দীর্ঘ ২৭ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জাকসু’র প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও ভিসি সমর্থক আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ এর সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে। ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এই তথ্য জানিয়ে বলেন, অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও দু’জন সহকারী নির্বাচন কমিশনার বাছাই করে জাকসুর পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
এদিকে অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি হওয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগ ছাড়া জাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, যোগ্য এবং অভিজ্ঞ একজন শিক্ষকের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এখন জাকসু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সকল ছাত্র সংগঠনের সাথে জাকসু নিয়ে আমরা নিয়মিত আলোচনা করছি। সকলের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ও সম্পর্ক পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
অন্যদিকে মনোনীত নির্বাচন কমিশনারকে নৌকার নির্বাচন কমিশনার’ আখ্যা দিয়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, মনোনীত প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি দলের মুখপাত্র। এই অবস্থায় নির্বাচন কার্যক্রমের শুরুতেই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনার কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবে বলে আমরা মনে করছি না। তারপরও আমরা আশা করবো পরবর্তীতে দুজন সহকারী নির্বাচন কমিশনার দল মতের ঊর্ধ্বে হবেন এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হতে ভ‚মিকা পালন করবেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাকি কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন সেক্ষেত্রে জাকসুর প্রস্তুতি কমিটি এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামতেই কাজটি করবেন তিনি। যেহেতু উনি শিক্ষক রাজনীতিতে একটি দলের প্রধান সেহেতু নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সংশয়তো থাকেই। আমরা মনে করি এটা উনার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তবে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে উনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেন। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পরে একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে সুতরাং এই নির্বাচনে কমিশনার হওয়া উচিৎ ছিল দল মত নিরপেক্ষ। কিন্তু আমরা জানি, যিনি নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন তিনি আওয়ামীপন্থী একটি দলের প্রধান। তবে আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো বিবেচনা করেই দিয়েছেন এবং আশা করছি তিনি আমাদেরকে স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন। কিন্তু আমরা শঙ্কাতেও থাকব যে, আসলে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, জাকসু নির্বাচনে কমিশনার সর্বজন শ্রদ্ধীয় ও দল মতের ঊর্ধ্বের একজন ব্যক্তি হওয়া উচিৎ ছিল। তবে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্যে করছি যিনি নির্বাচন কমিশনার হলেন, তিনি আওয়ামী দলের এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। এই অবস্থায় আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান। তবে আমরা আশা করব পরবর্তী সহকারী দুজন নির্বাচন কমিশনার দল মতের ঊর্ধ্বে হবেন।
এসব বিষয়ে নব মনোনীত জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, জাকসু’র প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এছাড়া এ নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়। আমি সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে চাই।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২৭ বছর বন্ধ থাকার পর জাকসু প্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনের পূর্বে ভিসি ফারজানা ইসলাম জুলাই মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং এ বছরের নভেম্বর মাসে নির্বাচন প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন