বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিনিয়োগে আসছে সুখবর

সঞ্চয়পত্র, পুঁজিবাজার, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা ও আবাসন খাতে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত সুযোগ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম

বিনিয়োগে সুখবর আসছে। বাজেট ঘোষণার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জনগণ সুফল না পেলেও অল্প দিনের মধ্যেই সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র, পুঁজিবাজার, রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে প্রণোদনা এবং আবাসন খাতে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে। সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা এবং জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আবাসন খাতের জন্য সু-খবর আসছে। বাজেট ঘোষণার পর এসব নির্দেশনা দিয়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান; দেশে ফিরে এসে দেখেন এ সবের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সঞ্চয়পত্রে লভ্যাংশের ওপর ৫ শতাংশ, পুঁজিবাজারের স্টক ডেভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর আদায় করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ‘সবার জন্য আবাসন কেউ থাকবে না গৃহহীন’ বাস্তবায়নে জমি রেজিস্ট্রি ফি কমানোর যে কথা বলেছেন সেটাও বাস্তবায়ন হয়নি। পুঁজিবাজারে আস্থাহীণতা বিরাজ করছে। ফলে আশাহত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অর্থমন্ত্রীরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। সাধারণভাবে দায়ভার অর্থমন্ত্রীরও। যদিও চিকিৎসা শেষে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

চলতি অর্থবছর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিক্ষিত এই বাজেটে কাউকে বিপদে ফেলবেন না, অসন্তুষ্ট করবেন না বা হয়রানি করবেন না এমন প্রত্যয় করেছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই এগুচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এক ডেঙ্গু জ্বর সবকিছ্ ুবুমেরাং করে দিয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় অনেক কিছু সংশোধন করতে না পারলেও চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বার্থে কিছু কিছু বিষয়কে বিবেচনায় নিবেন এমন আশা করেছিলেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে জনস্বার্থে কিছু কিছু বিষয়কে সংযোজন-বিয়োজন করতে বলেছিলেন। এর মধ্যে ছিলÑ বাজেটে স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার, প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে উদ্ধুদ্ধ করতে এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর দেয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাদ দেয়ার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বার্থে অর্থমন্ত্রীর এসব কথার প্রতিফলন ঘটেনি।

এখানেই শেষ নয়; ‘সবার জন্য আবাসন কেউ থাকবে না গৃহহীন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রথম বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আবাসন খাতের জন্য সু-খবর নিয়ে এসেছেন। এতে একদিকে ফ্ল্যাটের ব্যবসা যেমন বাড়বে তেমনি সাধারণ ক্রেতারাও স্বস্তি পাবেন। মিথ্যা তথ্য দিয়েও জমি ক্রয় বন্ধ হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। কিন্তু এখনো জনস্বার্থে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এনবিআর থেকে ভূমি অফিসে এখনো এ ধরনের কোনো সার্কুলার জারি করা হয়নি। আর যে কারণে আগের নিয়মেই চলছে জমি রেজিস্ট্রেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষ থেকে সকলেরই আশা ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নতুন আরোপিত উৎসে কর এবং স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর দেয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাদ দেয়া হবে। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে তা উপেক্ষিতই থেকেছে। তাই সঞ্চয়পত্রে নতুন আরোপিত উৎসে কর এবং স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ধার্যকৃত কর বাদ দেয়ার কথা বলেন তারা। এছাড়াও বাজেটে জনস্বার্থে জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আনা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুঁজিবাবজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সবসময়ই অত্যন্ত স্পষ্ট ও আন্তরিক। এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে বিশেষ গুরুত্বও দিয়েছেন। এটিকে ভালো করতে হবে, বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে, অংশগ্রহণমূলক করতে হবে এবং এর গভীরতা বাড়াতে হবে। বাজেটের আগেও তিনি একাধিকবার বিনিয়োগকারীদেরকে তার উপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। আর যে কারণে পুঁজিবাজারে আস্থার সঙ্কট চলছে।

অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠনের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, জনস্বার্থে নেয়া অর্থমন্ত্রীর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। মানুষ উৎসাহ পাবে। পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতে আস্থা ফিরবে। তিনি বলেন, বাজেটে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশে ও স্টক ডেভিডেন্ডে কর বসানোর বিষয়টি অমানবিক। রাশিদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের অনুকূলে বাজেটে যত সুবিধা দেয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের স্বার্থে নেয়া অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা ভাবা যায় না।

সূত্র মতে, ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ব্যয় বর্তমানে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। এই উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক ক্রেতাই ফ্ল্যাট বা প্লট নিবন্ধনের আগ্রহ দেখান না। তাতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব নেতারা দীর্ঘদিন ধরে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর দাবি করে আসছিলো। তারা মনে করেন, নিবন্ধন ব্যয় কমানো হলে সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তাতে ফ্ল্যাটের ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে স্বস্তি ফিরবে।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রী আবাসন খাতের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের দেশের আবাসন খাত দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে রয়েছে। এ খাতটি বিকশিত না হওয়ার অন্যতম কারণ স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর অপ্রদর্শিত আয়ের পরিমাণও বাড়ছে। আমরা সব রেজিস্ট্রেশন ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে আবাসন খাত সম্প্রসারিত হবে এবং রাজস্ব আয়ও বাড়বে। একই সঙ্গে অপ্রদর্শিত আয়ের প্রবণতাও কমে যাবে।

রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল ইনকিলাবকে বলেন, বাজেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে। ফ্ল্যাটের দাম কমবে। তাতে বিক্রি বাড়বে। সরকারও লাভবান হবে। তিনি জনস্বার্থে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষার অন্যতম নাম সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রস্তাবিত বাজেটে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং অর্থ মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত বাজেটে এনবিআরকে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে কোম্পানির নামে এবং পরিচয়পত্রবিহীন বা সকল নিয়ম-কানুন (এনআইডিই-টিন জমা না দেয়া) মানা হয়নি তাদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের কথা বলা হয়। কিন্তু এ নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। বরং গত ১ জুলাই থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লভ্যাংশের উপর উৎসে কর আগের ৫ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশ গণহারে কেটে নিচ্ছে।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে গ্রাহক যদি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা পেয়ে থাকেন, গত ১ জুলাই থেকে তিনি ৫ হাজার থেকে ৫০০ টাকা কম পাবেন। ব্যাংকের কাছ থেকে এ টাকা বুঝে নেবে এনবিআর।

এতে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ, পেনশনার ও গৃহিণীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত আয় উপার্জন নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছেন তারা। সকলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সাধারণ উপকারভোগীদের সুরক্ষার জন্যই সঞ্চয়পত্রের মতো প্রকল্প চালু রাখা হয়েছে। এ কারণে উৎসে কর দ্বিগুণ না করে বরং এই প্রকল্পে ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের আসার পথ বন্ধ করতে হবে। উৎসে কর দ্বিগুণ করার ঘোষণাটি কার্যকর হওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন খাদিজা বেগম নামে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী এক গৃহিণী। তিনি বলেন, বিনিয়োগের নিরাপদ খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের মাঝে নতুন করে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। গ্রাহকরা জানান, ব্যাংকের প্রতি আস্থা নেই। ফলে সঞ্চয়পত্রই ছিল বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান সামগ্রিক আর্থিক খাতে চরম অস্থিরতা চলছে। ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট। গ্রাহকদের জমানো আমানত ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই অবস্থায় আমাদের সঞ্চয়পত্রে করা বিনিয়োগ নিয়েও দু:চিন্তা হচ্ছে।

আগের চেয়ে কম মুনাফা পাওয়ায় নাখোশ অনেকেই। এদেরই একজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা উম্মে হানি সূচনা বলেন, সঞ্চয়পত্রে আমার বিনিয়োগ ছিল ৭ লাখ টাকা। এতোদিন ১ লাখ টাকায় ৯১২ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার এসএমএস আসতো। এখন এসেছে ৮৬৪ টাকা। হঠাৎ করেই এমন করে মাসের আয় কমবে ভাবতে পারিনি। তিনি বলেন, আমার শাশুড়ির নামেও ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল। তারও একই অবস্থা। ফলে সংসারের ও ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।

আরেক গ্রাহক জসিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এখন কর্ম করতে পারি না। বৃদ্ধ বয়সে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নির্ভরশীল ছিল পরিবার। তারপরও যদি বাড়তি উৎসে করের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়Ñ তাহলে সেটা হবে চরম অমানবিক।

সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হানিফ মিয়া বলেন, আমার কথা বাদ দেন। অনেক বিধ্বা আছে এই মুনাফার উপর ভরসা করে টিকে আছে। এছাড়া আমাদের মতো সামান্য মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে নেয়া হলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই সরকারের উচিৎ আমাদের দিকে সুনজর দেয়া।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকা। বৈধ চ্যানেলের পাশাপাশি অবৈধ তথা হুন্ডির মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠান প্রবাসীরা। তবে হুন্ডির মাধ্যমে যাতে প্রবাসীরা আর অর্থ না পাঠান সেজন্য নতুন অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট তিনি উপস্থাপন করেছেন, সেখানে এ প্রস্তাব আসে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রেমিট্যান্সে এ ধরনের প্রণোদনা দেয়া হবে। প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। আর এ জন্য নতুন বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। গত ১ জুলাই থেকে বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হলেও দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি ভালো উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের গাফলতিতে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, পুরনো সঞ্চয়পত্রে নতুন উৎসে কর হার ধার্য করা অনৈতিক। কারণ পুরনো সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হলেও সেই অর্থের কোনো সুবিধা গ্রাহক ভোগ করেননি। বরং সেই অর্থ সরকারের কাছে ছিল। ফলে, গ্রাহককে অতিরিক্ত সময়ের মুনাফা সুবিধা না দিয়ে দ্বিগুণ উৎসে কর ধার্য করা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। পুঁজিবাবজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সবসময়ই অত্যন্ত স্পষ্ট ও আন্তরিক। কিন্তু স্টক ডিভিডেন্ড দিলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর বিষয়টিতে অর্থমন্ত্রীর ছাড় দেয়া উচিত ছিল। কারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখতে ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে উৎসাহ দিতে হবে। ভালো ডিভিডেন্ডের সঙ্গে শেয়ারবাজারের ভালো হওয়া বা মন্দ হওয়া সম্পর্কিত। পুঁজিবাজার শক্তিশালী হলে বিনিয়োগের জন্য অর্থের অভাব হবে না। আশা করি, বাজেটে যেসব বিষয় শেয়ারবাজারের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে, সেগুলো অর্থমন্ত্রী প্রত্যাহার করে নেবেন।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, কোম্পানির স্টক ডিভিডেন্ডে ১৫ শতাংশ কর পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাদ দিতে হবে। তিনি বলেন, এটা শেয়ারবাজারের জন্য নেতিবাচক। একই সঙ্গে বাজেটের পর থেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে এই কর প্রত্যাহার করা দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন