মাত্র একদিন আগেই তার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন করার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু তার আর দরকার হলো না। সেই সাহায্য হাতে না নিয়েই অনন্ত পথে যাত্রা করলেন অসম্ভব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, মনেপ্রাণে অভিজাত, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক আনোয়ারুল কবির শামীম (শামীম কবির)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন থেকেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। গতকাল তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন, ‘আজ (গতকাল) সকালে রাজধানীর ইডেন ক্লিনিকে ইন্তেকাল করেন শামীম। গত কয়েকদিন ছিলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।’
আগামী পহেলা আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টায় বিসিবি একাডেমি মাঠে শামীম কবিরের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম অধিনায়কের প্রতি শেস শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরের শেষ ওয়ানডেতে (আগামীকাল) কালো ব্যাজ পড়ে মাঠে নামবে তামিম-মুশফিকরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে দু’দিন আগেই তার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভারের ঘোষনা দিয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। গতকাল তার মুত্যতে শোক জানাতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বিসিবি সভাপতি, ‘তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক। শামীম কবির বাংলাদেশকে এক কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যখন ক্রিকেট খেলার খুব একটা সুযোগ সুবিধা এদেশে ছিল না। এটা সম্পূর্ণ তার আবেগ আর অবদানের ফসল আজ যেখানে দেশের ক্রিকেট দাঁড়িয়ে। বিসিবির পক্ষ থেকে আমি তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
১৯৪৫ সালে নরসিংদীতে জন্ম শামিম কবিরের। সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৬১ সালে। ওপেনিংয়ে ব্যাট করার পাশাপাশি প্রয়োজনে করতে পারতেন কিপিংও। পূর্ব পাকিস্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন ১৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। পূর্ব পাকিস্তান সবুজ দলের হয়ে পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের বিপক্ষে ৮৯ রানের ইনিংস তার ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ।
স্বাধীনতার পর দেশের জাতীয় ক্রিকেট দল গঠন করতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে বিসিসিবি একাদশের মোড়কে খেলে বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শামীম কবির। তখন অবশ্য তার ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলা। খেলা ছাড়ার পরও যুক্ত ছিলেন ক্রিকেটের সঙ্গে। আশির দশকে দুটি আইসিসি ট্রফিতে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার। ১৯৯৯ সালে পেয়েছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার। ক্রিকেটে তার অর্জন স্মরণ করে বোর্ডের মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, ‘জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামীম কবিরের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যা যা করা প্রয়োজন সব করা হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন