শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আসন্ন ঈদে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করবে দশ লাখ যাত্রী

রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন সংস্থার উদাসীনতায় বাড়বে যাত্রী দূর্ভোগ, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:১২ পিএম

আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে ও পড়ে রাজধানী ঢাকা সহ চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে অন্তত দশ লাখ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করলেও সরকারী নিরাপদ নৌ পরিবহন ব্যাবস্থা হতাশাব্যাঞ্জক। বেসরকারী নৌযানগুলো ৮আগষ্ট থেকে বিশেষ সার্ভিস পরিচালন শুরু করবে। ৯ আগষ্ট থেকে অন্তত ২০টি নৌযান ঢাকাÑবরিশাল নৌপথে প্রতিদিন ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করবে। এসময়ে রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩০টি রুটে দেড়শ নৌযান যাত্রী পরিবহন করবে। এরমধ্যে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ২০টি এবং ঢাকা-ভোলা ও ঢাকা-পটুয়াখালী নৌপথে আরো অন্তত ১০টি নৌযান প্রতিদিন ডবল ট্রিপে অন্তত দেড় লাখ করে যাত্রী বহন করবে বলে আশা করছেন নৌযান মালিকগন। এরপরেও একটি কেবিন টিকেটের জন্য সাধারন যাত্রীগন বিভিন্ন নৌযান কোম্পানীর অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন। ২৮০ ফুট থেকে সোয়া ৩শ ফুট দৈর্ঘের এসব নৌযানে অনুমোদিত যাত্রীবহন ক্ষমতা ১হাজার থেকে সাড়ে ১২শ পর্যন্ত। এছাড়াও প্রতিটি নৌযানে ১শ টন থেকে দেড়শ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ঈদের আগে পড়ে সবগুলো নৌযানই পণ্য পরিবহনের পরিবর্তে সে লোড অনুযায়ী যাত্রী বহন করে থাকে। ফলে নৌযানগুলোর লোডলাইন সীমা অনুযায়ী ধারন ক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশী যাত্রী বহনের ক্ষমতা থাকছে। কিন্তু বাস্তবে প্রায় প্রতিটি নৌযানেই এসময় ৩-৪গুন পর্যন্ত যাত্রী বহন করে থাকে।

ঈদের আগে-পড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সড়ক পথে লক্ষ্মীপুর হয়ে নৌপথে সরাসরি বরিশাল ছাড়াও ভোলা হয়েও লক্ষাধীক যাত্রী যাতায়াত করবে। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে সড়ক ও রেল পথে চাঁদপুর হয়ে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করবে বিপুল সংখ্যক যাত্রী। সড়ক ও আকাশ পথে আরো বিপুল সংখ্যক যাত্রী দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করবে। সড়ক পথে ঢাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ২শ যাত্রীবাহী বাস বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়াও সাতক্ষিরা, বেনাপোল-যশোর ও খুলনা থেকে বরিশাল এবং উত্তরাঞ্চল থেকেও আরো শতাধীক বাস প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করবে। আকাশ পথে নিয়মিত ফ্লাইটের অতিরিক্ত বেসরকারী নভো এয়ার ৩টি এবং বিমান ১টি ফ্লইট পরিচালন-এর কথা জানিয়েছে।
তবে ঈদকে সামনে রেখে বেসরকারী নৌযান ছাড়াও আকাশ পথে সরকারী-বেসরকারী সব এয়ারলাইন্সই খেয়ালখুশিমত ভাড়া আদায় করছে। ঈদের আগের তিন দিন ঢাকাÑবরিশাল এবং ঈদের পরে ৭দিন বরিশালÑঢাকা আকাশ পথে ২ হাজার ৭শ টাকার ভাড়া ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে এয়ারলাইন্সগুলো। তবে বেসরকারী নৌযান মালিকদের দাবী, সারা বছরই তারা মন্ত্রনালয় নির্ধরিত ভাড়ার কমে যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। ঈদের সময় তা কিছুটা পুশিয়ে নিতে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করেন। তবে যাত্রী সাধারনের অভিযোগ, সরকারী নৌযানের অভাবেই বেসরকারী নৌযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সহ ওভারলোডিং হয়ে থাকে।

এদিকে এবারের ঈদেও চট্টগ্রামÑবরিশাল রুটে উপক’লীয় স্টিমার সার্ভিস পুণর্বহাল হচ্ছেনা। অথচ এ রুটের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি পুরনো জাহাজ পূণর্বাশন সহ আরো একটি নতুন নৌযান সংগ্রহে বিআইডব্লিউটিসি’কে আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার। এমনকি বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে সীÑট্রাক সার্ভিসটিও গত বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। অথচ উপক’লীয় নিরাপদ নৌ যোগাযোগের জন্য সরকার প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকা নগদ ভতর্’কি দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ নৌ পরিবহন সংস্থাটিকে। এরপরেও জনগুরুত্বপূর্ণ একাধীক উপক’লীয় সার্ভিস পূণর্বহালে উদাশীন রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন সংস্থাটি।
এমনকি কথিত নৌযানের অভাবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্র“ত ঢাকাÑবরিশালÑখুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটি আবারো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মোংলাÑঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি উন্নয়নের পরে ২০১৬ সালে সপ্তাহে একদিন করে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত রকেট স্টিমার সার্ভিসটি পূণর্বহাল হয়েছিল।

সংস্থাটির কাছে ৪টি প্যাডেল জাহাজ ও ২টি নতুন স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান থাকলেও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন ও মেরামতের অভাবে সংস্থার নতুনÑপুরনো সবগুলো নৌযানেরই জীর্ণ দশা। কোন নৌযানেই এখন আর নুন্যতম যাত্রী সেবার মান অবশিষ্ট নেই। অথচ এসব নৌযানের মেরামতের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যায় দেখান হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে ৮ আগস্ট অপ্রোয়জনীয়ভাবে ঢাকা থেকে দুটি নৌযান ছাড়া হচ্ছে চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে পিরোজপুরের বড় মাছুয়া ও বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, সাধারন যাত্রীর চাপ না থাকলেও শুধুমাত্র কেবিন যাত্রীদের জন্য এ বিশেষ ব্যাবস্থা। অথচ ৯আগস্ট মূল জনশ্রোত শুরু হলেও সেদিন মাত্র একটি নৌযান ঢাকা থেকে ছাড়ছে সংস্থাটি। অনুরূপভাবে ঈদের আগের দিন, ১১আগস্ট সর্বাধীক ভীড়ের দিনও ঢাকা থেকে মাত্র ১টি নৌযান ঢাকা ছাড়ছে বিআইডব্লিউটিসি।

উপরন্তু সংস্থার নিয়মিত নৌযানগুলো সন্ধা সাড়ে ৬টায় এবং বিশেষ সার্ভিসগুলো সন্ধা ৭টায় ঢাকা থেকে ছাড়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। যা মোটেই যাত্রী বান্ধব নয় বলে অভিযোগ উঠেছে । যানযট অতিক্রম করে ঐ সময়ে কোন যাত্রীর পক্ষে ঢাকার সদরঘাটে পৌছা সম্ভব নয় বলে সরকারী নৌযানগুলো আরো অন্তত এক ঘন্টা পরে ছাড়ার ব্যাবস্থা করার দাবী রয়েছে। বিগত ঈদের সময়ও ঐ সময়সূচী কার্যকর থাকায় রাষ্ট্রীয় নৌযানগুলো ধারন ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে। এবারো যে তার খুব অন্যথা হবে তা মনে করছেন না পর্যবেক্ষক মহল।
এদিকে মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ের পরেও সংস্থাটির নতুনÑপুরনো সবগুলো নৌযানই কারিগরি ত্র“টির কারনে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় ৫৭কোটি টাকা ব্যায়ে সংগ্রহ করা ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নৌযান দুটি যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমনে সবার আগ্রহ কম। উপরন্তু এসব নৌযানেও একের পর এক কারিগরি ত্র“টি লেগে আছে। অত্যাধিক পরিচালন ব্যায়বহুল এসব নৌযানে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে সংস্থাটিকে। ফলে এসব নৌযান বানিজ্যিক পরিচালনের চেয়ে বসিয়ে রাখলে লোকশানের মাত্রা কমে। তবে অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটির একটি স্বার্থান্বেশী মহল ব্যায় সাশ্রয়ী প্যাডেল হুইল নৌযানগুলোর পরিবর্তে এসব ব্যায়বহুল নৌযান পরিচালন-এ অতিমাত্রায় আগ্রহী।

দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান সংগ্রহের পরে মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে চরম উদাশীনতায় বিশ্ব ঐতিহ্যেতর স্মারক ৪টি প্যাডেল-হুইল জাহাজই এখন ধংশের পথে। ইতোমধ্যে বিনা দরপত্রে ‘পিএস অস্ট্রিচ’ জাহাজটি একটি বেরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। অপর ৩টি নৌযানেরও জীর্ণদশা। সম্পূর্ণ যোড়াতালি দিয়ে চলছে। অথচ মূল ইঞ্জিন সহ এসব নৌযান-এর পরিপূর্ণ পূণর্বাশন করলে তা আরো অন্তত দ্ ুদশক নির্বিঘেœ চলতে সক্ষম বলে কারিগরি বিশেষজ্ঞগন জানিয়েছেন। ১৯৯৫সালে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন ও পূণর্বাশনের পরে গত প্রায় ২৫বছরে এসব নৌযানের আর কোন পরিপূর্ণ মেরামত সহ মেজর ওভারহলিং হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন