স্টাফ রিপোর্টার : স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে লাশ ফেলার জন্যই নার্সদের দিয়ে বিক্ষোভ করানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেছেন, নার্সরা কেন আমার বাড়ির সামনে যাবে? এটা তো আমার ব্যক্তিগত বাড়ি। কোনো আন্দোলন দরকার হলে সেটা সরকারি বাসভবনের সামনে যেতে পারতেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমি জেনেছি, ওখানে নার্সদের নামে ভাড়াটিয়া নার্স ছিল অর্ধেকের বেশি। আসলে তারা হেফাজতে ইসলামের মতো করতে চেয়েছিলেন। কোনোমতে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে একটা লাশ ফেলতে পারলে সেটা নিয়ে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে নামতে পারবেন। এই আন্দোলনের নামে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে তারা লাশ চেয়েছিলেন।
নাসিম অভিযোগ করেন, ওরা একটা লাশ চেয়েছিল। নার্সদের এগিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা আন্দোলন করো, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিলো। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনোভাবে পতন করা যাবে না ভেবেই নিরীহ নার্সদের দিয়ে আন্দোলনের চেষ্টা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ড্যাবের একজন নেতা, এনজিও কর্মী ও বিদেশী একটি গবেষণা সংস্থার একজন কর্মকর্তা ধানমন্ডির একটি বাসায় বৈঠক করেছিলো। অর্থের বিনিময়ে আন্দোলন করানো হয়েছিলো। সেখানে নার্স ছিলো অল্প কয়জন। বাংলাদেশে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯৭৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসায় যেমন জাসদ নামে একটি দল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলো, তেমনি তারা সরকার উৎখাতের জন্য একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি থাকতে এ কাজ হতে দিতে পারি না।
নাসিম বলেন, আপনারা জানেন, ঠিক হেফাজতে ইসলামের সময়ের মতো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। ওই দিন নাকি ৪-৫টা নার্স মারা গেছে। এক গর্ভবতী মহিলা নাকি গর্ভপাত হয়েছে। পরে দেখা গেছে, কেউ মারা যায়নি; এমনকি ওই মহিলা নিজেই বলেছেন, আমি তো প্রেগনেন্টই হইনি, গর্ভপাত হবে কীভাবে?
তিনি বলেন, আপনারা জানেন নার্সদের পরীক্ষা হয়েছে। ১২ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। এখন তারা এসে বলছে, আমাদের আলাদা করে পরীক্ষা নিন। খালেদা জিয়ার দলকে বলবো, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি যখন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলাম তখন আমাদের ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী ৩টা লাইসেন্স দেয়া যেতো। মোরশেদ খানের শুধু লাইসেন্স ছিলো। আর কাউকে লাইসেন্স দেয়া যেন না যায় তাই মোরশেদ খান মামলা করে রেখেছিলেন। তখন ইউনুস সাহেব গ্রামীণ ফোনের চেয়ারম্যান ছিলেন। অনেক বার আমার কাছে এসেছিলেন। উনি (ইউনুস) ছিলেন ৪ নম্বর আবেদনকারী। উনার একটা অভ্যাস ছিলো উনি মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের দিয়ে চিঠি পাঠাতেন। আমাকে একদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, নাসিম ভাই আপনি ইউনুস সাহেবকে লাইসেন্স দিয়ে দেন। উনি জ্বালিয়ে মারছেন। আমি উনাকে গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্স দিলাম। সেই লাইসেন্সের বদলে উনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেলেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপপরিষদ আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সিম ও রিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রি-রেজিস্ট্রেশন করার মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক অপরাধ কমে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা দেখেছিলাম একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরিতে ৬০ হাজার সিমের নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু আমরা মনে করেছি এ প্রক্রিয়ায় একটি শৃঙ্খলা আনা জরুরী। তাই আমরা বায়োমেট্রিকে সিম নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। আমর বিশ্বাস বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশনের কারণে অপরাধ কমে যাবে।
তারানা বলেন, ১১ কোটি ৬০ লক্ষ সিম ও রিম রেজিস্ট্রেশন সহজ কথা নয়। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সকল সমালোচনাকে কাঁধে নিয়েই এগিয়ে গেছি। শুধুমাত্র এ কথাটি চিন্তা করে সত্যের জয় হবেই। মানুষ সৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে কাজ করে তখন বিজয়ী হয়। তাই ১১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের সমর্থন এটাই প্রমাণ করে সত্য আবারও বিজয়ী হয়েছে। সৎ উদ্যোগের সঙ্গে সবসময় জনগণ থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বায়োমেট্রিকে সিম রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম সবার জন্য সমান। যারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করে সিম ও রিমের মালিকানা স্বীকার করেননি, ইতোমধ্যে তাদের সিম ডিঅ্যাকটিভ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দাবি করেছেন তার মোবাইল নেই। এখন তিনি যদি নতুন করে সিম কেনেন তাহলে তাকে ভ্যাট-ট্যাক্স ও বায়োমেট্রিকে পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করে কিনতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হচ্ছে। ২ লাখ ৫০ হাজার নারীকে আমরা আইসিটি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আইসিটি ডিভিশন থেকে ৪৫ লাখ মানুষ ২০০ ধরনের সেবা গ্রহণ করছে। ২ লাখ তরুণকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রায় ২০ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোস্তফা জব্বার। প্রচার ও প্রকাশনা উপ পরিষদ চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন দলটির উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বেসিস সভাপতি শামীম আহসানসহ অন্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন