বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অর্থ ব্যয়ের তথ্য চেয়েছে বিটিআরসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

নিজস্ব অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের অতিরিক্ত সক্ষমতা অন্য প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া ভিত্তিতে ব্যবহারের সুযোগ দিতে ২০১৪ সালে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। সেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নীতিমালা লঙ্ঘন করে মোবাইল ফোন অপারেটর রবির সাথে চুক্তির অভিযোগ ওঠেছে। লাইসেন্সের শর্ত ভেঙে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রবিকে অপটিক্যাল ফাইবার সাবলিজ প্রদান, ফাইবার স্থাপন, স্থাপনের সম্পূর্ণ ব্যয় অগ্রীম গ্রহণ, লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটির সুযোগ দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এজন্য ইতোমধ্যে এই চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। সর্বশেষ এই চুক্তির ফলে রবি আজিয়াটা কি পরিমাণ ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন করেছে এবং কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। চুক্তিতে শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাসহ এসব বিষয় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে গত রোববার বিটিআরসির পক্ষ থেকে বিটিসিএল ও রবিকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। একইসাথে লাইসেন্সের শর্ত বহির্ভূত কার্যক্রমের বিষয়ে কোন অনিয়ম হলে রবি ও বিটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকীও দিয়েছে কমিশন।

সারাদেশকে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। ৫টি কোম্পানিকে তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়ক নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি-বিটিসিএল ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ-পিজিসিবি) এবং বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান (ফাইবার এট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন্স)। লাইসেন্সের নীতিমালা অনুযায়ি এনটিটিএন অপারেটররাই সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করতে পারবে। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের দ্বোরগোড়া পর্যন্ত সংযোগ পৌঁছে দেবে। এনটিটিএন লাইসেন্স ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে না।

অথচ গত বছরের ২২ মে বিটিসিএল তার অপটিক্যাল ফাইবার রবি আজিয়াটাকে লিজ দেয়ার জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে। চুক্তির শর্তে উল্লেখ করা হয়, বিটিসিএলের কাজ থেকে লিজ নেয়া অপটিক্যাল ফাইবার রবি অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে (তৃতীয় পক্ষ) সাবলিজ দিতে পারবে। যা এনটিটিএন গাইডলাইনের ৩.০১ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অপর এক শর্তে বলা হয়, রবি লিজ নেয়া ফাইবার নিজের প্রয়োজনে স্থাপন (লে আউট) করতে পারবে। যা এনটিটিএন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো এখতিয়ার নেই।
আরেকটি শর্তে বলা হয়, রবি বা তার মনোনীত তৃতীয় পক্ষ ফাইবার কেটে গেলে, ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা অন্য কোন সমস্যা হলে তা রিপেয়ার বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে। এছাড়া বিটিসিএলের ফাইবার, ডাক, হ্যান্ড হোল, জয়েন্ট বক্স, পপ লোকেশনেও রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হয় রবি ও তার মনোনীত তৃতীয় পক্ষকে।

রাজস্ব পরিশোধের ক্ষেত্রেও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয় চুক্তিতে। সরকারের অনুমোদনক্রমে কমিশন এনটিটিএন লাইসেন্স সংক্রান্ত একটি ট্যারিফ অনুমোদন করেছে। সেখানে ওয়ান টাইম চার্জ (ওটিসি) হিসেবে ফিস এবং চার্জ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু চুক্তিতে বিটিসিএলের লিজ প্রদান করা অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের ব্যয় বাবদ সম্পূর্ণ অর্থ রবি হতে অগ্রিম গ্রহণ করেছে। শর্তে আরও বলা হয়েছে, অপটিক্যাল ফাইবারের লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি রবি নিজেই করতে পারবে। কিন্তু এনটিটিএন গাইডলাইনে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো এই সুযোগ নাই।
লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে চুক্তিতে এসব বিষয় উল্লেখ করায় এবার দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিটিআরসি। উভয় প্রতিষ্ঠানকে দেয়া এক চিঠিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, লাইসেন্সের শর্ত বহির্ভূত কার্যক্রমের বিষয়ে কোন অনিয়ম হলে রবি ও বিটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থার সম্মুখিন হতে হবে। একইসাথে বিটিসিএল ও রবির চুক্তির আওতায় কি পরিমাণ অপটিক্যাল ফাইবার কোর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে এবং কি পরিমাণ রাজস্ব রবি ব্যয় করেছে এ বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এনটিটিএন সেবা নেয়া, অবৈধভাবে সেবা নেয়ায় জরিমানা, সুযোগ না থাকলেও অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের জন্য তৃতীয় পক্ষকে কাজ দেয়া, অপটিক্যাল ফাইবার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নীতিমালা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিঃ (বিটিসিএল) এর সাথে চুক্তিসহ নানা কারণেই বার বার আলোচনায় এসেছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা। গতবছরের সেপ্টেম্বরে লাইসেন্স না থাকা বাংলাফোনের কাছ থেকে এনটিটিএন সেবা নেয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবিকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি। এ বিষয়ে রবি ও বিটিসিএলের সাথে যোগাযোগ করলেও উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো তারা এখনো চিঠি পাননি। পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

এ বিষয়ে বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসি গত ২৭ ডিসেম্বর বিটিসিএলকে তাদের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ প্রসঙ্গে একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে বিটিসিএল বিভিন্ন এএনএস অপারেটরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে এএনএস অপারেটরদের সহযোগিতায় নতুন অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, লিজ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করিয়ে নিচ্ছে, যা এনটিটিএন লাইসেন্সের গাইডলাইনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।’ চিঠিতে বিটিসিএল ও রবির চুক্তির বিষয়ে বলা হয়, ‘এতে বেআইনিভাবে তৃতীয় পক্ষকে দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন, স¤প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ লাস্ট মাইল সংযোগ নিশ্চিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ চুক্তিতে বিটিসিএলের অনুমোদন ছাড়া রবি আজিয়াটা দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক লিজ/সাবলিজ দিতে পারবে বলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। সর্বশেষ গত এপ্রিলেও লাইসেন্স বহির্ভ‚ত ওই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে বিটিসিএলকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। আর ওই চিঠির জবাবে বিটিসিএল জানায়, তাদের মধ্যকার চুক্তির মধ্যে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন