকুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠি পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের কোন ইউনিট কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ সদর দফতরে ফ্যাক্সের মাধ্যমে জানাতেও বলা হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে সারাদেশে ২২টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে ছেলেধরা সন্দেহে অন্তত ২২টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন ও আহত হয়েছেন আরও ৫০ জন।
গত রোববার সকালে ছেলেধরা সন্দেহে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ছয় জেলেকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কুসম্বা ইউনিয়নের বুড়িদহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার রাজশাহীর তানোরে ছেলেধরা সন্দেহে পৃথক স্থানে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। ওইদিন বিকেলে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বহাড়া ও কামারগাঁ ইউনিয়নের কচুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার রাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে গণপিটুনির পর পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। রাত ৮টার দিকে গৌরীপুর ইউনিয়নের হিম্মতনগর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ছেলেধরা সন্দেহে রাসেল মিয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনির পর পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী। আটক রাসেলের দাবি, তিনি ফুল ব্যবসায়ী। রাত সাড়ে ৯টায় ফতুল্লার শিহারচর লালখাঁ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে একজন যুবক নিহত ও আরেক নারী আহত হন। তবে তাদের গণপিটুনির পরও তারা ছেলেধরা কি না সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একই দিন ভোরে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করতে গিয়ে অভিভাবকদের গণপিটুনির শিকার হন রেনু নামে এক নারী। তার চার বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে দিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ফিরেছেন লাশ হয়ে। সন্দেহজনক আচরণের কারণে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
একই দিন সাভারের ফল ব্যবসায়ী রাসেল মিয়াকে, পাবনায় এক যুবককে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এ দিন সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকায় এক শিশুকে বিস্কুট খাওয়ানোর সময় এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় অপরিচিত হওয়ায় তিন ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে আহত ও ১১ জুলাই চাঁদপুরে মনু মিয়া (৪০) নামের একজনকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেয়া হয়। পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে মনু মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। চালচলনে সন্দেহ হওয়ায় তাকে গণপিটুনি দেয়া হয়।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ছেলেধরা সন্দেহে হাসিব বাপ্পি (২৭) নামের এক যুবককে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সোমবার সকালে সদর উপজেলার শেখের ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বাপ্পি বরিশাল শহরের রূপাতলী খান সড়ক এলাকার মো. সোহরাব হোসেনের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, হাসিব বাপ্পি একজন পেশাদার চোর ও মাদকসেবী। তার বিরুদ্ধে বরিশালের কোতয়ালি থানায় ছয়টি চুরির মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, হাসিব মির্জাপুর গ্রামের আলমগীর সিকদারের বাড়ির চারপাশে কিছু সময় সন্দেজনকভাবে ঘোরাঘুরি করে। পরে সে স্থানীয় পনির সরদারের ঘর থেকে একটি বটি ও একটি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করে পালানোর চেষ্টা করে। তার হাতে বঁটি দেখে স্থানীয় লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাকে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার জানান, সাভারে ছেলে ধরা সন্দেহে ভাড়াটিয়া দম্পতিকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- রনি মিয়া (২৩) ও তার স্ত্রী বিলকিস খাতুন (২০)। তাদের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার গোদাগাড়ী থানার সাহেব বাজার গ্রামে। তারা পৌর এলাকার রাজাবাড়ি মহল্লার আমিনুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গতকাল সোমবার দুপুরে সাভার পৌর এলাকার রাজাবাড়ি মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
সাভার মডেল থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, ছেলে ধরা সন্দেহে রাজাবাড়ি মহল্লার বাসিন্দারা এক দম্পতিকে মারধর করে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে এই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছে, চলতি মাসেই আমিনুর রহমানের বাড়ির কক্ষটি ভাড়া নিয়েছেন তারা। তারা কিছু দিন ভাড়া থেকে ভাড়াটিয়াদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে তাদের অজ্ঞান করে ঘরের সমস্ত মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়াই তাদের মূল কাজ।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ছেলেধরা সন্দেহে হাসিনা বেগম (৬০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করেছে এলাকাবাসী। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতপুর থানার পাশর্^বর্তী শিতলাইপাড়া গ্রামে নির্মম ও অমানবিক এ ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে তিনজনকে আহত করেছে স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- জনি, সোহেল ও হৃদয়। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওসি রেজাউল করিম জানান, তিনজনকে পিটিয়ে আহত করার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
বাঁশখালী থানার রামদাস মুন্সীর হাট তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মামুন হাসান জানান, গণপিটুনির শিকার তিনজনই বলেছেন, তারা ছাগল কিনতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
৫ এনজিও কর্মীকে গণপিটুনি
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ছেলেধরা সন্দেহে ৫ এনজিও কর্মীকে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। গতকাল দুপুরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রাওথা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- ঢাকার লালবাগের অধিবাসী আব্দুল কাইয়ুম, গোপালগঞ্জের আবুল হোসেন, হাফিজুর রহমান, রেজাউল করিম ও আবুল কালাম। তারা আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার নামে একটি এনজিওর কর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। তবে রাওথা গ্রামে অধিবাসীরা তাদের সন্দেহ করেন। একপর্যায়ে তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে স্থানীয়রা। এ সময় অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করলে স্থানীয়দের সন্দেহ আরো প্রবল হয় এবং সবাই তাদের ধরে পিটুনি দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Shamaun Iqbal Shamun ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
বিচারহীনতার কারনে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা থেকে সরকারের উপর মানুষের দীর্ঘদিনের পুষে রাখা গোপন ক্ষোভ এবং আক্রোশ তো পূর্ব থেকে আছেই, এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রতিনিয়ত ছেলেধরার খবরে সরকারের তরফ থেকে প্রতিরোধ কিংবা পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার কারণে মানুষের মনের মধ্যে তৈরি হওয়া একধরণের নিরাপত্তাহীনতা এবং মানসিক অবসাদ! যার ফলে যখন কেউ ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে মারতে যাচ্ছে, তখন আসে পাশের মানুষরাও রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, অভিমান থেকে নিজেও সহিংস হয়ে উঠছে! সরকারের পক্ষে এই গণপিটুনি বন্ধ করা কষ্টসাধ্য, কারণ সরকারের সেই নৈতিক জোড় নাই! এখন একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নাই! হে আল্লাহ! গুজবের গজব থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
Solaiman Mojumder ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
প্রকৃত সত্য না জেনে যারা গুজবে কান দিয়ে এই হত্যায় অংশ নিয়েছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক । আর যারা যারা গণ পিটুনিতে আহত বা নিহত হয়েছে,তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক কর্তব্য বলে আমি মনে করি ।এবং তাদের জন্য ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য আজীবন আর্থিক অনুধানের ব্যবস্থাও করতে হবে ।যদি মৃত ব্যক্তিটি নির্দোশ হয়।
Total Reply(0)
Ruhul Amin Rumi ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
আইন করে কোনো লাভ নেই, কেননা যারা ভালো লোক তাদের না বললেও তারা দায়িত্বশীল থাকবে, আর যারা খারাপ লোক তারা আইন ফাঁকি দেওয়ার কোনো না কোনো পথ বের করে নেবে। __প্লেটো সচেতনতা সৃষ্টি করতে পুলিশকে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
Total Reply(0)
Md Shahin Gazi ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
বিচার ব্যবস্থা এবং পুলিশের উপর অনাস্থার স্বীকার হচ্ছে নিরাপরাধ মানুষ গুলো
Total Reply(0)
Azad Khan ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
বিশেষ করে পুলিশের উপর জনগণের আস্থা নেই বলে ঘটনা ঘটেছে,,
Total Reply(0)
Jalal Uddin Ahmed ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
Parliament have not been peoples voted, rather midnight vote rigging 99.97% ballot by hidden way. Laws orders less situations remaining in the country.
Total Reply(0)
Omar Faruk Parves ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
দোষ জনগনের নয়”। দোষ আইন এবং বিচার ব্যবস্থার। পুলিশের উপর মানুষ আস্থা রাখতে পারে না বলেই, গনপিটুনির পথ বেছে নিচ্ছে আজ। খুনের আসামি ধর্ষনের আসামি, মানব পাচারের আসামিদের মতো জানোয়ার রা সহজে জামিন পাচ্ছে কেন? তাসলিমা আপুর ঘটনা ছিলো, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এবং নির্বোধ কিছু বাঙ্গালীর কাজ। এর জন্য আমরাই দায়ী। কিন্তু গলাকাটা বা মানব পাচারের ঘটনা কিন্তু থেমে নেই! কি করছে পুলিশ? জনগনের আগে কি তারা সেই পাচারিদের ধরতে পেরেছে? পুলিশ শুধু বলে’ গুজবে কান দিবেন না।
Total Reply(0)
Ziared Rahman ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
দেশে আইন আদালতে বিচার না থাকার কারনে মানুষ আইনের উপর বা পুলিশের উপর নির্ভর করতে পারে না। যার কারনে এ অবস্থা।
Total Reply(0)
রিয়াদ আহসান রানা ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
সন্দেহ হলে তাকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে পারে।কয়েকজন মিলে এই উদ্যেগ গ্রহন করতে পারে।কিন্তু অযাচিতভাবে শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কাউকে হত্যা করতে উদ্যত হওয়া কখনো স্বাভাবিক মানুষের পরিচয় হতে পারে না।যার যার এলাকায় গণসচেতনতা তৈরি করা এখন অবশ্য করনীয় হয়ে পড়েছে।কারন এইসব গণপিটুনির শিকার আপনার আমার আত্মীয়স্বজন ও হতে পারে।
Total Reply(0)
Ashik Alfaz ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
তড়িৎ বিচার করার অধিকার কে দিয়েছে? আর বিচারব্যবস্থা আর সরকারও এসবের জন্য দায়ী। আইন, জেল শুধু বিরোধীদল আর মুসলমান সাধারন মানুষের জন্য। বাকি সবাই আইনের উর্ধে চলে গেছে। জনগন তো আইন নিজের হাতে তুলে নিবেই বিচার না পাওয়ায়।
Total Reply(0)
Kamal Hossen ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
গণপিটুনির সাথে জড়িতদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার। তা না হলে অাইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে। নিরহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়ে মৃত্যু বরন করবে।
Total Reply(0)
নুরুল আলম ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
যারা সামজিক মাধ্যমে ছেলে ধরার গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে গণপিটুনির মানুষ হত্যার প্রধান আসামী করে গ্রেপ্তার করা হোক । এই পর্যন্ত যত জন গণপিটুনিতে মারা গিয়েছে তাদের মামলাগুলো এইসব গুজব ছড়ানো মানুষের ওপর হত্যার মামলা করা হোক।
Total Reply(0)
নুরুল আলম ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
যারা সামজিক মাধ্যমে ছেলে ধরার গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে গণপিটুনির মানুষ হত্যার প্রধান আসামী করে গ্রেপ্তার করা হোক । এই পর্যন্ত যত জন গণপিটুনিতে মারা গিয়েছে তাদের মামলাগুলো এইসব গুজব ছড়ানো মানুষের ওপর হত্যার মামলা করা হোক।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন