৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর কক্সবাজার সাগর উপকূলে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। এখন বাজারে আসতে শুরু করেছে সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ। সোমবার সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ফিশারী ঘাটে গিয়ে দেখাগেছে সামুদ্রিক ইলিশ নিয়ে দশটি ফিশিং বোট নোঙর করেছে।
ফিশিং বোটের জেলে মুহিব বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আমরা সাগরে মাছ ধরেতে নেমেছি। সাগরে ভালোই ইলিশ ধরা পড়ছে। বোটের মাঝি সাইফুল জানান, সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ভালো মাছ ধরা
পড়বে।
বোট মালিক ও জেলেদের অভিযোগ, বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় প্রচুর ইলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এতে দেশের মৎস্য খাত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সাগরে জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ার কথা জানিয়ে কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, যতদূর খোঁজ পেয়েছি সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সোমবার সকালে ঘাটে সাগর থেকে দশটি ফিশিং বোট ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে। তবে আরও বেশি ফিশিং বোট মাছ নিয়ে বাজারগুলোতে পৌঁছালে বাজারে ইলিশের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে দরও কমে আসবে। তবে এজন্য আরও ৪/৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, গোটলা সাইজের ইলিশের দাম ছিল প্রতিমন ১৮ থেকে ২০ হাজার, ভেলকা সাইজের ২৫ থেকে ২৬ হাজার, এলসি সাইজের (ছয় থেকে নয়’শ গ্রাম ওজন) ৩৫ হাজার, এক কেজি সাইজের ৪৫ হাজার, এক কেজির ওপরে ৫৫ হাজার এবং দেড় কেজি ওজনের হলে প্রতিমন এক লাখ টাকা দরে বিক্রি
করা হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ পূর্বে বাজারে গোটলা সাইজের ইলিশের দাম ছিল প্রতিমন ২৫ হাজার, ভেলকা সাইজের ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার, এলসি সাইজের ৫২ হাজার, এক কেজি সাইজের ৬০ হাজার এবং দেড় কেজি ওজনের প্রতিমন ইলিশ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ খালেকুজ্জামান জানান, নিষেধাজ্ঞার সুফল জেলেরা পেতে শুরু করেছে। সাগরে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়ছে। সময়ের সাথে সাথে বাজারেও ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরছে রূপালী ইলিশ। গত দু’দিন ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো জেলার বিভিন্ন ঘাটে ফিরে আসতে শুরু করেছে। কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের
মুখে।
স্থানীয় মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ীরা ইলিশ সংগ্রহ করে পিকআপ ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় উপকূলীয় জেলে পল্লী ও আড়তগুলোতে আনন্দের জোয়ার বইছে।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে স্থানীয় আড়তগুলোতে গ্রেড অনুযায়ী প্রতিমণ ইলিশ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গভীর সমুদ্রে জেলেদের সাইনজালসহ অগভীর জলে খুটা জালেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে। রবিবার সকালে ফিশারীঘাটে এফবি বিসমিল্লাহ নামের একটি ট্রলার ১০৫ মণ ইলিশ মাছ বিক্রি করেছে। এছাড়া একই মালিকের এফ বি টিপু-৩ ১৫৮ মণ ইলিশ মাছ নিয়ে তীরে এসেছে। তারা মৎস্য আড়তে প্রতিমণ ইলিশ ২২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছে। মৎস্য অধিদফতরের কার্যকরী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
মৎস্য ব্যবসায়ী জিনাত ফিস সেন্টারের মালিক সাহাব উদ্দিন বলেন, কিছুদিন ধরে খুটা জালেও ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জেলেদের জালে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়ায় প্রচুর মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। এভাবে মাছ ধরা পড়লে জেলেরা লাভের মুখ দেখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ীর নেতৃবৃন্দ জানান, সন্তোষজনক ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। এভাবে মাছ ধরা পরলে দায়দেনা মুক্ত হবে মৎস্যজীবীরা। তবে ইলিশের দাম কিছুটা কমে গেলেও জেলেরা বেজায় খুশি। গভীর সাগর থেকে প্রতিটি ট্রলার ভর্তি করে মাছ নিয়ে ঘাটে আসছে শত শত ট্রলার । এ কারণে মৎস্যঘাটে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
সূত্রমতে, মৎস্য অধিদফতরের কার্যকরী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনায় (প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের ভিজিএফ/পুনর্বাসন) বিশেষ করে নৌবাহিনী, কোস্টকার্ড, পুলিশ, প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতায় দেশে ব্যাপকহারে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন