বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মাদরাসা শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরও সময় উপযোগী করতে হবে -শাব্বির আহমেদ মোমতাজি

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ৮:২৮ পিএম

জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব আলহাজ্ব শাব্বির আহমেদ মোমতাজি বলেছেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থেকে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা বান্ধব। ইতিমধ্যেই মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন ও আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের ৫৫১ টি মাদরাসা এমপিও ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুশির সংবাদ। এখন আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মাদরাসা শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরও সময় উপযোগী করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের মেধা যোগ্যতা ও দক্ষতাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।
গতকাল বিকেলে রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদরাসার অডিটোরিয়ামে ‘বর্তমান সরকারের মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে অবদান শীর্ষক’ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহীর মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
দারুস সালাম কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আলহাজ¦ মো. সারওয়ার কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট ও দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মো. উবায়দুর রহমান খান নদভী, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মো. মোকাদ্দাসুল ইসলাম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশেনের মেয়রের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্ঠা সৈয়দ আমিন উদ্দিন মাহমুদ, যশোর আমানিয়া কামিল মাদরাসার উপাধাক্ষ্য ও জমিয়তে মোদারেছীনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মো. সালাউদ্দিন প্রমূখ।
মহাসচিব শাব্বির আহমেদ মোমতাজি বলেন, আমাদের দেশ বিভিন্ন সময়ে আন্তজার্তিক চক্রান্তের শিকার হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আমাদের এই চক্রান্তের হাত থেকে রক্ষার জন্য আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আলেমদেরকেই সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে হবে। এই মহুর্তে দেশে পদ্মা সেতুতে মাথা প্রয়োজন এই গুজব নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। তিনি বলেন, এটা একটি ব্যাপক ষড়যন্ত্র, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য, সরকারকে উন্নয়নমূললক কর্মকা-কে বিতর্কিত করার জন্য কোন গোষ্ঠি এই কাজ করেছে। মাদরাসা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই অবস্থায় আলেমদের সোচ্চার হতে হবে। তাদেরকে সচেতনামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
জমিয়াতুল মোদারেছীন একটি ঐক্যবদ্ধ সংগঠন, এই সংগঠনে কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি কখনো পারবেও না।
তিনি বলেন, নতুন করে সরকার ৪৩১২ টি মাদরাসা তৈরী করছেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাষ্ট হচ্ছে। এটা ভালো উদ্দ্যোগ। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা আগামীতে এই সমস্যা সমাধান হওয়ার পথে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে মাদরাসা শিক্ষকদের বয়স ৬০ থেকে ৬২ করার দাবি মোদার্রেছীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা আশা করি এটা বাস্তবায়ন হবে। আমরা সরকারের সফলতার জন্য শুকরিয়া মাহফিল করেছি। আমাদের নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে, আমাদের নিজেদের সন্তানদের আগে মাদরাসায় পড়াতে হবে। বিভিন্ন আন্তজার্তিক যড়যন্ত্র আমাদের দেশের চতুদির্কে ঘিরে ধরেছে, যুব সমাজ আজ অনৈতিকতার দিকে যাচ্ছে, মাদকে আশক্ত হচ্ছে এদেরকে এই কাজগুলো থেকে বিরত রাখতে চেষ্ঠা করতে হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট ও দৈনিক ইনকিলাবে সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মো. উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, মসজিদের ইমাম এবং মাদরাসার শিক্ষকরা দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। আলেম-ওলামাদের সচেতনার কারণে আজ দেশ থেকে মাদকের হার কমে গেছে। সন্ত্রাসের হার কমে গেছে। ইমামরা জুম্মার দিন ও শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতশত ইসলামিক জলসার মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দেন। কল্যাণের পথে আহ্বান করেন। বর্তমানে গুজবের মাধ্যমে যে মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে এ সম্পর্কে আলেম সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, এদেশে একটা সময় জঙ্গিবাদেও উত্থান হয়েছিলো। সেই সাথে রাজশাহীতেও এর বিশাল প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমাদের দেশ তা থেকে রক্ষা পেয়েছে। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, ককটেল, বোমা এর কোন স্থান নেই। কিছু বিভ্রান্ত মানুষের কারণে আজ ইসলামকে কটাক্ষ করা হয় বিভিন্ন ভাবে কিন্তু ইসলামের সাথে এই জঙ্গিবাদেও কোন সম্পর্ক নেই। তাই আলেমদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। তাদেরকে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করেত হবে। কিছু মানুষের ভূল আচরণের কারণে সমাজের পরিবেশ নষ্ট হয় আবার কিছু মানুষের সমাজ উন্নয়নমূল কারেণে সমাজের পরিবেশ আরো মজবুত হয়।

তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র থাকার পরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত প্রচেষ্ঠায় ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে দেশের মানুষ ইসলাম সুন্দর ভাবে পালন করছে। আর এই কারণে দেশের আলেম-ওলামারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইসলামী প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ ইসলামকি ফাউন্ডেশন। আর এটা বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে দেশে ইসলামের ব্যাপক খেদমত হচ্ছে। তিনি বলেন, সন্তানরা যেন আলেম ওলামা হওয়ার পর কারিগরি বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। তাহলে দেশে নৈতিক অবস্থা ঠিক থাকবে। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষায় পরিপূর্ণ মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাসে কর্মমুখী কারিগরী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
বক্তারা সব্ইা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জমিয়াতুল মোদারেছীন ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা আলেমকুল শিরোমনি আলহাজ¦ মাওলানা এম.এ মান্নান (রহ) এর নাম। তার দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে জমিয়াতুল মোদারেছীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও সংগ্রাম করার মাধ্যমে এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তরা দৈনিক ইনকিলাবের সম্মানিত সম্পাদক ও জমিয়াতুল মোদারেছীনের বর্তমান সভাপতি এ.এম.এম বাহাউদ্দিনকে ধন্যবাদ, দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করে বলেন, তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে তিনি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সুচিন্তা, দক্ষতা ও কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সরকার জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মেনে নিয়েছে।
শেষে দোয়া পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা মো. আব্দুল গফুর মিঞা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন রাজশাহীর জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন দারুস সালাম কামিল মাদরাসার সম্মানিত অধ্যক্ষ সাইয়্যেদ মাওলানা এইচ এম শহিদুল ইসলাম।
দারুস সালাম কামিল মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. আসিফ পারভেজের পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন