বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির নতুন ভাবনা কোন পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৯, ৮:৪০ পিএম

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে এ বিষয়ে দলের নীতি নির্ধারকরা নতুন করে ভাবছেন। এতদিন দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকে বলে আসছিলেন আইনি প্রক্রিয়াতেই চেয়ারপার্সনের মুক্তি হবে। গত ১ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর সে আশার আলো অনেকটাই নিভে গেছে। আর সেই সাথে সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। এ অবস্থায় চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে দল নতুন করে ভাবছে। বিশেষ করে দলের নীতি-নির্ধারকরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। জামিন বাতিলের পর ওইদিন রাতেই দলের সিনিয়র নেতারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা স্কাইপিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথেও পরামর্শ করেছেন। তবে ওই বৈঠকে কোন চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় হবে না এটা এখন আমাদের কাছে যেমন পরিস্কার তেমনি দেশবাসীর কাছেও এটি স্পষ্ট। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যে সব সাজানো মামলা রয়েছে এগুলোতে আইনের যে কোন গ্রাউন্ডেই তিনি জামিন পাবেন এমনটা একজন আইনজীবী শুধু নয় সাধারণ মানুষও মনে করে। অথচ সরকার নানাভাবে ছল-চাতুরি করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন দিচ্ছে না। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন সরাসরি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর এটি দেশবাসীর কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। তাই আমরা এখন মনে করি রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে কি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে তা আগামীকাল (শনিবার) স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের ১৭ মাস পেরিয়ে গেলেও আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে আজও মুক্ত করতে পারেনি বিএনপি। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর চরম ক্ষুব্ধ। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি চেয়ারপার্সন গ্রেফতারের পর থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার দাবি করে আসছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে কোন কার্যকর কর্মসূচি আজ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেনি। তারা শুধু বলেছে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। নেতাদের এ কথায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন আর আস্থা রাখতে পারছে না। তারা বলছেন চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়ে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তাই খুব শিগগিরই তারা মুক্তির দাবি নিয়ে রাজপথে নামবে।
এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের এখন একটাই দাবি, একটাই চাওয়া সেটা হলো ম্যাডামের (বেগম খালেদা জিয়া) মুক্তি। এর বাইরে আমরা আর কোন কিছুই ভাবি না। ম্যাডামের মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তাই নেতাকর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচি দেয়া হবে আমরা তা সফল করতে সব সময় প্রস্তুত আছি।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের আইনজীবীরা মনে করছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন হাইকোর্টে সরাসরি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তার মুক্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আইনজীবীরা জানান, এখন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে যে আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে, সেই আবেদনটি হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করে জামিন আবেদন করা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হলো হাইকোর্টের জামিন আবেদন খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া। তারা বলেছেন, যেহেতু খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবীকে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না, সেহেতু এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা সম্মিলিতভাবে আলোচনায় বসে পরবর্তী করনীয় কি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রাজনৈতিক কারণে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। এ কারণে সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে না। সাত বছরের সাজায় তার জামিন নামঞ্জুর করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ইনকিলাবকে বলেন, যে কোন বিবেচনায় জামিন পাওয়াটা বেগম খালেদা জিয়ার আইনি অধিকার। বার বার জামিন থেকে তাকে বঞ্চিত করে তার অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি জামিন না দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা অবিচারেরই নামান্তর। জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো আদালত বিবেচনা করেন, তার প্রতিটি শর্তই বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। যেমন স্বল্প সাজা, শারীরিকভাবে অসুস্থ, বয়স বিবেচনা ও তার সামাজিক অবস্থান। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার হকদার ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন