শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে এসপি’র স্ত্রী হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ৭ জুন, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকা-কে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এই গুপ্তহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। তাদেরকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করানো হবে। প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার সন্ধ্যায় মদীনা হিলটন হোটেলে মদীনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এ খবর জানায়।
ঢাকার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে গত রোববার সকালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মোটরবাইকে আগত অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সন্ত্রাসী উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত এবং গুলি করে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোন দোষ ছিল না। অথচ বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার পথে তাকেই তার বাচ্চার চোখের সামনেই খুন করা হল। এটা খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কোন ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। আমরা চাই এ ধরনের আর কোন ঘটনা যেন বাংলাদেশে কখনও না ঘটে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা একসময় বাস, ট্রেন লঞ্চে বোমা ছুড়ে মেরেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এখন গুপ্ত হত্যায় নেমেছে। এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে। এতে বিপুল অংকের বাজেট প্রণয়ন অতীতের কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভবপর হয়নি।
এ সময় দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ একে ‘বিস্ময়কর’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আমি বলি এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য ভালবাসা ও কর্তব্যবোধ এবং আমরা সবসময়ই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করি। যে কারণে প্রয়োজনে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি। আওয়ামী লীগ ব্যতীত আর কেউ এই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা সবসময় মাথায় রেখে কাজ করে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরলস পরিশ্রমের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ অন্তত আরো ২০ বছর আগে উন্নত হয়ে যেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করার পর থেকেই দিন দিন দেশের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হলে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও মাথা উঁচু করে চলতে পারবে এবং এই সুনাম অর্জন করতে পারাটাও আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ।
বাংলাদেশকে আর কেউ এখন অবহেলার চোখে দেখে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
সউদী বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকসহ সউদী আরব সফরের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সউদী আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই তার লক্ষ্য থাকবে। এ সময় জেদ্দা চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (জেসিসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর বৈঠককেও প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সব সময়ই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা প্রতিরোধে তাঁর দেশ ইসলামী জোটে শরিক হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথাও এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে এসেছি এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমরা আরো অনেক এগিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে, জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪শ’ ৬৬ ডলার হয়েছে, দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সরকার বিভিন্ন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সউদী প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি সউদী আরবের আইন-কানুন মেনেই সেখানে বসবাসেরও আহবান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সউদী আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
পাঁচ দিনের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সফর শেষে সউদী আরব থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাÑবাসস এ খবর জানায়।
এর আগে সউদী আরবের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ বিমানবন্দর ছেড়ে আসে। মদিনার ডেপুটি গভর্নর আব্দুল মহসিন আল মুনেফ, সউদী আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এবং জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এ কে এম শহীদুল করিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। সউদী বাদশাহ সালমান দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের এই তেলসমৃদ্ধ দেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম সফর। এর আগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ওমরাহ করতে সউদী আরবে গিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা শুক্রবার রাতে জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজ তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী কিং ফয়সাল প্যালেসের নৈশভোজে যোগ দেন।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলছেন, বিমানবন্দরে ক্রাউন প্রিন্সের অভ্যর্থনা, গার্ড অব অনার, লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং নৈশভোজে যে সম্মান এবার প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে, তা ‘অভূতপূর্ব’। যেভাবে বাদশাহর তত্ত্বাবধানে দ্বি-পক্ষীয় এ সফর হয়েছে, তাও গত তিন দশকে হয়নি, বলেন সচিব। শুক্রবার জেদ্দা পৌঁছানোর পর রাতেই মক্কায় ওমরাহ পালন করেন শেখ হাসিনা। জেদ্দায় তিনি অবস্থান করেন রাজকীয় জেদ্দা কনফারেন্স প্যালেসে। রোববার সকালে সেখানে তিনি সউদী আরবের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বাদশাহ সালমানের সঙ্গে তার দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, একটা শক্তিশালী সম্পর্ক উন্মুক্ত হয়েছে, যেটা আমরা আগে ঠিক এভাবে দেখিনি। শহীদুল হকের ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ছিল ‘যুগান্তকারী’। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তারও অনেক বেশি সফলতা এসেছে বলে আমার মনে হয়। এই সফরের মধ্য দিয়ে শুধু নতুন অধ্যায়ই উন্মুক্ত হয়নি, আমাদের সম্পর্ক ইতোমধ্যে একটা নতুন উচ্চতায় চলে গেছে।
সউদী আরবের অর্থ, পররাষ্ট্র, শ্রমমন্ত্রী এবং সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রোববার জেদ্দা কনফারেন্স প্যালেসে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সউদী গোয়েন্দা প্রধান খালিদ বিন আলি হুমাইডানও সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
শেখ হাসিনা সোমবার জেদ্দা থেকে মদিনায় পৌঁছালে প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান মদিনার গভর্নর। মসজিদে নববীর কাছে হোটেল মদিনা হিলটনে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। শেখ হাসিনা সোমবার জোহর, আসর ও মাগরিবের নামাজ মসজিদে নববীতে আদায় করেন এবং এবারের রোজার প্রথম ইফতার সেখানেই করেন। ইফতারের আগে সউদী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন তিনি। রাতে মসজিদে নববীতে এশার নামাজ ও তারাবি আদায়ের পর মহানবীর (স.) রওজা জিয়ারত করেন শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সফরে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও কয়েকজন আত্মীয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনসহ অন্য কর্মকর্তারাও ছিলেন সফরসঙ্গীদের মধ্যে। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়াররম্যান সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদসহ ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
সউদী সফর নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদী সফর নিয়ে আজ (বুধবার) গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে। সউদী আরবসহ সাম্প্রতিক বিদেশ সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরবেন সাংবাদিকদের সামনে। সাত দিনের সউদী আরব সফর শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সউদী আরবের আগে গত মাসে বুলগেরিয়া যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পথে দু’দিন লন্ডনেও ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে জাপানে জি-৭ আউটরিচ বৈঠকে যোগ দিতে টোকিও গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সূত্র : ওয়েবসাইট

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন