শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

‘স্বভাব না বদলিয়ে হজে গিয়ে লাভ নেই’

ঢাকা চেম্বারের কর্মশালায় এনবিআর চেয়ারম্যান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১১:৫৯ পিএম

স্বভাব না বদলিয়ে ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের হজে গিয়ে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, অনেক কর্মকর্তা হজে যাচ্ছেন। হজে যাওয়ার পর যদি তাদের স্বভাব না বদলায় তাহলে হজে গিয়ে কী লাভ? নতুন ভ্যাট আইনের ওপর আয়োজিত কর্মশালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ভ্যাল্ ুএ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) এবং সাপ্লেমেন্টারি ডিউটি এ্যাক্ট ২০১২’ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবেই দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যারা মেশিন নষ্ট করবে তাদের দায়ী করা হবে। ব্যবসায়ীদেরও, আমাদের কর্মচারীদেরও। মেশিন নষ্ট করা যাবে না, নষ্ট করলে আপনার নিজের পয়সায় আবার সেটা লাগিয়ে দিতে হবে। একটা মেশিন কিনে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবদ্ধি ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে আভ্যন্তরীন চাহিদা বাড়ার পাশপাশি সরকারের ব্যয়ের পরিমাণও বৃদ্দি পাচ্ছে। তিনি জানান, বাজেটে বিদেশী সহায়তা জিডিপির ২ শতাংশ, যা সামগ্রিক বাজেটের ১৩-১৪ শতাংশ। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার বিশে^র অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। একই সঙ্গে আমাদের ভ্যাট ও ট্যাক্স আহরণের পরিমাণও তুলনামূলক হারে বেশ কম। নতুন ভ্যাট আইনের মাধ্যমে এর আহরণ বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়ানো একান্ত আবশ্যক।


বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি দিনব্যাপী আয়োজিত এ কর্মশালায় যোগদান করেন। এনবিআর ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন এবং ডিসিসিআই’র ট্যাক্স কনসালটেন্ট স্নেহাশীষ বড়–য়া নতুন ভ্যাট আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রশিক্ষনার্থীদের সম্যক ধারণা দেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যদিও রাজস্ব আহরণের প্রাক্কলন ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তিনি নতুন ভ্যাট আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কর কর্মকর্তাদের থেকে কোন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন না মর্মে, আশ^াস প্রদান করেন এবং এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আরো কর আহরণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।


ওসামা তাসীর বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মূসক থেকে সর্বাধিক পরিমাণ ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট মুক্ত সীমা ৫০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ, ভ্যাট রিফান পদ্ধতি এবং ক্যাপিটাল মেশিনারীজ আমদানীতে অগ্রিম কর অব্যাহতি ইত্যাদি পদক্ষেপ বেসরকারীখাত নির্ভর অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানির উপর অগ্রীম কর অব্যাহতি, ভ্যাট প্রদানে অন্যান্য স্ল্যাবের ক্ষেত্রে রিবেট প্রদান এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি উপজেলা পর্যায়ে রাজস্ব অফিস স্থাপন এবং বিদ্যমান কর অঞ্চলের সংখ্যাকে ৩১ থেকে ৬৩ তে উন্নীত করার জন্য এনবিআর কে ধন্যবাদ জানান। ডিসিসিআই সভাপতি ট্যাক্স জিডিপি’র অনুপাত বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব কাঠামো আরো ব্যবসা বান্ধব করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে উন্নত অর্থনীতির কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারিখাতের বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত ৩০ শতাংশে উন্নীতকরনের আহ্বান জানান।


এনবিআর-এর সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) শাহনাজ পারভীন ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীরা যদি হয়রানির শিকার হন, তাহলে বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে আনার আহ্বান জানান। তিনি নতুন ভ্যাট আইনটি ব্যবসায় ব্যয় হ্রাসের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ভ্যাট রিফান্ড পদ্ধতি, ই-পেমেন্ট এবং অডিট ব্যবস্থা অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ভ্যাট আইন বিষয়ে, যাতে কোন সন্দেহের তৈরি না হয়, সেজন্য ব্যবসয়ীদের সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি, প্রজ্ঞাপন জানতে পরামর্শ প্রদান করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি ইমরান আহমেদ, পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ, ইঞ্জি. মো. আল আমিন, হোসেন এ সিকদার, মো. রাশেদুল করিম মুন্না, খন্দ. রাশেদুল আহসান, শামস মাহমুদ, এনামুল হক পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান, এম এইচ রহমান, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা প্যাটেজ ভ্যাট বহাল রাখা, হয়রানি মুক্ত ভ্যাট আহরণ পদ্ধতি প্রবর্তন, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, ভ্যাট কল সেন্টার স্থাপন, অ্যাপ নির্ভর কর আহরণ পদ্ধতি চালুর আহ্বান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন