শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কক্সবাজারে সড়কে ভোগান্তি মুখ ফিরাচ্ছে পর্যটক

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৯, ৭:৩৯ পিএম

চলতি বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলাচল অনুপযোগী এই সড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত আরাকান সড়কের বেহাল দশা বর্ণনা দিয়ে প্রকাশ করা কঠিন। এছাড়াও পর্যটন শহর কক্সবাজার এর আভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগে এই দুরবস্থার কারণে কক্সবাজার বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দেড়শ কিলোমিটারের মহাসড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন পড়ে রয়েছে। প্রতিদিন শত শত যানবাহন এবং হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করলেও এ সড়কটি সংস্কারে এ পর্যন্ত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মধ্য জুলাইয়ের বন্যায় সাতকানিয়া-চন্দনাইশের মাঝামাঝি কসাই পাড়া এলাকায় বানের পানিতে সড়কটি তলীয়ে গিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। ৪৮ ঘন্টা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও এর প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ সময় দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে ২০ কিলোমিটার মতো জায়গায় যানজট সৃষ্টি হয়ে জনগণের যারপরনাই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
এছাড়াও পুরো সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার বড় জোর তিন ঘন্টার রাস্তা হলেও এখন ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লাগে। এর উপর আছে অনেক ভোগান্তি।
বাংলাদেশের গর্ব বলে খ্যাত পর্যটন শহর কক্সবাজার এর আভ্যান্তরীণ
সড়কগুলোর নাজুক অবস্থার কথা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। শহরের প্রধান সড়ক সহ আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো এত বেশি বিপর্যস্ত হয়ে গেছে যে শহরের লোকজন এসব সড়ক দিয়ে যানবাহনে দূরের কথা হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী বলে মনে করেন।
এর উপর শহর তলীর কলাতলীতে দেড় দুই কিমি সড়ক সংস্কার কাজে বন্ধ রয়েছে গত ৬ মাস ধরে। এজন্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে সরসসরি যোগাযোগে ভোগান্তি বেড়েছে পর্যটকের।
গত মঙ্গলবার ৩০ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জনপ্রশাসন পদক পাওয়ায় আনন্দ সমাবেশে প্রবীণ রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক সংস্কারের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন সহজ অফিস ঘেরাও করে সউজ কর্মকর্তাদের জুতাপেটা করার। কিন্তু এই আল্টিমেটামের দুই দিন পার হলেও এর কোন প্রতিকার দেখতে পায়নিশহরবাসী। বরং সড়ক জনপথ বিভাগ থেকে স্থানীয় সংবাদ পত্রে বিবৃতি দিয়ে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কটি এখন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে বলে বিবৃতি দিয়ে তাদের দায় সেরেছেন।

ওদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ (শহীদ এটিএম জাফর আলম) সড়কটি দীর্ঘদিনেও মেরামত কিংবা সংষ্কার না হওয়ায় সড়কের কোটবাজার জনবহুল স্টেশনে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।

৩১ জুলাই বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কোটবাজার এলাকায় সড়কে ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। সড়কে চারা রোপণে অংশ নেয় স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় পথচারী প্রত্যক্ষদর্শী ভুক্তভোগী সাথে কথা বলে জানাগেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংস্কারে ধীরগতির কারণে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে জেলার সাধারণ যাত্রীদের। সড়কের ৫০ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ শুরু হলেও গত পাঁচ মাসে ৩০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানা ১২ দিনের বৃষ্টির কারণে সড়কের ওপরে আগে থেকে থাকা বিটুমিনের আস্তরণ তোলা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সড়কের মূল কার্পেটিংয়ের কাজও শুরু করা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিনটি পৃথক প্রকল্পের আওতায় ৭৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নকাজে ৪৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। সড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এই কাজের তত্ত্বাবধান করছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দুটি প্রকল্পের অধীনে ৫০ কিলোমিটারের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পাঁচ মাসের কাজে অগ্রগতি হয়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। যার কারনে দুর্ভোগ শেষ হচ্ছেনা এই সড়কে চলাচলকারীদের। এতে অভিনব প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আছেন ২ হাজার বিদেশিসহ অন্তত ১১ হাজার চাকরিজীবী। তাঁদের আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে ২ হাজারের বেশি প্রাইভেট গাড়ি । রোহিঙ্গা শিবিরে দৈনিক গড়ে মালামাল পরিবহন হচ্ছে ৪ শতাধিক ট্রাকে। এ ছাড়া টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানির ট্রাক, পর্যটকদের গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে আরও এক হাজারের বেশি। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, জিপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলে আরও ৭ হাজার। মেরিন ড্রাইভ সড়কে সব যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আরাকান সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ পড়ায় সড়কটি লন্ড ভন্ড হয়ে যা

প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ করে জানান, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে অতিরিক্ত যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় সড়কের কোটবাজার, মরিচ্যা, উখিয়া সদর, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে বড় বড় পাঁচ শতাধিক খানাখন্দ ও ভাঙা রয়েছে। এই খানাখন্দ অতিক্রম করে মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিদিন দেশিবিদেশি ভিআইপিরা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও উখিয়া-টেকনাফের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছেনা।

সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সড়কের দুই পাশে নালা খনন, বৈদ্যুতিক খুঁটি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ভূগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি ও ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড লাইন অপসারণ ও মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। সাম্প্রতিক টানা ভারী বর্ষণে সড়কের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সড়কের ওপরে ‘কালো চামড়াথ অর্থাৎ বিটুমিন তুলে ফেলা সম্ভব হয়নি। বিটুমিন তুলে ফেলার পরই সেখানে পাঁচ ইঞ্চি পুরু কার্পেটিং হবে। আগামী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়ে যাবে।
সম্প্রতি কক্সবাজার ভ্রমণে আসা বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা ও ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউর রহমান সোহাগ কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে বলেছেন, একটি মারাত্মক বিপর্যয়। এই অবস্থা হলে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবে। তিনি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টিআকর্ষণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর এর সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন নামে ধাপ্পা বাজি করছে। নেতারা লুটপাট করে আখের গোছাচ্ছে অথচ জনগণের ভোগান্তির কোন সীমা নেই।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরের এ দুর্দশা আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য খুব শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও তিনি জানান, দুঃখজনক হলেও কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কটি কক্সবাজার পৌরসভার আওতাধীন নয়। সড়কটি সড়ক জনপথ বিভাগের অধীনে থাকলেও এখন সড়কটি সংস্কারে
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন