বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

অস্বাভাবিক শেয়ারবাজার

নানা সংস্কারেও ফলাফল মেলেনি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:৪০ এএম

চরম অস্থিরতা কাটাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। শেয়ারবাজারের পতনরোধে গত কয়েক মাসে নানা কার্যকরি সংস্কার করা হয়েছে। তারপরেও শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক পতন হচ্ছে। যদিও আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানির মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা রয়েছে। এছাড়া একটি কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মধ্যে সৃষ্ট দুরত্ব বাজারে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫৯৫০ পয়েন্ট। যা গতকাল ২২ জুলাই কমে দাড়িঁয়েছে ৪৯৬৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ সূচক কমেছে ৯৮৪ পয়েন্ট বা ১৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এই পতনের ফলে সূচকটি বিগত আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। আর এই পতনের কারন অনুসন্ধানে গত রোববার ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।

গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৬৬ পয়েন্টে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শরিয়াহ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে। শেয়ারবাজারে চলমান এ ভয়াবহ দরপতনের কারণে মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনাও কমে গেছে। গতকাল বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে হাতেগোনা কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে দেখা যায়। বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউজে একসঙ্গে দু-তিনজন বিনিয়োগকারীর দেখা মিলেছে। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও এসব ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে জমজমাট ছিল।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দাম নিয়ন্ত্রন করা কমিশনের কাজ না। তাদের দেখার বিষয় হচ্ছে কোন যোগসাজোশ হচ্ছে কিনা। এর বাহিরে দাম উঠলো কি কমলো, সেটা দেখা বিএসইসির কাজ না। সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা। কয়েকজন বিক্রি শুরু করলেই অন্যরা বিক্রি শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে, চলমান পরিস্থিতি ঠেকানো বেশ মুশকিল। তাদেরকে বিচার বিশ্লেষন করে বিনিয়োগ করা উচিত। এখন শেয়ারবাজার অবমূল্যায়িত। ফলে এখন বিনিয়োগের অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু আমাদের বিনিয়োগকারীরা সেদিকে কেনো এগোচ্ছে না, সেটা আমার কাছে পরিস্কার না। আর কোন একটি কোম্পানির ইস্যুতে সার্বিক বাজারে অনাস্থার সৃষ্টি হওয়া উচিত না বলে যোগ করেন তিনি।
গত ১৬ মে দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত বিনিয়োমসীমা সমাধানে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলক্ষ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা থেকে অতালিকাভুক্ত ( ইক্যুইটি শেয়ার, নন-কনভার্টঅ্যাবল প্রিফারেন্স শেয়ার, নন-কনভার্টঅ্যাবল বন্ড, ডিবেঞ্চার, ওপেন-ইন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড) সিকিউরিটিজকে বাদ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে শেয়ারবাজারে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো যাবে। আরআইইউ প্রদানের সুযোগের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা রয়েছে। তবে গত ১৬ জুলাই বিএসইসি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আরআইইউ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আগামিতে বে-মেয়াদী এবং মেয়াদী উভয় ধরণের ফান্ডের ক্ষেত্রেই কেবল মাত্র নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে।
চলমান পতনের শুরুতে আলোচনায় উঠে আসে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য। এর মাধ্যমে টাকা বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুলাই প্লেসমেন্ট শেয়ার বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) পূর্ব ইস্যুকৃত শেয়ারে লক-ইন ২ বছর করে পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধনীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। যা প্রসপেক্টাসের সংক্ষিপ্ত সংস্করন প্রকাশের দিনের পরিবর্তে লেনদেন শুরুর দিন থেকে গণনা করা হবে। তবে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর পরে আইপিও অনুমোদনে ৪ বছরের বেশি সময় লাগা কোম্পানির ক্ষেত্রে ১ বছর লক-ইন করা হয়েছে।

আইপিওতে কোটা বাড়ানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে সাধারন বিনিয়োগকারীরা। এ লক্ষ্যে কমিশন বুক বিল্ডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কোটা ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সাধারন বিনিয়োগকারীদের কোটা ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে। অন্যদিকে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কোটা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারীদের কোটা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

এদিকে বোনাস শেয়ারের অপব্যবহাররোধে আগামিতে কোম্পানির সম্প্রসারণ, সুষমকরন, আধুনীকরন, পুন:গঠন ও বিস্তার (বিএমআরই) এবং গুণগতমান উন্নয়ন ব্যতিত বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা যাবে না বলেও ২১ মে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। বোনাস শেয়ার ঘোষণার নিয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশের সময় বোনাস শেয়ার ঘোষণার কারন এবং এর বিপরীতে রেখে দেওয়া মুনাফা কোথায় ব্যবহার করা হবে,তা উল্লেখ করতে হবে।

যোগ্য বিনিয়োগকারীরা যোগসাজোশের মাধ্যমে অতিমূল্যায়িত কাট-অফ প্রাইস নির্ধারন করায় শুরু থেকেই বিতর্কিত বুক বিল্ডিং পদ্ধতি। এই সমস্যা সমাধানে গত ১৬ জুলাই বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত দরেই নিলামে অংশগ্রহনকারীদেরকে শেয়ার কিনতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এছাড়া যে পরিমাণ শেয়ার কেনার জন্য দর প্রস্তাব করবে, সেই পরিমাণ কিনতে হবে। এই পদ্ধতিতে নিলামে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত শেয়ার সম্পূর্ণ বিক্রি না হলে, সেই ইস্যু বাতিল করা হবে। এই পদ্ধতিতে বিডারদের নাম ও তাদের প্রস্তাবিত দর প্রদর্শন করানো যাবে না। আর বিডিংয়ের জন্য নিলামকারীদেরকে শতভাগ অর্থ সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে শেয়ার সর্বোচ্চ দর প্রস্তাবকারী থেকে বিতরন শুরু হবে, যা ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নামবে এবং যে মূল্যে বিতরন শেষ হবে, সেটাই কাট-অফ প্রাইস হবে। সাধারন বিনিয়োগকারীরা সেই মূল্য থেকে ১০ শতাংশ কমে শেয়ার ক্রয় করবেন।

এছাড়া পরিচালকদের পৃথকভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শেয়ার ধারন কড়াকড়ি আরোপ, ঘোষণা ছাড়াই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির রাস্তা বন্ধ, সেকেন্ডারিতে স্বল্প শেয়ারের কারনে কারসাজিরোধে আইপিওতে ফিক্সড প্রাইস মেথডে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা ও বুক বিল্ডিং মেথডে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিএসইসির পাশাপাশি শেয়ারবাজারকে সহযোগিতার জন্য অর্থমন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রণোদনা স্কীমের আওতায় আদায়কৃত (সুদ ও আসল) ৮৫৬ কোটি টাকা পুণ:ব্যবহারের অর্থাৎ আবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সম্মতি দেয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন