রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বহুতল আবাসিক ভবনের ১০ তলার বারান্দার বাইরের দিকে এক গৃহকর্মীর ঝুলে থাকার ঘটনায় সাামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ১৫ তলা বাড়িটির ১০ তলার বারান্দায় বাইরের দিকে তাকে ঝুলতে দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
জানা যায়, ১০ বছর বয়সী মেয়েটির নাম খাদিজা। কাকরাইলের সার্কিট হাউস রোডের অ্যাপার্টমেন্ট ‘গাউছিয়া ডাইনেস্টি’র ওই বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো সে। ঝুলে থাকার সময় যে মহিলাটি বারান্দায় আসা যাওয়া করছিলেন তিনি ‘লাভলী ম্যাডাম’। তিনি নিজেকে মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দেন। ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, বারান্দার গ্রিলের পকেট গেট খুলে খাদিজাকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন গৃহকত্রী লাভলী রহমান।
এ ঘটনায় দীপ মিত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘‘যেহেতু বাসার মালকিন মানবাধিকার কর্মী তাই তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে ঝুলে থাকাটাও একটা মানবাধিকার! যাইহোক আজকাল বড় বিচিত্র লাগে মানবাধিকার শব্দটা শুনলে। আর যারা নিজেদেরকে মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দেয় তাদের চারপাশের মানুষ তাদের প্রভাবে বুঝতে পারে মানবাধিকার শুধু তাদেরই আছে, আর কারো এই অধিকার নাই।’’
দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে সুমন খান লিখেছেন, ‘‘মেয়েটি অত্যন্ত একটি দরিদ্র পরিবারের সম্ভবত আমরা সাধারন নাগরিক হিসাবে মেয়েটির সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসন ভাইদের কাছে। কারণ আপনাদের ছেলে মেয়ে আছে । একটি দরিদ্র মেয়ের উপর অত্যাচার হলে নিজের মনে করে আপনারা তদন্ত করবেন এটাই আপনাদের কাছে আমাদের আশা। ’’
রুবেল আহাম্মেদ সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘‘‘তালার উপর এভাবে ঝুলে থাকা স্বাভাবিক মানুষের কাজ না। ওকে সম্পূর্ণরূপে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এমন কি যদি পড়ে যেত তাহলে ওর কোন মালিককে খুঁজে পাওয়া যেত না।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিজেকে মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দেওয়া লাভলী রহমান দাবি করেছে, ঘরের কাজের জন্য খাদিজা ও আরেক গৃহকর্মী কাজ করে তার বাসায়। নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার পর বারান্দার পকেট দরজা খুলে সানশেডে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল খাদিজা।
পুলিশ আরও জানায়, গৃহকর্ত্রী মেয়েটিকে পুলিশের সামনেই গালাগাল করছিল। সোফায় বসিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করলেও গৃহকর্ত্রী তাকে সোফায় বসতে দেয়নি। তবে এ ঘটনায় গৃহকর্মীও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি।
‘‘এটা কারো বুজতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে মেয়েটাকে ঐ মহিলা শাস্তি দিয়েছে। আর তার উগ্র ব্যবহারও বজায় ছিলো যথারীতি। মেয়েটি গরীব বলেই সে চুপচাপ করে আছে’’ লিখেছেন মমিনুল ইসলাম।
নুর মোহাম্মাদ লিখেছেন, ‘‘আমরা ভিডিও ফুটেছে দেখছি তালা খুলে মেয়েটিকে ভিতরে নিচ্ছে। আমি বলছি পুলিশ ভালো করে তদন্ত করলে আসল রহস্য উদঘাটন হবে। পুলিশ বলছে মেয়েটির কোন অভিযোগ নেই।’’
‘‘মেয়েটিকে শুধু জিজ্ঞাসা করলে হবে? গৃহকত্রীকে কেন থানায় নেওয়া হলো না,,,,আর কি কারণে মেয়েটিকে নামানো হলো সেটি কেন প্রশ্ন করলেন না আপনারা?’’ প্রশ্ন জাকিরুল ইসলামের।
মো. মিলাদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘কতটুকু বিবেক হারিয়ে ফেললে মানুষ মানুষের উপর শাস্তি হিসাবে এমন কাজ করতে পারে তা আমার জ্ঞানে কাজ করে না।’’
মুক্তা রানী লিখেছেন, ‘‘খাদিজা নামক গৃহকর্মীর সাথে তার গৃহকর্তী লাভলী রহমান এর অমানবিক আচরণ, তিনি আবার মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দেন।’’
বিথি দাস লিখেছেন, ‘‘‘আমি কোনো মানবাধিকার কর্মী নই ।সাধারণ মানুষ ।বাসার কাজের লোককে আপা বলি আর একসাথে বসে খাবার খাই।ভালো কাজ করতে কোনো বড় পরিচয়ের প্রয়োজন হয় না।’’
হাজী আরিফ হোসেন লিখেছেন, ‘‘১০০% নিশ্চিত লাভলী ম্যাম ওকে গ্রিলের জানালার তালা খুলে ফেলে দিতে গেছিলো। গ্রিলের জানালা যেখানে সেখানকার তালা খুলে লাগাতে গেলে সাপোর্ট বা দাড়ানোর জায়গা দরকার!! এতটা করা সম্ভব নয়। তাই সে কোন মতে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে টিকে আছে!!! ও আল্লাহ! তুমি মেহেরবান!’’
ফেসবুকে জাকির প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কথা হল মেয়েটি বাইরে বের হওয়ার পর তালা মারল কে? লাভলী আপা কোন মানবাধিকার সংস্থার জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।’’
আবরার মাহমুদের মন্তব্য, ‘‘উনি তো নিজেই অমানুষ আবার নিজেকে মানবাধিকার কর্মী দাবী করেন। চাকর বলে কি সে মানুষ না। ২ দিন লেখালেখি হবে পরে আবার সবাই ভুলে যাবে সবকিছু আগেরমতই হয়ে যাবে.।’’
‘‘মেয়েটি নয়, ঝুলছেতো মানবাধিকার আর বিচারব্যবস্থা! বিচারহীনতার জন্যই এখন যে কেউ যা খুশি করার সাহস পাচ্ছে’’ মন্তব্য আনন্দ আলাদিনের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন