মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফুটপাথ তুমি কার

ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

রাজধানীর ফুটপাত মানেই দখলের রাজত্ব। ফুটপাত দখল করে হকারদের দোকান দিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা। আর সেই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় চাঁদাবাজচক্র। এর বাইরে ফুটপাতের কোথাও গাছ, কোথাও আবার বিদ্যুত বা টেলিফোনের খুঁটি, সুইচ বক্স আছে। আছে পুলিশ বক্সও। বিভিন্ন মার্কেট ও বিপনী বিতানের সামনে ফুটপাতের দখল নিয়েছে যানবাহন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে-ফুটপাত তুমি কার?

ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারের নেয়া উদ্যোগের সবগুলো প্রকল্পেই ফুটপাতকে মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে যানজট নিরসনে ৯টি ফ্লাইওভার, ৬৬টি ফুটওভার ব্রিজ, ৩টি আন্ডারপাস নির্মাণ, ২০ জোড়া ডেমু ট্রেন, ৯টি ওয়াটার বাস, বিআরটিসির ৪২টি আর্টিকুলেটেড এবং ৩০৩টি ডাবল ডেকার বাস কেনা হয়েছে। চালু করা হয়েছিল অটোমেটিক সিগনালিং ব্যবস্থা ও লেন পদ্ধতি। এতে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ ফুটপাতকে মুক্ত করা যায়নি। যানজটেরও উন্নতি হয়নি। বরং দিন যতো যাচ্ছে যানজটের ভয়াবহতা ততোই বাড়ছে।

রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলের ফুটপাত মাসখানেক আগেও হকারমুক্ত ছিল। বিশেষ করে শাপলা চত্বরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সামনে ফুটপাত ছিল পথচারিদের জন্য উন্মুক্ত। কয়েকদিন ধরে পুরো ফুটপাতই দখল হয়ে গেছে। হকাররা শুধু ফুটপাত দখল করে ছাড়েনি, ফুটপাত সংলগ্ন রাস্তার বেশিরভাগ অংশ দখল করে রীতিমতো বাজার বসিয়েছে। তাতে পথচারি তো বটেই, যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। ক্ষণে ক্ষণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সেই যানজট নিরসনে ব্যস্ত থাকলেও যানজটের উৎস নিয়ে মাথা ঘামান না। জানতে চাইতে মতিঝিলের একজন হকার বলেন, পুলিশই তাদেরকে ফুটপাত দখল করে বসার সুযোগ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ ফুটপাতের নকশায় ত্রæটি আছে। এতে দখল না হওয়া যেটকু ফুটপাত খোলা আছে, তাও অনেক ক্ষেত্রে পথচারীদের চলার উপযোগী নয়। অথচ ফুটপাত পথচারীবান্ধব হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেত।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২৯২ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে, উত্তর সিটিতে আছে ২২৩ কিলোমিটার। অভিজাত এলাকার সামান্য অংশ বাদ দিলে পুরো শহরের অধিকাংশ ফুটপাতের অবস্থাই মোটামুটি একই। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের অবস্থা বেশি খারাপ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, মতিঝিল, দিলকুশা, আরামবাগসহ আশপাশের বিরাট এলাকাজুড়ে ফুটপাতের এক ইঞ্চিও খালি নেই। সবই হকারদের দখলে। এই বিশাল দলদারিত্বকে ঘিরে সক্রিয় চিহ্নিত চাঁদাবাজচক্র। যারা প্রতিদিনই ফুটপাতের হকারদের কাছে থেকে চাঁদা তুলছে। দিন শেষে এই চাঁদার পরিমান প্রায় ৬ লাখ টাকা। হকাররা জানায়, গুলিস্তান-মতিঝিল-পল্টন এলাকার ফুটপাতের সেই আগের চাঁদাবাজরাই বহাল আছে। শুধু পল্টন এলাকার দুলালকে বাদ দিয়ে আলাউদ্দিন ওরফে কোটনকে পুলিশের ক্যাশিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার ফুটপাত দখল করে থাকা হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার সামনে ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে মকবুল। প্রতিটি দোকান থেকে দিনে দুশ’ টাকা করে দিতে হয় মকবুলকে। উল্টো দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের পাশে সেনাকল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে হারুন ওরফে গাঞ্জুটি হারুন। আলিকো ভবনের সামনে থেকে চাঁদা তোলে সাদেক। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণের দখলকৃত ফুটপাত ও রাস্তা থেকে চাঁদা তোলে আজাদ। রুপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে চাঁদা তোলে তাজুর ছেলে বাবলু এবং দিলকুশা বলাকা চত্বরের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে মান্নান ও নুর ইসলাম। হকাররা জানায়, ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে ফুটপাত দখলে রাখার জন্য চাঁদার হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। কারণ এখানে বিক্রি বেশি। চাঁদা না দিলে পুলিশ ফুটপাতের দখল নিতে দেয় না বলে জানান হকাররা।
এদিকে, পুরান ঢাকার সবগুলো রাস্তা দখলে করে চুটিয়ে ব্যবসা করছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি মার্কেটের সামনে দোকানের মালামাল। হাঁটার মতো কোনো জায়গা খালি নেই। গুলিস্তান পার্কের দক্ষিণ পাশের সড়কে ফুটপাত বলে কিছু নেই। সড়কের একপাশ ভাঙাচোরা, সেখানে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার করা হয়েছে।

সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের কাছে নতুন ফুটপাত করেছে ডিএসসিসি। প্রশস্ত এ ফুটপাতের একটি অংশে আবার যাত্রী ছাউনি করা হয়েছে। ছাউনির একপাশে একটি টিকেট কাউন্টার ফুটপাতের পুরোটাই খেয়ে ফেলেছে।
একই চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও। মহাখালী রেলক্রসিং থেকে আমতলী হয়ে কাকলী পর্যন্ত গেলে দেখা যায় ফুটপাতের বিভিন্ন অংশে থাই অ্যালুমিনিয়ামের দোকানের জিনিসপত্র রেখে কাজ করা হচ্ছে। কয়েকটি মেরামত কারখানার মোটরসাইকেলও রাখা হয় ফুটপাতে।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, সারাদেশে দুর্ঘটনায় নিহতের ৪৩ শতাংই পথচারী। আর ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, রাজধানীতে সড়কে নিহতদের একটি বড় অংশ রাস্তায় চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। ফুটপাত ব্যবহারের উপযোগী না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই পথ চলেন রাস্তার পাশ দিয়ে। ফুটপাতগুলো পথচারীবান্ধব হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমে যেত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ash ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
SHAMIM OSMAN, CITY CORPORETION ER DUI MEOR R BAL ER SATROLING ER !!
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১ আগস্ট, ২০১৯, ৮:৪৫ এএম says : 0
Ashole meyorei icsa korle eai shomosto shomoshar shomadhan korte paren, shomosha holo onara shob kisui nijer doler lokder mastanite nirob thaken ete kore desher manusher shomoshate thorai amole nen,karon eai desher shokar dolio protinidhira janen je, nirbachito hoyte jonogoner voter chaite mastander hate rakha boroi pryojon...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন